পুরান ঢাকার খেলার মাঠে তালা দিল কারা?

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২০, ১৯:১৫ | প্রকাশিত : ০৮ নভেম্বর ২০২০, ১৮:০৫

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই। স্থানীয় একটি সরকারি খাসজমিকে মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল শিশু-কিশোররা। কিন্তু তিন বছর ধরে সেখানে আর খেলাধুলার সুযোগ নেই। স্থানীয় সাংসদ মাঠটি তালা দিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম এক বছর আগে নিজে পোস্তার ওই জায়গার গেটে তালা মেরে দেন।

পুরান ঢাকার পোস্তা মোড়ে হাজী সেলিমের বাড়ি ও তার প্রধান রাজনৈতিক কার্যালয়। এই ভবন থেকে পূর্ব দিকে ৫০ গজ গেলে হাতের ডান দিকে পরিত্যক্ত জমিটি। এর গেইটে একটি সাইনবোর্ড লাগানো। তাতে লেখা ‘খেলাধূলার মাঠ। এলাকার জনস্বার্থে খেলাধূলার জন্য উন্মুক্ত দেয়া হলো ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার মাঠ।’

কে বা কারা কবে এই সাইনবোর্ড লাগিয়েছে তা স্পষ্ট করে বলতে পারে না কেউ। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিছু ক্ষমতাবান ব্যক্তি এবং সংগঠন এ জায়গাটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা কয়েক বছর আগে এই সাইনবোর্ড লাগিয়েছে।

তারা জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ জমির মালিক ছিল একটি হিন্দু পরিবার। এখানে ছিল সিলভারের তৈজসপত্র তৈরির কারখানা। পরিবারটি চলে গেলে জায়গাটি খালি পড়ে থাকে। দীর্ঘদিন খালি পড়ে থাকায় জায়গাটি চলে যায় সরকারি খাসজমির খতিয়ানে। খালি জায়গাটিতে খেলাধুলা শুরু করে স্থানীয় শিশু-কিশোররা। স্বাধীনতার পর থেকে স্থানীয় দুই প্রজন্ম এ জায়গায় খেলাধুলা করেছে বলে জানান স্থানীয়রা।

কিন্তু এক বছরের বেশি সময় ধরে জায়গাটি তালাবদ্ধ। সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস নেই কারও। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা হয়েছে স্থানীয় বেশ কয়েকজনের।

একজন বাসিন্দা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি এই মাঠে খেলেছি। আমার পোলাপান খেলেছে। এহন আর কেউ খেলতে পারে না। কয়েক বছর আগে এই জায়গায় একটা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় করার পরিকল্পনা করছিল। সেটা বন্ধ করে পরে এখানে একটা রিকশা-ভ্যানগাড়ির গ্যারেজ বানানো হয়। সেটা দুই বছর ছিল। বছর খানেক আগে আমাগো এমপি সাহেব (হাজী সেলিম) নিজ হাতে এটার গেইটে তালা মেরে দিল।’

একজন চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, ‘মাঠটা খুলে দিলে আমাদের পোলাপান খেলতে পারে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে এমপি সাহেব, আমাদের কাউন্সিলর সাহেবের কাছে মাঠটা খুলে দেয়ার দাবি জানাই।’

একই তথ্য জানিয়েছে জায়গাটির সামনের কয়েকজন ব্যবসায়ী। এক দোকানি বলেন, ‘পোলাপান এখানে খেলত। এমপি সাহেব জায়গাটা বন্ধ করে দিছে। এখন আর খেলার ব্যবস্থা নাই। পোলাপান এখানে খেললে কার কী ক্ষতি? শুনছি, জায়গাটা দখল করে বিল্ডিং বানানোর প্লান করতেছে।’

মাঠটি উন্মুক্ত ঘোষণার সাইনবোর্ডটি কে বা কারা সেঁটেছেন বা কারা তালা দিয়েছেন সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম বাবুল।

ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘এটা পরিত্যক্ত সম্পত্তি। কিছু লোক এখানে রিকশার গ্যারেজ করেছিল। কারা যেন খাইত। এটা আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার এখানে খেলার মাঠ নাই। আমি যেটুকু জানি, আমাদের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রয়াত কাউন্সিলরের কাছ থেকে আমরা জেনেছিলাম, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এ জায়গাটা বন্দোবস্ত নেয়ার কথা ছিল। যে পর্যন্ত না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত এটা সরকারি খাসজমি, গণপূর্তের আওতাধীন। সে ক্ষেত্রে কারা যেন বন্ধ করে রাখছে।’

খালি জায়গাটি শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া যায় কি না জানতে চাইলে কাউন্সিলর বাবুল বলেন, ‘বাচ্চারা এখানে অবশ্যই খেলতে পারে। এলাকার লোকজন যদি আমার কাছে বা মেয়র সাহেবের কাছে আবেদন করে, তাহলে আমি এ জায়গাটা খুলে দিব। তারা যদি আসে, আমি এলাকার লোকজন নিয়ে, বাড়িওয়ালাদের নিয়ে এ জায়গাটা খুলে দিব।’

(ঢাকাটাইমস/১১নভেম্বর/কারই/কেআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :