ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া’র কবিতা: তেলের তেলেসমতি
যার যত তেলধন তার তত মূল্য,
ধনে মানে কেউ নেই তার সমতুল্য।
তেল যদি খাঁটি হয় দাম তার মস্ত,
তেল যদি ফ্যাল হয়; দুর্দশাগ্রস্ত।
নানাবিধ ব্যবহার তেল নানা ক্ষেত্রে;
পণ্ডিতে তেল মাখে শাসনের বেত্রে।
তেল দিয়ে রাঁধা যায় সুস্বাদু রান্না,
চোখে তেল দিয়ে কাঁদে মহামায়া কান্না।
নাকে তেল দিয়ে ঘুমে সুখিজন মগ্ন,
ঘটে যার তেল নেই; দেহমন ভগ্ন।
শিল্পীর ছবি হয় তেল-রঙে মূর্ত,
তেলা মাথে তেল দিয়ে পার পায় ধূর্ত।
দেহে যদি তেল বাড়ে ভুঁড়ি বাড়ে নিত্য,
তেল মেরে ফল পেয়ে পুলকিত চিত্ত।
চুলে তেল মেখে সাজে গাঁয়ে বধূ-কন্যা,
আরবের তেল-খনি আয়েসের বন্যা।
স্থলে হোক, জলে হোক, হোক মহাশূন্যে
যান চলে সবখানে শ্রী-তেলের পুণ্যে।
কল চলে, মিল চলে, চলে সব যন্ত্র,
বাতি জ্বলে, সেজ জ্বলে; সবই তেলমন্ত্র।
তিলে আর সর্ষেতে থাকে তেল সুপ্ত,
তেল-কলে না মাড়ালে তেল থাকে গুপ্ত।
কর্তা যে জ্বলে ওঠে তেলে আর বেগুনে,
চকচকে কাঠ পায় তেল মেখে সেগুনে।
তেল মারা শিল্পটা যে করেনি রপ্ত,
গুণ তার যা-ই থাক; জীবন অভিশপ্ত।
তেলে আছে সফলতা সীমাহীন শক্তি,
গুরুজিকে ছেড়ে করো তেল-দেবে ভক্তি।
স্নেহতেল, স্তুতিতেল, সোহাগের তেলটা,
চাটুকারি মর্দনে জমে গেছে খেলটা।
মোসাহেবি তেলটার দর বেশি বাজারে,
চাটুকার পদ পায় তেল দিয়ে রাজারে।
তেলস্রোতে চলমান ভয়ানক খেলাটি,
দূরদেশে ভেসে যায় যোগ্যতা ভেলাটি।
জ্ঞানে-গুণে গর্দভ; দেহে যার কম বল,
তেল, শুধু তেল তার জীবনের সম্বল।
স্থান কাল পাত্রের ভেদাভেদ রাখবে,
পরিমাণ মত তেল সযতনে মাখবে।
তেল যদি জল হয় ভাগ্যটা মন্দ,
লক্ষ্মীর দ্বার হবে চিরতরে বন্ধ।
তেলানোর কৌশল জানে না যে অধমে,
তাকে বলি-ফাঁস দাও; ঝোলো ডাল কদমে।
নীতিজ্ঞান ডুবছেই প্রীতিতেল সাগরে,
ধ্যানে বসে কায়মনে তেলধন মাগো রে।