বাংলা চলচ্চিত্র এবং নাটকের বিরুদ্ধে সুগভীর ষড়যন্ত্র!

তাজুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ৩১ অক্টোবর ২০২০, ১৮:০৩

ফাজলামো শুরু হয়ে গেছে চারপাশে। ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বাংলা চলচ্চিত্র এবং নাটকের বিরুদ্ধে। ওদের মতলব কি আমরা এখনও বুঝতে পারছি না?

কদিন আগে একটা নাটককে কেন্দ্র করে অকারণেই তুলকালাম করা হলো। এবার বলা হচ্ছে, চলচ্চিত্র বা নাটকে ‘কবুল’ শব্দ উচ্চারণ করা যাবে না। এরপর বলবে চলচ্চিত্র বা নাটক বানানোই যাবে না। এসব কি হচ্ছে? আমরা যারা চলচ্চিত্র এবং নাটক সেক্টরে কাজ করছি, আমরা কি বুঝতে পারছি না, এসব গভীর ষড়যন্ত্র? এ তো দেখছি দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিরুদ্ধে ধর্মান্ধদের প্রকাশ্য জিহাদ।

আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে ও জনস্বার্থে বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান সিনেমা-নাটকে বিয়ের দৃশ্যে ‘কবুল’ শব্দ উচ্চারণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। নোটিশে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে প্রচলিত ১৯৭৩ সালের মুসলিম আইনের ধারা ২ অনুযায়ী বিয়ে, তালাক, ভরণ-পোষণ, মোহরানা প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুসলিমদের জন্য মুসলিম আইন (শরিয়ত) প্রযোজ্য হবে। সুতরাং মুসলিম নারী ও পুরুষ উপরোক্ত আনুষ্ঠানিকতা পূরণ করলেই তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে গণ্য হবে।’ তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ড (বিএফসিবি) কে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

হাস্যকর হলেও নোটিশে উল্লেখ হয়েছে, ‘অভিনয়ের সময় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন সিনেমা, নাটক এবং ভিডিওর বিভিন্ন দৃশ্যে বিয়ের দৃশ্যায়নে মুসলিম অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা পূরণসহ ‘কবুল’ শব্দ উচ্চারণ করে থাকেন। এর মাধ্যমে তারা মুসলিম আইন (শরিয়ত) অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রী হিসেবে গণ্য হবেন। তাই মুসলিম আইন অনুসারে বিয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি মুসলিম আইন (শরিয়ত) প্রয়োগ হবে। অভিনয়ের যুক্তিতে এই বিয়েকে অস্বীকার করা যাবে না। কারণ অভিনয়ের মধ্যে কেউ মিষ্টি খেলে মিষ্টির স্বাদ অনুভব করবে, কেউ বিষ খেলে সে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হবে।’

নোটিশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে সিনেমা-নাটকের বিয়ের দৃশ্যায়নে ‘কবুল’ শব্দ উচ্চারণে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তা না হলে প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ মজার বিষয় হলো এ ধরনের দৃশ্য ধারণের ক্ষেত্রে কতটুকু ধর্মীয় রীতি-নীতি মানা হয় বা পর্দায় উপস্থাপনের আগে কি কি করা হয় তা কি তারা জানেন? তাদের আইনি যুক্তি উপস্থাপনের কায়দা দেখে আমি শংকিত এই ভেবে যে, তারা কদিন পরেই নাটক-সিনেমার গলাটিপে ধরবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

আমরা যারা চলচ্চিত্র বা নাটক সেক্টরে আছি, আমাদেরকে কি উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী অসহায় মনে করে? ছিন্নমূল ভাবে? লাখ লাখ মানুষ এই সেক্টরে কাজ করছেন। আমরা প্রতি বছর চলচ্চিত্র ও নাটক সেক্টর থেকে সরকারকে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে আসছি। আর আমাদের পেটেই লাথি মারার জঘন্য ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।

এবার আমরা প্রতিবাদী হবো! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাখ লাখ প্রতিবাদ আসবে। কোথায় আমাদের চলচ্চিত্র ও নাটক সেক্টরের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ? আপনারা কি আজও চুপ করে থাকবেন? কেন আপনারা আমাদের ন্যূনতম পেশাগত অধিকার আদায়ে সোচ্চার হচ্ছেন না? ডাক দিন, আওয়াজ তুলুন, আমরা কোনো অবস্থাতেই দেশের চলচ্চিত্র এবং নাটক সেক্টরকে ধ্বংস হতে দেব না। প্রয়োজনে রাজপথে নামবো!

লেখক: ডেপুটি সিইও এবং ভাইস চেয়ারম্যান , ক্রাউন ইন্টারটেইনমেন্ট

ঢাকাটাইমস/৩১অক্টোবর/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :