নদী শাসনের নামে অপরিকল্পিত খনন কাজ

ফরমান শেখ, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল)
 | প্রকাশিত : ০৫ নভেম্বর ২০২০, ১৫:২৩

যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনরোধে নদী খনন ও শাসন কাজ শুরু করেছে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এছাড়া নদী তীরবর্তী এলাকায় বাঁধের কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী খনন ও শাসনের নামে চলছে অপরিকল্পিত খনন কাজের বিশাল কর্মযজ্ঞ। এতে ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। অথচ প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো ভূমিকা রাখছে না বলে তাদের অভিযোগ।

তবে, অপরিকল্পিত এ কাজের বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, যমুনা নদীর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশে অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে উপজেলার অর্জুনা, কুঠিবয়ড়া, ভরুয়া, জগৎপুরা, তালতলা, সুবর্ণচর, রাজাপুর, রামপুর, গোবিনাথপুর, জুঙ্গীপুর, চাঁনগঞ্জ রুলীপাড়া, বেলটিয়াপাড়া ও ডিগ্রিচরসহ অর্ধশতাধিক গ্রামের চরাঞ্চলের হাজার হাজার একর ফসলি জমি খনন করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করার অভিযোগ উঠেছে।

শুধু তাই নয়, অপরিকল্পিতভাবে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হলে উপজেলার গাবসারা, গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নের শতাধিক এলাকা ব্যাপক ভাঙন ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এসব এলাকার চরাঞ্চলে বাদাম, গম, ভূট্টা, মসুর ডাল, ধান, পাট, তিল, কাউন, কালাই ও সবজিসহ বিভিন্ন ধরণের রবি ফসল ফলানো থেকে বঞ্চিত হবেন চাষিরা। এছাড়াও টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত এ খনন কাজে চরাঞ্চলে ফসলি জমি রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের তদারকিতে তেমন ভূমিকা নেই বলে দাবি করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ছয়টি কোম্পানি নদী খনন ও শাসনের কাজ করছে। কোম্পানিগুলো হলো- মীর আক্তার গ্রুপ, এডিএল গ্রুপ, এডিএল সিসিএল গ্রুপ, এডিএল এসএস গ্রুপ, শাম্পান ডেভেলপার্টস ও বঙ্গ গ্রুপ। এর মধ্যে মীর আক্তার গ্রুপ এক ও দুই প্যাকেজ (প্রতি প্যাকেজ দুই কিলোমিটার), শাম্পান ও বঙ্গ গ্রুপ পেয়েছে এক কিলোমিটার করে। বাকি তিন গ্রুপ দুই কিলোমিটার খনন কাজ পেয়েছে। যার বেশিরভাগ এলাকা জুড়ে রয়েছে চাষাবাদের ফসলি জমি।

খনন কাজে নিয়োজিত মীর আক্তার গ্রুপের ড্রেজিং ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব হোসেন জানান, ছয়টি কোম্পানি প্লট প্লট করে কাজ পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি থাকে, কত ঘনমিটার মাটি তারা খনন করবে। মূলত তার ভিত্তিতে প্রতিটি কোম্পানি অর্থ পাবে। স্বাভাবিকভাবে নদীর শধ্য থেকে খনন করলে কম মাটি পাওয়া যাবে। যার কারণে কায়েম (ফসলি) জমি কেটে মাটির পরিমাণ বেশি দেখানো হয়ে থাকে।

জগৎপুরা এলাকার বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী খনন ও শাসন কাজ চালাচ্ছে। আমরাও চাই নদী খনন হোক, কিন্তু পৈত্রিক সম্পত্তি বা ফসলি জমির মাটি খনন করে নয়। ফসলি জমি খননের ফলে এসব চরাঞ্চলের দরিদ্র চাষিরা জীবিকানির্বাহে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এদিকে খনন করা বালুও বিক্রি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের কাছে।’

বীরমুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী তালুকদার বলেন, ‘অপরিকল্পিত নদী খনন বা শাসন নয়। নদী খনন হোক নদী দিয়ে। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড বর্তমানে যে এলাকা দিয়ে খনন ও শাসন কাজ করছে সে এলাকায় কখনো নদী ছিল না। তারা স্থানীয় কিছু বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে এলাকার মানুষদের হাজার হাজার ফসলি জমি খনন করে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।’

গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা আবদুস ছাত্তার খান বাবু বলেন, ‘নদী খনন ও শাসন পক্ষে আমরাও। কিন্তু মূল নদীর ড্রেজিং না করে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক অর্থাৎ পূর্বদিকে অপরিকল্পিতভাবে খনন ও শাসন কাজ চলছে। যা এখন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হিসেবে কাজ করছে। নদীর গতিপথ পূর্বদিকে সরিয়ে আনা হলে হুমকিতে পড়বে স্থানীয় নলীনবাজারসহ ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক, বসতভিটা ও বিভিন্ন স্থাপনা। আর পশ্চিমদিকে সরিয়ে অর্থাৎ নদীর মধ্যদিয়ে খনন করলে ফসলি জমিসহ কারো ক্ষতি হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফসলি জমির উপর দিয়ে নদী খনন করলে নদী বিশ্লেষকদের মতামত ও এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে গ্রহণযোগ্য উপায়ে ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে খনন কাজ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

অর্জুনা ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী মোল্লা বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে ফসলি জমি ড্রেজিং ও বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনকে একাধিবার অভিযোগ জানানো হয়েছে। তারা কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেন নি।’

তবে এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকোশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড যেখান থেকে কাজ শেষ করছে সেখান থেকে ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনার দিক থেকে নদী খনন ও শাসন কাজ এলাইনমেন্ট অনুযায়ী শুরু হয়েছে। নদী খননে ওই এলাকাগুলোতে শুধু তো চর, ওখানে কৃষি বা ফলসি জমি নেই। সরকারি নিয়মনীতি মেনেই ড্রেজিং কাজ করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফসলি জমি খনন করে স্থানীয় এলাকাবাসীর ফসলি জমির কোন ক্ষতি করার উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা আমাদের নেই। তবে, খনন কাজে নিয়োজিত কোম্পানিগুলো কিভাবে কাজ করছেন সেটা সরেজমিনে দেখার জন্য স্থানীয় এমপি মহোদয় এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে পরিদর্শন করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/৫নভেম্বর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :