সকাল-বিকাল গমের রুটির ভালোমন্দ

প্রকাশ | ৩১ অক্টোবর ২০২০, ১৪:২০

আয়শা সিদ্দিকা

আমরা ওজন কমানোর পথ্য বা ডায়েটের কথা চিন্তা করি উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য। ডায়েট শুরু করলে প্রথমেই বাদ দিয়ে দেই ভাত। ভাতের বদলে বেছে নেই গমের রুটি। কিন্তু ভাতের চেয়ে কতটুকু ভালো এই গমের রুটি? কিংবা ভাতই কার কতটুকু পরিমাণে খেতে হবে?

আজকাল গমকে পরিশুদ্ধ করে বাজারজাত করা হয়। এতে হারিয়ে যায় গমের পুষ্টিগুণ। গমে থাকে এমাইলোপেকটিন, গ্লাইডিন ও গ্লুটেন। গ্লুটেন নির্দিষ্ট কিছু মানুষ যারা সিলিয়াক ডিজিজে ভুগছেন তাদের মধ্যে সৃষ্টি করতে পারে মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, হতে পারে অবসাদ, ডায়রিয়া। এছাড়াও কিছু মানুষের স্কিন র‌্যাশ দেখা যায় গমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে।

বাচ্চাদের বেশির ভাগ খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় গমের তৈরি আটা বা ময়দা, বাচ্চাদের টিফিন, বিকেলের নাস্তা, কিংবা বাইরের পিজ্জা পাস্তা সব কিছু তৈরিতে ব্যবহার করা হয় গমের আটা বা ময়দা। বাচ্চাদের এবং বয়স্কদের হাইপার অ্যাকটিভ করে দেয় এই গমের তৈরি আটা বা ময়দাতে থাকা গ্লুটেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, Attention deficit hyperactivity disorder (ADHD) সিনড্রোমে ভোগা শিশুদের গ্লুটেন ফ্রি পথ্য (ডায়েট) দিলে তাদের ব্যবহার ও কার্যক্ষমতায় উন্নতি লক্ষ্য করা যায়।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক উইলিয়াম ডেভিস দীর্ঘ ১৫ বছর গবেষণার পর জানিয়েছেন, গমের রুটির চেয়ে ভাত, মাছ, মাংস, ডিম খাওয়া ভালো। তার দাবি নিয়মিত গমের রুটি খেলে বেড়ে যায় হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থুলতা। তিনি আরও দাবি করেছেন, গমে থাকা এমাইলোপেকটিন A রক্তে থাকা LDL-এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এছাড়াও তিনি আরও দাবি করেন গমে থাকা প্রোটিন গ্লাইডিন থাকায় ক্ষুধা লাগে বেশি এবং যারা প্রতিদিন গমের রুটি খায় তারা অন্যদের তুলনায় ৪০০ কিলো ক্যালরি বেশি খাবার গ্রহণ করে থাকে। তিনি দাবি করেন গমের রুটি বাদ দেওয়ার ফলে তার রোগীদের মধ্যে কয়েক মাসে ওজন কমে যাওয়া, ব্লাড সুগার কমে যাওয়া, অ্যাজমা থেকে মুক্তি পাওয়ার মতো পরিবর্তন লক্ষ্য করেন তিনি।

তবে ভাত উচ্চ গ্লাইসিমিক ইন্ডেক্স (G.I) যুক্ত হওয়ায় তা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর নয়। এছাড়াও ঢেঁকিছাঁটা চালের পুষ্টিগুণ থাকে না। বিভিন্নভাবে পরিশুদ্ধ করে বাজারজাত করা হয়, ফলে থেকে যায় বহু পুষ্টিগুণের ঘাটতি।

তাই আমাদের উচিত গমের রুটি এড়িয়ে শারীরিক অবস্থা ও ওজনভেদে পুষ্টিবিদের পরামর্শ মতো ভাত গ্রহণ করা এবং মাল্টিগ্রেইন আটার রুটিকে বিকল্প হিসেবে বেছে নেওয়া। কারণ মাল্টিগ্রেইন আটা কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত (G.I) হয়ে থাকে। তাই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।


মাল্টিগ্রেইন আটা গ্লটেন মুক্ত হয়ে থাকে। ফলে গ্লটেন থেকে সৃষ্ট পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই এতে। মাল্টিগ্রেইন আটা বাড়িয়ে দিবে আপনার হজম শক্তিকে। এই আটাতে মিশ্রিত থাকে বিভিন্ন ধরনের শস্যের ময়দা যা উচ্চ ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফাইবার যুক্ত। এছাড়াও কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত হওয়ায় দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে, ফলে ওজন হ্রাস পায়।

লেখক: পুষ্টিবিদ, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল, ধানমন্ডি, ঢাকা

ঢাকাটাইমস/৩১অক্টোবর/এসকেএস