পদ্মা ব্যাংকের লক্ষ্য ব্রাঞ্চলেস ভার্চুয়াল ব্যাংকিং

প্রকাশ | ০৪ নভেম্বর ২০২০, ০৯:১০ | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২০, ০৯:১৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

‘ডিজিটালভাবে সেরাদের তালিকায় যাওয়ার প্রত্যয়’ এই স্লোগান নিয়ে দুইবছর আগে যাত্রা শুরু করে পদ্মা ব্যাংক। ফারমার্স থেকে নাম পরিবর্তন করার দুই বছর অতিক্রম করা পদ্মা ব্যাংক সম্প্রতি ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি পেয়েছে। তবে করোনাভাইরাস মাহামারির কারণে সে কার্যক্রমে কিছুটা মন্থরগতি। ব্যাংকটির বর্তমান পরিস্থিতি, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এহসান খসরু।


ঢাকা টাইমস: করোনা মহামারিতে ব্যাংক খাতে কি ধরণের প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন?

মো. এহসান খসরু : পদ্মা ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে আলাদা কিছু নয়। বর্তমান করোনা মহামারি দেশের ব্যাংকিং খাতের ওপর বড় একটি প্রভাব ফেলেছে। দেশের সবগুলো সেক্টরের সঙ্গেই আপামর জনগণ বা গ্রাহক জড়িত। করোনা মহামারির শুরুটা আমরা দেখেছি, কিন্তু শেষটা এখন পর্যন্ত দেখিনি। এর শেষ কবে হবে তা আমরা কেউ বলতে পারছি না।

করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। মূলত সরকার প্রাধান্য দিয়েছে অর্থনীতির খাতগুলোকে পুনরুদ্ধার করার জন্য। কিন্তু প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার সময়টা ঠিক ছিল কিনা আমরা জানি না। কারণ করোনা প্রভাব এখনো শেষ হয়নি। কোনো খাতের লোকজনই এ সময়ে নতুন করে বিনিয়োগ করবে না বা করতে পারছে না। যার ফলে ব্যাংকের টাকা ফেরত আসবে কিনা তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজ হচ্ছে এক ধরনের ঋণ।

সুতরাং সাবসিটি ঋণ ব্যাংককে আবার ফেরত দিয়ে দিতে হবে। কথা হচ্ছে, ঋণ দিয়ে তার টাকাটা ফেরত আসবে কিনা এ নিয়ে ব্যাংকারদের সন্দেহ আছে। সুতরাং এ সময়ে প্রণোদনা ঘোষণা সঠিক সময় নয়। আর এজন্য ব্যাংকাররা প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে কিছুটা গড়িমসি করছে। কারণ বর্তমানে ব্যাংকিং গ্রোথ নেই বললেই চলে।

সরকার তার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে ক্যাশ সারপ্লাস ব্যাংকিং খাতে অনেক। তার ধারাবাহিকতায় অনেক ক্যাশ ফ্লো আছে। সে টাকাগুলোকে খাটানোর বিপরীত কোনো খাত নেই। সেন্ট্রাল ব্যাংকের বন্ডে কিংবা ট্রেজারি বিলের সেখানেও সম্ভব হচ্ছে। অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও যে টাকাগুলো নেবে তারও কোনো অবস্থা নেই। অর্থাৎ নিচ্ছে না। কল মার্কেটেও ইন্টারেস্ট রেট এক শতাংশের নিচে।

ঢাকা টাইমস : এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কী বলে মনে করছেন?

মো. এহসান খসরু: সরকার যত বেশি টাকা নেবে তত বেশি নতুন নতুন বন্ড তৈরি হবে। সেখান থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদেরও কিছুটা দেবে। আমাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যদি আমরা টাকাগুলো খাটাতে পারি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইচ্ছে করলে ব্যাংকিং সেক্টরে টাকা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে কাজে লাগাতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে দিয়ে নতুন নতুন ট্রেজারি বিল, বন্ড তৈরি করে এ কাজটা করতে পারে। বর্তমানে প্রায় লাখ কোটির ওপরে সারপ্লাস ব্যাংকিং চ্যানেলে বসে আছে।

ঢাকা টাইমস: সেক্ষেত্রে সংকট থেকে তুলে এনে সেরাদের কাতারে পৌঁছানোর যে লক্ষ্য তা বাস্তবায়ন কীভাবে সম্ভব?

মো. এহসান খসরু: পদ্মা ব্যাংক একটি সংস্করণের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সাল থেকে পরিচালনা করে আসছি। এর আগে এখানে কোনো ব্যাংকিং ছিল না বললেই চলে। এখানে যে ঋণগুলো দেয়া হয়েছে সেগুলো চ্যারিটি হিসেবে হয়েছে। ঋণ দিলে ফিরিয়ে আনা যায়, কিন্তু দান করলে বা চ্যারিটি করলে সেটাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। শূন্য থেকে ২ বছরের মধ্যে একটা পর্যায়ে আনতে গেলে যে ধরনের অর্থনৈতিক পরিবেশ দরকার সেটা আমাদের নেই।

আমরা শুরু করেছিলাম, ২০১৮ সালে ঠিক ছিল, গত বছরেও আমাদের ভালো ছিল, কিন্তু চলতি বছরে এসে করোনা মহামারি আমাদের সবকিছু উলট-পালট করে দিয়েছে। আমরা ঋণ দেয়ার অনুমতি নিয়ে এসেছি অনেক আগেই, এসএমই ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও কথা বলেছি। সরকারের বিভিন্ন ডেভেলপমেন্ট কার্যক্রম, কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে গ্যারান্টি, ননফান্ডেড বিজনেস করা যায়। আমরা সেদিকে নজর দিয়েছি।

আমাদের বর্তমানে ব্যাংককে ঘিরে দুটি স্বপ্ন রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম থেকে আমাদের যে স্বপ্ন ছিল তা হচ্ছে ব্যাংকটিকে ডিজিটালাইজড করা। অর্থাৎ ডিজিটালাইজড কম্বল দিয়ে ব্যাংকটিকে ঢেকে দেয়। ব্যাংক হয়ে যাবে ব্রাঞ্চলেস, ট্রান্সলেস। এ বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট পরিকল্পনা চলছে। কার্যক্রম ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে।

এটা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ যে, কতটা আমরা ব্রাঞ্চলেস করে ফেলতে পারি। ব্রাঞ্চ থাকবে তবে তা হবে ভার্চুয়াল। আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটি পণ্য বাজারে এনেছি। ঘরে বসে ব্যাংকিং করা- এটা আমরাই প্রথম চালু করেছি। যদিও অন্য একটি ব্যাংক আগে ঘোষণা করেছে। অন্য যেগুলো যেমন- বিকাশে টপ আপ করা, বিল পেমেন্টসহ অন্যান্য কর্মকান্ড আমরা করছি। ব্যাংকের যে পার্টনার আছে সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা। আমরা সবাই মিলে একটি ভার্চুয়াল ব্যাংক করব। এটা আমাদের আরেকটা পরিকল্পনা। একটা কমন প্লাটফর্মে সমস্ত ভাচুয়াল সিস্টেমে হবে।

ইতোমধ্যে বিষয়টি আমাদের বোর্ডে পাস করানো হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দু-তিনবার মিটিং করেছি। আমরা অচিরেই সাবসিডিয়ারির জন্য এপ্লাই করব। আমাদের টেকনোলজি পার্টনারের সঙ্গে কথা বলছি। ২৪ শতাংশ থাকবে আমাদের টেকনোলজি পার্টনারের, বাকি ৭৬ শতাংশ থাকবে। আমাদের নিজেদের। আমরা কোর ব্যাংকিংয়ে চলে যাব আশা করছি।

ঢাকা টাইমস: এক বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে আসার যে কমিটমেন্ট দেয়া হয়েছিল, এই বৈরী পরিস্থিতিতে তা কীভাবে সম্ভব?

মো. এহসান খসরু: আমাদের কমিটমেন্ট ছিল যে, আমরা এক বছরের মধ্যে শেয়ার মার্কেটে আসব। কিন্তু আইপিওতে যেতে গেলে ডিভিডেন্ড দিতে হবে, লাভ দিতে হবে। কিন্তু আগের ব্যাংক ছিল অর্থাৎ ফারমার্স ব্যাংক যে পুরানো জঞ্জাল রেখে গেছে, সেগুলো সরিয়ে লাভ করে ডিভিডেন্ড দেয়া আমাদের পক্ষে হয়তো সম্ভব, তবে তা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আবেদন করেছি। খারাপ ঋণ ও ভালো ঋণ আলাদা করেছি। খারাপ ঋণগুলো এসপিভির মাধ্যমে থার্ড পাটিকে দিয়ে দেব। ১০ বছর আমাদের ব্যাংকে কোনো ওনারশিপ থাকবে। ১০ বছরে তারা যা আদায় করতে পারে সেখান থেকে আমাদের শতাংশ হারে দেবে। হয়তো আমাদের শুধু আসল টাকাটা দিতে পারে। এ কাজটা করলে আমাদের ব্যালেন্স লিস্টটা সংকুচিত হয়ে আসবে।

কেবলমাত্র নতুন ঋণ ও ডিপোজিট নিয়েই আমরা কাজ করব। ইতোমধ্যে ব্যালেন্স শিট থেকে এসব খারাপ ঋণ আলাদা করে ফেলেছি। আমরা একজন কনসালটেন্ট নিয়েছি। এসব সমস্যার সমাধান করে আগামী জুনের মধ্যে আমরা আইপিওতে যাব আশা রাখছি।

ঢাকা টাইমস: আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মো. এহসান খসরু: আমরা ব্রাঞ্চলেস ব্যাংক করব। তার মানে এই নয় যে, আমাদের কোনো ব্রাঞ্চ থাকবে না। আমরা মূলত ফিজিক্যাল ব্রাঞ্চ চাচ্ছি না। প্রথম পর্যায়ে আমরা পাঁচটি ব্রাঞ্চ হাতে নিয়েছি। এজেন্ট ব্যাংকিং, ব্রাঞ্চলেস ভার্চুয়াল ব্যাংকিংয়ে আমরা এগুলোকে রূপান্তরিত করব। এতে করে আমাদের অনেক খরচ কমে আসবে। কিন্তু গ্রাহকের কোনো সমস্যা হবে না।

আমরা যদি পাঁচটা ফিজিক্যাল ব্রাঞ্চ বন্ধ করে দেই তাহলে আবার একটি লাভজনক জায়গায় ফিজিক্যাল ব্রাঞ্চ চালু করব। অর্থাৎ আমি যদি ৩০টা ব্যাংক ব্রাঞ্চ বন্ধ করে দেই তাহলে ৬টা সর্বোচ্চ লাভজনক ব্রাঞ্চ চালু করব। তবে তা স্বল্প পরিসরে।