‘আদিবাসীদের পিছিয়ে পড়ার তথ্য তুলে ধরতে হবে’

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর ২০২০, ১৮:৫৩

সমাজে এখনও পিছিয়ে রয়েছেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। কিন্তু এসব বিষয় সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহলে খুব একটা পৌঁছায় না। এ কারণে আদিবাসীরা দিনদিন পিছিয়েই পড়ছেন। তাই তাদের পিছিয়ে পড়ার তথ্য গণমাধ্যমে আরও বেশি করে তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়েছে। শনিবার সকালে রাজশাহীতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।

রাজশাহী নগরীর শাহমখদুম কলেজ মিলনায়তনে এ সভা হয়। করোনার সময়ে উত্তরাঞ্চলের আদিবাসীদের সরকারি ও সামাজিক সহযোগিতার আহ্বানে এ সভার আয়োজন করে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা আত্ম ও সামাজিক সংস্থা (আসাউস)। সভায় আদিবাসী নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

বক্তারা বলেন, যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন তাদের কাছে আদিবাসীদের কষ্টের কথা পৌঁছে না। সে কারণে তারা পিছিয়ে পড়ছে। স্বাধীনতার এতদিন পর আদিবাসীরা কেন পিছিয়ে পড়বে? বর্তমানে করোনাকালে আদিবাসীরা খুবই করুণ দিনযাপন করছেন। কেউ তাদের খোঁজ নেয় না। ২৫ শতাংশ আদিবাসী পরিবার ত্রাণ সহায়তা পেলেও তা পরিমাণে খুবই কম। কিছু বেসরকারি সংস্থা সামান্য কিছু ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে বিশেষ কোন প্রণোদনা নেই।

একটি গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে সভায় জানানো হয়, করোনাকালে ৫৬ শতাংশ শিশু টেলিভিশনে প্রচারিত পাঠদানে অংশ নিচ্ছে না। আর ৭৫ শতাংশ আদিবাসী শিশু টেলিভিশনে প্রচারিত পাঠদানে অংশ নেয় না। এর কারণ, তাদের কারও বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই, আবার বিদ্যুৎ থাকলেও টেলিভিশন নেই। আদিবাসীদের আর্থিক অনটনের কারণেই তাদের এসব নেই। যার কারণে শিক্ষা থেকেও আদিবাসী শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আদিবাসীদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়া দরকার।

সভা থেকে আদিবাসী নেতারা আদিবাসীদের ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ হিসেবে নামকরণের প্রতিবাদ জানান।

তারা বলেন, আদিবাসীরা এ দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। যুগ যুগ ধরেই তারা ‘আদিবাসী’ হিসেবেই পরিচিত। সেটা বদলে দেয়া ঠিক নয়। সভা থেকে সমতলের ৩২টি জাতি-গোষ্ঠীর আদিবাসীদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনেরও দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে দাবি করা হয় আলাদা বাজেট।

সভায় উঠে আসে, করোনাকালে আদিবাসীদের আয় যেমন কমেছে- তেমনি তাদের সংস্কৃতিতেও প্রভাব পড়েছে। তারা দলগতভাবে সংস্কৃতি চর্চা করতে পারছেন না। আদিবাসী যুবদের একটা বিশাল অংশ এখনও কর্মহীন অবস্থায় রয়েছে। তবে করোনাকালে আদিবাসী নারীদের নির্যাতন এবং ভূমি দখলের জন্য তাদের হয়রানি বেড়েছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন আসাউসের নির্বাহী পরিচালক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু। সভাপতিত্ব করেন আসাউসের সহসভাপতি অসিত পালন। সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিভূতি ভূষণ মাহাতো। সভা পরিচালনা করেন দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন- সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার নির্বাহী পরিচালক ফয়জুল্লাহ চৌধুরী, রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী এন্তাজুল হক বাবু, নগরীর সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জেলার সাধারণ সম্পাদক অঞ্জনা সরকার, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক গণেশ মার্ডি প্রমুখ।

সভায় আরও বক্তব্য দেন- বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির জেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের জেলার সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়, দিনের আলো হিজড়া সংঘের সাধারণ সম্পাদক সাগরিকা খান, রবিদাস উন্নয়ন পরিষদের জেলার সভাপতি রঘুনাথ রবিদাস, সামাজিক কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সম্রাট রায়হান, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুণ মুণ্ডা, সহসভাপতি সাবিত্রি হেমব্রম, সদস্য মলি বিশ্বাস প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/৭নভেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :