রাজবাড়ীতে তিন বছরেও রাস্তার কাজ শেষ হয়নি, বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

এম. মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী
 | প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর ২০২০, ১৬:৩৩

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া মহাসড়কের সদর উপজেলার বাগমারা মোড় থেকে জৌকুড়া ফেরিঘাট পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রশস্তকরণ কাজ তিন বছরেও শেষ হয়নি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী শুক্রবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে। জৌকুড়া, মিজানপুর, সূর্যনগর, ধাওয়াপাড়া ও দয়ালনগর এলাকার হাজার হাজার মানুষ এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে।

রাজবাড়ীর বাগমাড়া-জৌকুড়া (ধাওয়াপাড়া) সড়ক। দীর্ঘ দিন এই সড়কে বালিবোঝাই ১০ ও ছয় চাকার ট্রাক চলায় এখন রাস্তার বেহাল দশা। এদিকে রাস্তার মাঝে দুই জায়গায় এক্সক্যাভেটর মেশিন (মাটি কাটার যন্ত্র) ও রুলার মেশিন দিয়ে আটকে রাখায় যানবাহন চলাচলেও রয়েছে প্রতিবন্ধকতা।

জরুরি রোগীসহ অন্যান্য যানবাহন চালকদের দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে তাদের গন্তব্যস্থলে। এতে করে দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। অথচ এই সড়কটি দিয়েই জৌকুড়া ফেরি ঘাট হয়ে পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া জেলার মানুষ বাসে যাতায়াত করতো। সড়কটির বেহাল দশার কারণে বর্তমানে এসব অঞ্চলের দূরপাল্লার বাসসহ স্থানীয় লোকাল বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

শুক্রবারের কর্মসূচিতে মানববন্ধন শেষে দ্রুত কাজ শেষ করার দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। এর আগেও এলাকাবাসী সড়ক ও জনপথ, জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসকের কাছে একই দাবিতে লিখিত আবেদন করে স্মারকলিপি দিয়েছে। কিন্তু তাতেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।

বিক্ষোভে বক্তারা চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই এ রাস্তার কাজ শেষ করে জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। নয়তো রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীর অফিস ঘেরাও করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী জানায়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠার করিম গ্রুপ ও সড়ক বিভাগের উদাসীনতায় দীর্ঘ তিন বছরেরও এই কাজ শেষ হয়নি। কাজ থেমে থাকায় ধুলায় রাস্তার পাশে বসবাস করা যাচ্ছে না। এতে তাদের শ্বাষকষ্টসহ নানা অসুখ হচ্ছে এবং সমস্যা হচ্ছে রাস্তার পাশের ব্যবসায়ীদের। রাস্তাটির পাশ দিয়ে রয়েছে স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা, হাট-বাজার ও বসতবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল বাশার মো. সাদ্দাম হোসেন জানান, চলতি বছরের মধ্যে এই রাস্তার কাজ শেষ না হলে বিধি মোতাবেক ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হতে পারে। তবে ইতোমধ্যেই এই রাস্তার কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারের আবেদনে দুই দফা সময় বাড়ানো হয়েছে।

এলাকাবাসী বলেন, সড়কটির উন্নয়ন কাজ ধীরগতিতে হওয়ায় বালুবাহী ট্রাক চলাচলে বর্ষা মৌসুমে খানাখন্দ ও কাদা তৈরি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আবার শুকনা মৌসুমে সৃষ্টি হয় ধুলাবালি। এমন পরিস্থিতিতে চলাচল তো দূরের কথা, সড়কটির আশেপাশের বাড়িতে বসবাস করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বর্তমানে সড়কটির উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু ভেকু ও ট্রাক্টর দিয়ে সড়কটির চলাচল বন্ধ করে রেখেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে।

সদরের মিজানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিয়ার হোসেন বলেন, বালিবোঝাই ১০ চাকার ট্রাক চললে ধুলায় অন্ধকার হয়ে যায় চারদিক। এসব এলাকায় যারা বসবাস করেন তারা তো চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। রাস্তা তো অবশ্যই লাগবে। যোগাযোগের রাস্তা তো আর বন্ধ রাখা যায় না। তবে গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের জন্য এর স্থায়ী সমাধান দরকার।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আঞ্চলিক মহাসড়কটির ৪ দশমিক ২৭ মিটার থেকে ৮ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্তকরণের কাজ ২৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা চুক্তিতে যৌথভাবে শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসপেক্টা ইঞ্জিনিয়ার্স ও ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।

সড়কটির নির্মাণ কাজের সময়সীমা ছিল ২০১৯ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় আরো দুই দফা বাড়ানো হয় কাজের মেয়াদ। সেই সঙ্গে চুক্তিমূল্যও ২৯ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ কোটিতে। এরপরও এখন সড়কটির মাত্র ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন জানান, উন্নয়নের মালামাল না থাকায় সড়কটির কাজ বন্ধ রয়েছে। শিগগির মালামাল এনে আবার কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া ১০ চাকার ট্রাক না চলাচলের জন্য সড়কটিতে ভেকু দিয়ে চলাচল আটকে রাখা হয়েছে। তবে সেখান দিয়ে ছোট গাড়ি চলাচল করতে পারে। এগুলো তুলে নিলে সব ধরনের ট্রাক চলবে। এতে উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হবে।

রাস্তা সংস্কার ও প্রশস্তকরনের দাবিতে মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ শেষে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক কাউসার আল ফেরদৌস, চন্দনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব, মিজানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজম মন্ডলসহ অন্যান্যরা বক্তব্য দেন।

বক্তারা দ্রুত সড়কটির উন্নয়ন কাজ শেষ করে চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/৬নভেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :