এএসপি আনিসুল স্যারের ওপর নির্মমতা ও কিছু কথা

প্রকাশ | ১১ নভেম্বর ২০২০, ১৫:৩১

মো. আনোয়ার হোসেন (শামীম আনোয়ার)

ভাগ্যিস এএসপি আনিসুল করিম স্যারের ওপর অত্যাচার করার ভিডিওটা পাওয়া গেছে। সেখানে একজন বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডার কর্মকর্তা সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম স্যারের ওপর হাসপাতালের কর্মচারী নামের কিছু অমানুষের নির্মমতা দেখে সকলে প্রতিবাদী হয়েছেন।

কিন্তু যদি ওই জায়গায় কোনো সিসি ক্যামেরা না থাকতো অথবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি কোনোভাবে ভিডিওটি সরিয়ে নিতে পারতো, তা হলে আজকের পত্রপত্রিকা/টিভির খবরে এ রকম একটা গল্পই হয়তো শোনা যেতো-‘ডাকাতি করতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা নিহত!’

রাজধানীর আদাবরে ডাকাতি করতে গিয়ে জনতার প্রতিরোধের মুখে প্রাণ হারিয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দুপুর আনুমানিক ১২টার সময় আনিসুল করিম নামের পুলিশের এই সিনিয়র এএসপি অস্ত্র বাগিয়ে স্বনামখ্যাত ‘মাইন্ড এইড’ মানসিক হাসপাতালের ক্যাশ কাউন্টারে ঢুকে পড়েন। তারপর সেখানে দায়িত্বরত কর্মচারীদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে সেখানে থাকা সমুদয় টাকা লুণ্ঠন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রত্যুৎপন্নমতিত্বে উপস্থিত কর্মচারীদের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে তার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

পরে ডাকাতির চেষ্টারত পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুলকে হাসপাতালের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক পর সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আত্মগ্লানিতে সে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। এই বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বলেন, একজন পুলিশ সদস্য কীভাবে হাসপাতালের মতো জায়গায় ডাকাতি করতে যায়, তা আমার বোধগম্য নয়। পুলিশে পেশাদারিত্ব, নৈতিকতা যে কতটা তলানিতে পৌঁছেছে, এই ঘটনা তা আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

এই ডাকাতি পরিকল্পনার সাথে নিহত আনিসুল করিম ছাড়া আর কোনো পুলিশ জড়িত ছিল কি না, আর থাকলে তাদেরকে খুঁজে বের করে শিগগিরই বিচারের আওতায় আনার দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সচেতন যুব পরিষদ।

এ সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সশস্ত্র একজন পুলিশ কর্মকর্তার লুণ্ঠন প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অভিনন্দন জানানো হয়। সমাবেশ থেকে বক্তারা সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, ডাকাতি করতে এসে নিহত এএসপি আনিসুলের সহযোগীদেরকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রেপ্তার না করা হলে সারাদেশে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালের চেয়ারম্যান জানান, আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ডাকাতির চেষ্টা রুখে দিয়েছি। চিন্তা করুন, পুলিশকে আমাদের ট্যাক্সের টাকায় বেতন দেওয়া হয় চুরি-ডাকাতি বন্ধ করার জন্য। কিন্তু রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে যায়, তাহলে আমরা কার কাছে যাব!

পুনশ্চ: হতে পারে সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম অনেক মেধাবী ছিলেন। হতে পারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির একটি বিষয় থেকে তিনি ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড পজিশন আর বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে সেকেন্ড পজিশন অর্জন করেছিলেন। কিন্তু যত যাই হোক, যেহেতু পেশায় তিনি একজন পুলিশ, অতএব তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলাটা একদমই সঠিক কাজ হয়েছে। কোনো ভুল নেই, সব ঠিক আছে। চিল্লায় কন, ঠিক কিনা আআআআ...।

লেখক: এএসপি (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল), চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ

ঢাকাটাইমস/১১নভেম্বর/এসকেএস