‘শুনেছি বাবা জলদস্যু, তার দেখা পাইনি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২০, ১৫:৩৪ | প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর ২০২০, ১৪:৪৮

আট বছর বয়সী মোহাম্মদ রায়হান। জন্মের পর বাবার দেখা পায়নি। বাবা দেখতে কেমন, কী করে, কীভাবে কথা বলে ধারণা নেই এই স্কুলছাত্রের। জন্মের পর লোক মুখে শুনেছে তার বাবা জলদস্যু বাহিনীর সদস্য। এ কারণে তাকে বিভিন্ন সময় অবজ্ঞা আর ঘৃণার শিকার হতে হয়েছে।

ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপকালে এই মর্মযাতনার কথা বলছিল চট্টগ্রামের বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রায়হান। বাবা র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করছেন, এজন্য তাকে দেখতে মায়ের সঙ্গে এসেছেন বাঁশখালীতে।

জানা যায়, রায়হানের বাবা মো. শাপদ্দিন জলদস্যু বাহিনীর সদস্য। জন্মের পর বাবাকে দেখেনি রায়হান। বাবা দেখতে কেমন এই কৌতূহল তাকে অহর্নিশি তাড়া করে বেড়ায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বাবা যখন অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে তখন মা চিনিয়ে দেন বাবাকে। দূর থেকে বাবাকে একনজর দেখার সুযোগ হয় রায়হান।

বৃহস্পতিবার দুপুরে র‌্যাবের তত্ত্বাবধানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে অস্ত্র ও গুলিসহ ৩৪ জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে। এসময় ৯০টি অস্ত্র এবং ২০৫৬ রাউন্ড গুলি জমা দেয় জলদস্যুরা।

রায়হান বলে, ছোটবেলা থেকে বাবাকে দেখিনি। বুদ্ধি হওয়ার পরেও বাবা দেখতে কেমন তা জানতাম না। শুধু মায়ের কাছে বাবার গল্প শুনেছি। আমি জানি, আমার বাবা খারাপ কোনো কাজ করেনি। এলাকার কিছু দুষ্টু মানুষ বাবাকে ফাঁসিয়ে বাড়ি ছাড়া করে দেয়।

রায়হান আরও জানায়, স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় বাবা সঙ্গে যায়নি। বন্ধুদের কোনো বাবা স্কুলে গেলে তার অনেক মন খারাপ হতো। শুধু ভর্তির সময় মা একবার স্কুলে গিয়ে ভর্তি করিয়েছিল। এরপর থেকে সে একাই স্কুলে যাওয়া-আসা করে।

রায়হানের মা জানান, স্থানীয় একটি মারামারির ঘটনায় তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়। মামলার পর থেকে তিনি পালিয়ে বেড়ান। এরপর জলদস্যু বাহিনীতে যোগ দেন। দীর্ঘ আট বছর তিনি বাড়ি আসেননি। তার সঙ্গে যোগাযোগও ছিল না। তিনি বেঁচে আছে কি না তাও চার বছর ধরে জানতেন না।

এদিকে বাঁশখালীসহ চার উপজেলার ৩৪ জন জলদস্যু অস্ত্রসহ এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, তারই ধারাবাহিকতায় নগরীর বাঁশখালী, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া এলাকার জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণ করতে যাওয়া এসব জলদস্যুর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের তালিকাভুক্ত ছয় থেকে সাতজন আছেন। যারা বিভিন্ন সময়ে ডাকাতি, অস্ত্র ব্যবসা, ছিনতাই ও জলদস্যুতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছুদিন ধরেই মাঠপর্যায়ে কাজ করে আসছে র‌্যাব।

(ঢাকাটাইমস/১২নভেম্বর/এসএস/কেআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :