আত্মহত্যার পরও সুদের টাকার জন্য ফোন!

বরগুনা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর ২০২০, ২১:১৬

পাঁচ বছরের সাত লাখ টাকার সুদ হিসাবে পরিশোধ করেছেন ১১ লাখ টাকা। কিন্ত এরপরও আসলের জন্য চাপ দিতে থাকেন সুদ ব্যবসায়ী। নির্ধারিত সময়ে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় মুঠোফোনে অকথ্য গালিগালাজ করা হয়। এই অপমানে আত্মহত্যা করেও রেহাই মেলেনি! মৃত্যুর পরও টাকার জন্য ফোন দিয়েছেন সুদ ব্যবসায়ী।

আত্মহত্যাকারী বরগুনার বেলাল হোসেন পলাশ(৩৭) পেশায় বস্ত্র ব্যবসায়ী। শনিবার ভোরে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউয়িনের নলী বাজারের বাসার পেছনে মেহগনি গাছে গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে।

নিহত পলাশ নলটোনা ইউনিয়নের গর্জনবুনিয়া এলাকার মৃত শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে। তিনি নলী বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করতেন।

পলাশের পরিবার জানায়, ২০১৫ সালে বরগুনার পল্লী চিকিৎসক জহিরুল ইসলাম সৌরভের কাছ থেকে প্রথমে তিনলাখ টাকা সুদে নেন পলাশ। এরপর পর্যায়ক্রমে এভাবে তিনি ওই চিকিৎসকের কাছ থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা সুদে নেন। তিনি ওই টাকার সুদ বাবদ ১১ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন।

পলাশের স্ত্রী রোকসানা বেগম জানান, আসলের ২৬ হাজার টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দেন সৌরভ। গত বুধবার সৌরভকে ওই টাকা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্ত টাকা পরিশোধ না করায় বৃহস্পতিবার পলাশকে অকথ্য গালাগাল করেন ওই সুদ ব্যবসায়ী। এক পর্যায়ে অনুনয় বিনয় করে শনিবার পর্যন্ত সময় নেন পলাশ।

শনিবার ফজরের নামাজের পর সৌরভ টাকা চেয়ে পলাশকে ফোন দিয়ে গালিগালাজ করেন। অপমানে লজ্জায় ঘৃণায় ভোর সাড়ে ৬টার দিকে পলাশ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সাড়ে ৭টার দিকে আবারো পলাশের ফোনে কল করে টাকা চায় সুদ ব্যবসায়ী সৌরভ। পলাশের স্ত্রী রোখসানা ফোন রিসিভ করে সৌরভকে পলাশের আত্মহত্যার খবর জানান।

রোখসানা বলেন, সৌরভের আসল সাত লাখ টাকার বিপরীতে আমার স্বামী ১১ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। এরপরও সৌরভ আসল টাকার জন্য আমার স্বামীকে গালিগালাজ করেছেন। ঘৃণায় অপমানে আমার স্বামী আত্মহত্যা করেছেন। আমি এই সুদ ব্যবাসীয় সৌরভের বিচার চাই, আমার ছোট দুটো সন্তান নিয়ে এখন আমি দিশেহারা।

এ ঘটনার পর ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন পল্লী চিকিৎসক জহিরুল ইসলাম সৌরভ। বরগুনার ফার্মেসি পট্টিতে তার চেম্বারে গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। ব্যবহৃত ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পলাশের লাশ উদ্ধার করে। এ সময় পলাশের জামার পকেট থেকে চিরকুট উদ্ধার করা হয়। এতে সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় অপমানে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে লিখে রাখেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।

বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক(তদন্ত) শহীদুল ইসলাম মিলন জানান, এ ব্যাপারে একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। নিহতের পরিবার অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। (ঢাকাটাইমস/৭নভেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :