মধ্যরাতে অসহায় পরিবারে পাশে ইউএনও

নিজস্ব প্রতিবেদক, দিনাজপুর
 | প্রকাশিত : ০৩ নভেম্বর ২০২০, ২২:২৪

সন্তানকে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন এক মা। এই সন্তানের বাবাও কর্মহীন। বিষয়টি জানার পর মধ্যরাতে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ছুটে গেলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এই দম্পতির জন্য কাজের ব্যবস্থাও করে দিলেন। ইউএনওর এই ভূমিকা এলাকার মানুষের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। দিনাজপুরে হাকিমপুর উপজেলার ঘটনা এটি।

ঘটনাস্থল হিলির পালিবটতলী গুচ্ছগ্রাম। মাত্র সাড়ে ৩০০ টাকায় মা নিজের মাথার সব চুল বিক্রি করে দিলেন। আর সেই টাকা দিয়ে সন্তানদের খাবার কিনে দিয়েছেন তিনি। মূলত এই খবর শুনে আর বসে থাকতে পারলেন না ইউএনও আব্দুর রাফিউল আলম।

এলাকাবাসী জানায়, ২৫ বছর বয়সী সোনালী বেগম নবমুসলিম। তার বিয়ে হয়েছে আট বছর আগে। তার এক ছেলে এক মেয়ে। স্বামী সোহাগ মিয়া এখন বেকার। আগে হোটেলে কাজ করতেন। করোনা পরিস্থিতির ফলে হোটেলে চাকরি হারিয়ে সোহাগ সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়েন। অনেক চেষ্টা করেও কোনো কাজ মেলাতে পারেননি তিনি। অভাব অনটনের সংসারে তাই কিছুদিন ধরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।

গত দুদিন সোনালী ভাতের হাড়ি চড়াতে পারেনি চুলায়। নিজের ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে পারলেও সাত ও চার বছর বয়সী দুই সন্তানের ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে এলাকায় চুল কিনতে আসা ব্যবসায়ীদের কাছে নিজের মাথা ন্যাড়া করে সব চুল মাত্র ৩০০ টাকায় বিক্রি করে দেন। চুল ব্যবসায়ী যখন বুঝতে পারলেন, অভাবের কারণে তিনি এই চুল বিক্রি করেছেন তখন তিনি আরো ৫০ টাকা বেশি দেন এই মাকে।

এ সংবাদ পেয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের পালিবটতলী গ্রামে খাদ্যসামগ্রীর বোঝা নিয়ে মাঝরাতে হতদরিদ্র পরিবারটির কাছে ছুটে যান ইউএনও রাফিউল আলম।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় নবমুসলিম মা সোনালীর। তিনি জানান, করোনার কারণে বেকার হয়ে পড়া তার স্বামী অনেক কাজ খুঁজেছেন। কিন্তু কোনো কাজ পাননি তিনি। গত কয়েক দিন ধরে চুলায় ভাতের হাড়ি চড়েনি তাদের। তাই সন্তানদের কষ্ট সহ্য করতে পারেননি তিনি। কোনো উপায় না পেয়ে চুলগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন। বিক্রির টাকা দিয়ে শান্তি মতো খেয়েছেন।

সোনালী জানান, সেদিন রাতে ইউএনও স্যার আমাদের বাড়িতে এসে আট দিনের খাবার দিয়ে গেছেন। আজকে আমাকে তিনি একটি সেলাই মেশিন এবং আমার সংসার আর সন্তানদের লালন-পালনের জন্য আমার স্বামীকে একটা ফুচকার দোকান করে দিয়েছেন। এমন দুর্দিনে স্যার যদি আমাদের পাশে না দাঁড়াতেন তাহলে বাচ্চাদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হতো।

ফুচকার দোকান পেয়ে সোহাগ আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলেন, আমি কোনো দিন ভাবতে পারিনি যে, স্যার এভাবে আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। কয়েক মাস থেকে আমি বেকারত্ব জীবন-যাপন করছিলাম। আজ থেকে আমি এই ফুচকার ব্যবসা শুরু করলাম। আমি আর বেকার থাকবো না। হাটে-ঘাটে আর বাজারে ঘুরে ফুচকা বিক্রি করবো। আমার সংসারে আর কোনো অভাব হবে না।

তিনি বলেন, ফুচকার গাড়িসহ সব সরঞ্জাম এবং ফুচকা বানানোর জিনিসপাতি কিনে দিয়েছেন স্যার। সঙ্গে কিছু টাকাও হাতে দিয়েছেন। আমার স্ত্রীকে একটা সেলাই মেশিনও দিয়েছেন। সে সেলাইয়ের কাজ জানে। আমরা দুজন মিলে কাজ করবো এবং সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করব।

এ বিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাফিউল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগে রাতে আমি জানতে পারি উপজেলার পালিবটতলী গুচ্ছগ্রামে একটি অসহায় পরিবার সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন এবং সন্তানদের মুখে আহার দিতে মা তার মাথার চুল বিক্রি করেছেন। এমন সংবাদ পাওয়ার পর আমি নিজে ওই পরিবারের জন্য কয়েকদিনের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। যথাসাধ্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে দিয়েছি তাদের।

(ঢাকাটাইমস/৩নভেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :