নারী, তাই মজুরি কম!

প্রকাশ | ০৩ নভেম্বর ২০২০, ১৭:০৮

জাকির হোসেন, সৈয়দপুর (নীলফামারী)

একই কাজ করেও মজুরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার নারীরা। শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে তারা পুরুষ শ্রমিকদের থেকে প্রায় এক তৃতীয়াংশ টাকা কম মজুরি পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে পুরুষরা কাজের ফাঁকে দুপুরের খাবার পেলেও নারীদের দেয়া হচ্ছে শুধু নাস্তা। অথচ নারী শ্রমিকরা অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষ শ্রমিকদের থেকে বেশি সময় ও শ্রম দিয়ে থাকেন।

এই ধরনের বৈষম্যের মধ্যে জীবন কাটছে নীলফামারীর সৈয়দপুরের নারী শ্রমিকদের। ফলে তারা সমানতালে কর্ম করলেও পিছিয়ে যাচ্ছে আর্থিক স্বচ্ছলতার দিক থেকে। এ থেকে উত্তরণের জন্য তারা সরকারের শ্রমিক অধিকার বিষয়ক অধিদপ্তরসহ নারী অধিকারের জন্য কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

মঙ্গলবার সকালে সৈয়দপুর পৌর এলাকার কুন্দল পশ্চিমপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে সেখানে কৃষি ক্ষেতে শীতকালীন সব্জির পরিচর্চার কাজ করছিল কয়েকজন নারী শ্রমিক। এসময় দিপালী রানী নামে এক নারীর সঙ্গে কথা হয়।

দিপালী জানান, করোনার কারণে কাজ-কাম নেই বললেই চলে। তারপরও এখন যে ধরনের কাজ পাচ্ছি তাই করছি। কিন্তু সেখানেও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। বলা হয়, নারী-পুরুষ সমান অধিকার। কিন্তু আমরা আমাদের কর্মক্ষেত্রে এর কোন প্রতিফলন দেখিনা। একই কাজ করে একজন পুরুষ যে পরিমাণ মজুরি পায়, আমরা নারীরা তার থেকে এক তৃতীয়াংশ কম পাই। যেমন সবজি ক্ষেতে কাজ করে দিনে আমরা নারীরা পাই ৩০০ টাকা। অথচ এই কাজই আমাদের সঙ্গে যে পুরুষরা কাজ করেন, তাদের দেয়া হয় ৪৫০ টাকা করে। আবার দুপুরে পুরুষদের পেটপুড়ে খাওয়ার জন্য ভাত দেয়া হয়। আর আমাদের দেয় শুধুমাত্র বিস্কুট, চিড়া-মুড়ি জাতীয় নাস্তা। এ কারণে আমরা বাড়ি থেকেই ভাত নিয়ে আসি।

একইভাবে দুঃখ প্রকাশ করে প্রমিলা নামে আরেক নারী শ্রমিক বলেন, আমরা পাঁচজন একসঙ্গে কাজ করি। ধান রোপণ, ধান কাটা, মাড়াই, ফসলের ক্ষেত নিড়ানীসহ কৃষিজাত নানা ধরনের কাজ করে থাকি। এসব কাজে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শ্রম দিই। বিনিময়ে মাত্র ৩০০ টাকা পাই। তাই দিয়ে কোনো রকমে সংসার খরচ চালানোর পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়া ও অন্যান্য প্রয়োজন মিটাই।

প্রমিলা বলেন, অনেক সময় কাজ না পেয়ে আমাদের বসে থাকতে হয়। এসময় অনেক কষ্টে কাটে আমাদের দিন। না খেয়েও থাকতে হয়। অথচ যদি স্থায়ী কোনো কর্মের সংস্থান হতো তাহলে সংসারের খরচ নির্বাহের সঙ্গে কিছুটা সঞ্চয় করার মাধ্যমে আমাদের জীবন মানের উন্নয়নসহ সাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পেতাম।

বিষয়টি সরকারসহ এনজিওগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তারা অনুরোধ জানান।

(ঢাকাটাইমস/৩নভেম্বর/কেএম)