প্রতিবন্ধী বাবুলের জীবন সংগ্রামের গল্প
জীবন সংগ্রামী অদম্য প্রতিবন্ধী বাবুল চন্দ্র বর্মণ (৫১)। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে পৌরসভার কাচারীপাড়ার গোবিন্দ জীউ মন্দিরের দেড় শতক জায়গায় আশ্রয় হয়েছে তার। বাবা মৃত দীনু চন্দ্র চর্মণ পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। আট ভাই-বোনের মধ্যে বাবুল তৃতীয়। অভাবের কারণে খুব বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারেননি। কিশোর বয়সে হাল ধরেন সংসারের।
বাবুল ১৪ বছর বয়সে মাসিক ৩০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন নাগেশ্বরীতে একটি ছাপাখানায়। তৎকালীন ছাপাখানায় লেটারবক্স মেশিনে কাজ করলেও ১৯৯০ সালে মুদ্রণে আধুনিকায়ন হলে বেকার হয়ে পড়েন তিনি। আর কোনো উপায় না পেয়ে জীবন বাঁচার তাগিদে বাড়িতে বসে শুরু করেন বই বাঁধাই ও বিভিন্ন মিষ্টির দোকানের প্যাকেট তৈরির কাজ।
সেসময় ছাপাখানার লেটাবক্সে কাজ করতে গিয়ে ডান পায়ের তলে ক্ষত সৃষ্টি হয়। কিন্তু পায়ের ক্ষত দিন দিন গভীরে চলে যায়। অনেক চিকিৎসা নেয়ার পরও কোনো কাজ না হওয়ায় ২০০৫ সালে তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসার তার। চিকিৎসার খরচ মেটাতে ধার-দেনার টাকা আর স্ত্রী-সন্তানদের মুখে দুবেলা খাবার জোটাতে হিমশিম খান বাবুল চন্দ্র বর্মণ। জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
এতো প্রতিবন্ধকতাও তাকে হার মানাতে পারেনি। এক পা নিয়ে শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে অদম্য শক্তিতে এগিয়ে চলছেন। বই বাঁধাই আর প্যাকেট তৈরির সামান্য আয় দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার কাচারীপাড়াস্থ তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরে বসেই বিভিন্ন মিষ্টির দোকানের প্যাকেট তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। তার কাজে সহযোগিতা করছেন স্ত্রী লতা রাণী। এসময় কথা হয় বাবুল চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে। তিনি বলেন, অভাবের সংসার, দুবেলা ঠিকভাবে খেতে পারি না। চলাচলের জন্য কিছুদিন আগে একটি এনজিও গাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়। সেটাতে করে বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে গিয়ে প্যাকেট তেরির কাজ নিয়ে আসি। পরে বাড়িতে বসে সেগুলো তৈরি করি। সারাদিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আয় হয়। যা দিয়ে কোনো রকমে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খেয়ে-পরে বেঁচে আছি।
বাবুল বলেন, মেয়েটা এইচএসসিতে আর ছেলেটা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে-মেয়ের পড়ার খরচ ও ভরণপোষণ জোটাতে পারছি না। আগামী দিনগুলো কিভাবে কাটবে এই চিন্তায় দিন কাটে তার।
পাবনা বনফুল সুইটসের ম্যানেজার মোসলেম উদ্দিন বলেন, বাবুল শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তিনি অন্য কোনো কাজ করতে পারেন না। এজন্য আমরা তাকে সব সময় প্যাকেট তৈরির কাজ দেই।
এ বিষয়ে উলিপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কাশেম বলেন, বাবুল চন্দ্র বর্মণ এত কষ্টের মাঝেও ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা করাচ্ছেন। সম্প্রতি তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১নভেম্বর/কেএম)