চার বছরের ব্যবধানে পাল্টে গেল প্রসূতির রক্তের গ্রুপ!

জাভেদ হোসেন, গাইবান্ধা
| আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২০, ১৮:৪৮ | প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর ২০২০, ১৮:৪৭

গাইবান্ধা পৌর শহরের কলেজ রোডে গাইবান্ধা ক্লিনিকে এক প্রসূতির রক্তের গ্রুপের রিপোর্ট দুই ধরনের পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ধরা পড়ল ৩ নভেম্বর গাইবান্ধা ক্লিনিকে জেসমিন আক্তার নামে এক প্রসূতির সিজারের আগ মুহূর্তে। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) রাতে এ ব্যাপারে সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগী প্রসূতির স্বামী সাইফুল্লাহ ইবনে হালিম।

পুলিশ বলছে, গাইবান্ধা পৌর শহরে প্রফেসর কলোনির সাইফুল ইবনে হালিমের স্ত্রী জেসমিনকে চার বছর আগে কলেজ রোডের গাইবান্ধা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। পরে অস্ত্রপচার করে বাচ্চা প্রসবের সিদ্ধান্ত নিলে রক্তের প্রয়োজনীয়তায় প্রসূতির রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে ‘ও নেগেটিভ’ রিপোর্ট দেওয়া হয়। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী রক্ত সংগ্রহ করে দিলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জেসমিনের শরীরে তা পুশ করেন। তারপর জেসমিনের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক উচ্চমাত্রার ইনজেকশন পুশ করেন। প্রতিটি ইনজেকশনের মূল্য ১২ হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে বলে সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়। সেই ইনজেকশন পুশ করার পর জেসমিন কিছুটা সুস্থ হলে ক্লিনিক থেকে তাকে রিলিজ দেয়া হয়। কিন্তু তারপর থেকে জেসমিন সবসময় নানা রোগে আক্রান্ত হতে থাকেন। তিন বছর তার সুস্থতার জন্য বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিতে হয়।

এ অবস্থায় জেসমিন দ্বিতীয়বারের মতো গর্ভবতী হলে গত ৩ নভেম্বর সকালে গাইবান্ধা ক্লিনিকে তাকে নিয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে জেসমিনের অস্ত্রপচার করে বাচ্চা প্রসবের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী পূর্বের রক্তের রিপোর্ট ‘ও নেগেটিভ’ গ্রুপের দুজন রক্তদাতাও ক্লিনিকে উপস্থিত রাখেন স্বজনরা। অস্ত্রপচারের সময় প্রসূতির রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার জন্য বলা হলে তিন বছর আগের রিপোর্টটি দিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আবার রক্ত পরীক্ষা করতে বলেন। তাদের কথা মতো রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করলে ‘ও পজিটিভ’ বলে জানায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। যদিও একই ক্লিনিকে ২০১৬ সালে জেসমিনের রক্তের গ্রুপ ‘ও নেগেটিভ’ রিপোর্ট দেয়া হয়েছিল।

একই ব্যক্তির দুই ধরনের রক্তের গ্রুপ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান জেসমিনের স্বজনরা। বিষয়টি তারা আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য পাশেই মা ও শিশু হাসপাতালে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করান। সেখানেও জেসমিনের রক্ত ‘ও পজিটিভ’ আসে। এরপর তার স্বজনরা গাইবান্ধা ক্লিনিকে গিয়ে ঘটনাটির প্রতিবাদ জানালে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাদের চলে যেতে বলেন। জেসমিনের স্বামী তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় মা ও শিশু হাসপাতালে নিলে সেখানে তার ডেলিভারি সম্পন্ন হয়।

এ ব্যাপারে একাধিক চিকিৎসক বলেছেন, ভুল রিপোর্টেরভিত্তিতে অসাবধানতাবশত রোগীর শরীরে অন্য গ্রুপের রক্ত পুশ করার কারণে তার মৃত্যুর আশঙ্কা ছিল।

গাইবান্ধা ক্লিনিকের স্বত্ত্বাধিকারী ডা.একরাম হোসেন বলেন, ‘এটা চার বছর আগের একটি ঘটনা। রোগী এখনো বেঁচে আছেন, আমার মনে হয়- এটা টেকনোলজিস্টের দুর্বলতা কিংবা লেখার ভুল।’

সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সেরাজুল ইসলাম বলেন, গাইবান্ধা ক্লিনিকে একই ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ দুই ধরনের হয়েছে মর্মে একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি নিজে তদন্ত করেছি, কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালে তাদের ক্লিনিকের রিপোর্টটি তাদের করা নয় বলে দাবি করেন। আমি তাদের আবার যাচাই-বাছাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দিয়ে এসেছি। তারা যথাসময়ে বিষয়টি অবহিত না করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

(ঢাকাটাইমস/১২নভেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :