আশুগঞ্জ নদীবন্দর-আখাউড়া স্থলবন্দর চার লেন সড়ক

বেশি ক্ষতিপূরণ পেতে স্থাপনা তৈরির হিড়িক, সতর্ক প্রশাসন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৫৮

দক্ষিণ এশিয়ার উপ-আঞ্চলিক (সাব-রিজিওনাল কানেকটিভিটি) সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উত্থান ঘটতে যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্য দিয়ে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য করিডোরের অংশ হিসেবে আশুগঞ্জ নদীবন্দরের সঙ্গে আখাউড়া স্থলবন্দরকে সরাসরি সংযুক্ত করার কাজ চলছে। এই প্রকল্পে অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ বেশি পাওয়ার জন্য নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে।

আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চার লেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকার ও এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিতীয় ভারতীয় নমনীয় ঋণচুক্তির আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।

৩ হাজার ৫৬৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকার (জিওবি ১ হাজার ৩১২ কোটি ৮ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ২ হাজার ২৫৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা) প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ২০ জুলাই একনেকে অনুমোদিত হয়। প্রাথমিকভাবে ২০২১ সালের ৩০ জুন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু পুরোপুরি ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়া, মহামারি করোনা, কনসালটেন্টরা সময়মতো কাজ করতে না পারায় কিছুট ধীরগতিতে চলছে ফোরলেন প্রকল্পের কাজ।

সূত্রমতে, ভূমি অধিগ্রহণজনিত সমস্যা কেটে গেলে ও বর্ষা মৌসুমের পরপরই প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন স্থানে নতুন কার্যক্রম শুরু হবে। ভারতীয় কনসালটেন্ট ও ঠিকাদাররা সঠিক সময়ে আসতে না পারায় প্রকল্পের কাজ গতিহীন ছিল এত দিন।

প্রকল্পের তথ্যমতে, এ সড়কের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন সড়ক নেটওয়ার্ক যুক্ত হবে। বাংলাদেশের জন্য এই উপ-আঞ্চলিক করিডোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শিগগির দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া দিয়ে নতুন হাইওয়ে নেটওয়ার্ক যুক্ত হবে।

জানা গেছে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে ৫০.৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এর অধীনে ১৬টি সেতু, ২টি রেলওয়ে ওভারপাস, ৩টি আন্ডারপাস, ৩৬টি কালভার্ট এবং ১০টি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের এই প্রকল্পে তিনটি পূর্তকাজের প্যাকেজ রয়েছে। প্রথম প্যাকেজে আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পর্যন্ত (ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কের অংশ) ১২.২১১ কিলোমিটার; দ্বিতীয় প্যাকেজে সরাইল থেকে ধরখার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পর্যন্ত (কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জাতীয় মহাসড়কের অংশ) ২৭.০৫৪ কিলোমিটার এবং তৃতীয় প্যাকেজে ধরখার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ১১.৩১৫ কিলোমিটার মহাসড়ককে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের পৃথক দুটি লেনসহ চার লেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করা হবে। প্রকল্পে ১০৭.৫০ হেক্টর ভূমি ইতিমধ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

তিনটি পূর্তকাজের প্যাকেজের মধ্যে দুটি প্যাকেজের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বাকি একটি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, যার মূল্যায়ন কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে পূর্তকাজের দুটি প্যাকেজের অধীনে সার্ভে কাজ, বিভিন্ন সেতুর স্থানে মাটি পরীক্ষা ও টেস্ট পাইলিং কাজ শেষ হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পাইলের লোড টেস্ট কাজ চলছে। শিগগির মূল পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে।

আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে সরাইল বিশ^রোড হয়ে আখাউড়ার ধরখার দিয়ে সড়কটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তে গিয়ে পৌঁছবে। এরই মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ও মাটি পরীক্ষণসহ প্রাথমিক সব কাজ শুরু হয়েছে।

ভ’মি অধিগ্রহণ সামনে রেখে ধরখার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দরগামী হাইওয়ে সড়কে নতুন নতুন ভবন ও স্থাপনা তৈরির হিড়িক পড়েছে। ভ’মি অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে সরকারের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

তবে কর্মকর্তারা বলছেন, এখন নতুন স্থাপনা করে কেউ লাভবান হবে না। প্রকল্পের শুরুতে ডাটাবেজ, ভিডিও ফুটেজ ও মানচিত্র প্রস্তুত করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী জায়গা নির্ধারিত হবে। বেশি পাওয়ার উদ্দেশ্যে যারা নতুন স্থাপনা তৈরি করছে, তাদের বাড়তি কিছু পাওয়ার সুযোগ নেই।

কর্মকার্তারা জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সড়কের এই অংশের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তব কাজ শুরু হবে।

বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির আওতায় ফোরলেনের কাজটি ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পে ২৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, সড়কটি সোজাসুজি গেলে সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ার পাশাপাশি সরকারের অর্থ ব্যয় কমবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতিরিক্ত মুনাফার আশায় ধরখার-আখাউড়া হাইওয়ের জন্য নির্ধারিত সম্ভাব্য স্থানে যারা বাড়িঘর নির্মাণ করছিলেন তারা ইতিমধ্যে একটা ধাক্কা খেয়েছেন। সম্ভাব্য সড়কের পাশে নতুন স্থাপনা করায় সম্প্রতি বেশ কয়েকজনকে আটক করে আখাউড়া উপজেলা প্রশাসন। পরে তারা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়। উদ্দেশ্যমূলকভাবে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি করা হয়।

প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার শাহরুল আমিন জানান, বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

জেলা প্রশাসক হায়াৎ উদ দৌলা খান বলেন, ভূমি অধিগ্রহনের জন্য প্রস্তাবকৃত স্থানের ভিডিও আগেই করা আছে। নুতন করে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষতিপূরণ কেউ পাবেন না।

(ঢাকাটাইমস/১নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :