এএসপির মৃত্যু: মাইন্ড এইড হাসপাতাল রোগীশূন্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২০, ১৩:৩১ | প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর ২০২০, ১২:৫৯

আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে কর্মচারীদের পিটুনিতে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিমের মৃত্যুর পর সেখানে চিকিৎসাধীন সব রোগী হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন।

মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে হাসপাতালের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া হাসপাতালটিতে কোনো রোগীও পাওয়া যায়নি।

এদিকে আনিসুল করিম শিপনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার রাত থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ।

হাসপাতালের স্টাফ শারমিন আক্তার বলেন, হাসপাতালটিতে ১৭ জনের মতো রোগী ভর্তি ছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তা মারা যাওয়ার পর পরই স্বজনরা তাদের রোগীদের নিয়ে চলে গেছেন।

শারমিন আরও জানান, ওয়ার্ডবয়দের পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আজ সকালে ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা হাসপাতালে আসেননি।

সোমবার সকালে আদাবরের এই মানসিক রোগ নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হাসপাতালের কর্মচারীদের পিটুনিতে এএসপি আনিসুল করিম নিহত হন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আনিসুলের পরিবারও একই অভিযোগ করেছে। তারা জানিয়েছেন, ভর্তির পর পর হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় তারা পুলিশ কর্মকর্তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেছেন মাত্র। পরে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুলকে টানাহেঁচড়া করে একটি কক্ষে ঢোকানো হয়। তাকে হাসপাতালের ছয়জন কর্মচারী মিলে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন। এর পর আরও দুজন কর্মচারী তার পা চেপে ধরেন।

এ সময় মাথার দিকে থাকা দুজন কর্মচারীকে হাতের কনুই দিয়ে তাকে আঘাত করতে দেখা যায়। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ তখন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। একটি নীল কাপড়ের টুকরা দিয়ে আনিসুলের হাত পেছনে বাঁধা হয়।

কিছুক্ষণ পর আনিসুলকে উপুড় করা হয়। তার শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ায় একজন কর্মচারী তখন তার মুখে পানি ছিটান। পরে কর্মচারীরা কক্ষের মেঝে পানি দিয়ে পরিষ্কার করেন।

সাত মিনিট পর সাদা অ্যাপ্রোন পরা একজন নারী কক্ষে প্রবেশ করেন। ১১ মিনিটের মাথায় কক্ষের দরজা লাগিয়ে দেয়া হয়। ১৩ মিনিটের মাথায় তার বুকে পাম্প করেন সাদা অ্যাপ্রোন পরা নারী।

পরে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেয়া হলে চিকিৎসকরা আনিসুলকে মৃত ঘোষণা করেন। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের খাতায় লেখা রয়েছে ‘ব্রট ডেড’ অর্থাৎ সেখানে নিয়ে আসার আগেই আনিসুলের মৃত্যু হয়েছিল।

আনিসুলের ভাই রেজাউল করিম সংবাদমাধ্যমকে জানান, পারিবারিক ঝামেলার কারণে তার ভাই মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার সকালে তারা তাকে নিয়ে মাইন্ড এইড হাসপাতালে যান।

তিনি জানান, কাউন্টারে ভর্তির ফরম পূরণের সময় হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী আনিসুলকে দোতলায় নিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর তাদের জানানো হয় আনিসুল অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন। এর পর দ্রুত হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রেজাউল করিম আরও জানান, তার ভাইয়ের রক্তচাপজনিত সমস্যা ছিল। কিছুটা হৃদরোগও ছিল। কিন্তু এ দুটির কোনোটিই প্রকট ছিল না। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পিটুনিতেই সে নিহত হয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল বলেন, ‘এএসপি আনিসুল করিমকে কয়েকজন মিলে চিকিৎসার নামে এলোপাতাড়ি মারধর করে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।’

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘প্রশিক্ষিত নয়, হাসপাতালের এমন কিছু ব্যক্তি তাকে চিকিৎসার নামে মারধর করে। এতে তিনি প্রাণ হারান।’

মাইন্ড এইড হাসপাতালের সমন্বয়ক মো. ইমরান খান জানিয়েছেন, আনিসুল হককে জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউট থেকে তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। ভর্তির সঙ্গে সঙ্গেই তিনি খুব উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছিলেন। একে–ওকে মারধর করছিলেন। তাকে শান্ত করার জন্য ওই কক্ষটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

নিহত আনিসুল করিম বরিশাল মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনারের পদে ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুরে। আনিসুল ৩১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। তিনি বরিশাল থেকে সোমবারই গাজীপুরের বাসায় গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, এএসপি আনিসুল করিমকে হত্যার ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তারা হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এই ঘটনার সঙ্গে যারা যারা জড়িত তাদের সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের দশ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হবে। এছাড়া হাসপাতালটি পরিচালনায় সরকারি কোনো অনুমোদন ছিল না বলে জানান ডিসি হারুন অর রশিদ।

(ঢাকাটাইমস/১০নভেম্বর/কেআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

ডিজিটাল হুন্ডিতে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার

ইউটিউবে জাল টাকা তৈরি শেখা, রাজমিস্ত্রি-জেলেকে নিয়ে গড়ে তোলা হয় চক্র

দুর্নীতি মামলায় মেজর মান্নান কারাগারে

ভুয়া নিয়োগপত্রে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

শিশু বিক্রির অর্ডার নিয়ে অপহরণ করতেন তারা

দুর্নীতির অভিযোগে রুয়েটের সাবেক ভিসি ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা ​​​​

যাবজ্জীবন সাজা থেকে বাঁচতে ২২ বছর ধরে তরমুজ ও ওষুধ বিক্রেতা, অতঃপর...

বিমানবন্দরে ডলার কারসাজি, ১৯ ব্যাংকারসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ঢাবি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে মারধর করে ছিনতাইয়ের অভিযোগ

ধানক্ষেতে বিদ্যুতের ফাঁদ পেতে ‘হত্যা’: তিন আসামি গ্রেপ্তার

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :