গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতেই গোলাম সরোয়ারের ওপর নির্যাতন: টিআইবি

প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০২০, ১৯:০৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

অপহরণের পর চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সারোয়ারকে অবর্ণনীয় নির্যাতনের ঘটনাকে স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে আরও একটি হুমকি বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর তাকে খুঁজে পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করলেও, নির্যাতনে অর্ধমৃত ও অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় তাকে ফিরে পাওয়াকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মানতে নারাজ সংস্থাটি।

অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গোলাম সারোয়ারের নিখোঁজ হওয়া এবং নির্যাতনের পর আধমরা অবস্থায় তাকে খুঁজে পাওয়া মোটেও কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং মুক্ত সাংবাদিকতা তথা স্বাধীন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধে চলমান হুমকি, ভয়ভীতি ও নির্যাতনের নিষ্ঠুর ধারাবাহিকতামাত্র।’

‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী উদ্ধারকালে সাংবাদিক গোলাম সারোয়ারের আর্তনাদ ‘ভাই, আমাকে মাইরেন না, আমি আর নিউজ করবো না’- শুধুই নির্যাতনে অপ্রকৃতস্থ অসহায় ব্যক্তির স্বগোক্তি নয়, বরং সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের ওপর নির্যাতন এবং সাহসী সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধের ভয়াবহ মধ্যযুগীয় বর্বরতার প্রমাণ।’ যোগ করেন টিআইবি প্রধান।

গণমাধ্যমের সার্বিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি গোলাম সারোয়ারের এই আর্তনাদের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নিয়মিত বিরতিতে সাংবাদিক নির্যাতন এবং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে হামলা-মামলার ঘটনা ঘটলেও, কঠোর আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে যথোপযুক্ত শাস্তির দৃষ্টান্ত কার্যত অনুপস্থিত, যা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছি। বরং একথা বলাও অত্যুক্তি হবে না যে, মুক্ত গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতা বিষয়ে সরকারের বারংবার উচ্চারিত কথামালা শুধুই রাজনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।’

স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদের জেরে সারোয়ারকে অপহরণ ও নির্যাতন করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

নিখোঁজ সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান না করে উল্টো নিজ দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের দৃশ্যত বানোয়াট মামলায় তাকে গ্রেপ্তার এবং অমানবিকভাবে হয়রানির উদাহরণ টেনে  ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘একজন মানুষ নিখোঁজ হলে যেখানে রাষ্ট্র তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সে বিষয়ে তড়িৎ অনুসন্ধানের মাধ্যমে ঘটনার মূল উদঘাটন করার কথা। সেখানে একধরনের ঐচ্ছিক ব্যর্থতাই নিয়মিত উদহারণ হয়ে উঠেছে। এসব ঘটনায় মনে হয়, দেশে মৌখিকভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্ত গণমাধ্যমের প্রচার থাকলেও বাস্তবে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় পদ্ধতিতেই গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।’

অবিলম্বে মুক্ত সাংবাদিকতার পথ উন্মুক্ত করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব মহলের কাছে জোর আহ্বান জানায় টিআইবি।

পাশাপাশি গোলাম সারোয়ারসহ ইতিপূর্বে সাংবাদিকদের ওপর সংঘটিত প্রতিটি নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দেয়ার দাবি জানায় সংস্থাটি।

(ঢাকাটাইমস/০২নভেম্বর/এনআই/জেবি)