হেফাজতে আল্লামা শফীর উত্তরসূরি হচ্ছেন কে?

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০২০, ১৪:০৫ | আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২০, ১৪:০৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
সম্প্রতি ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভে জুনাইদ বাবুনগরীসহ সংগঠনের নেতারা।

প্রায় দুই মাস আগে মারা যাওয়া দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী যেসব পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এর প্রায় সবগুলো পূরণ হলেও এখনো আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামে তার স্থলাভিষিক্ত নির্বাচন হয়নি। নানা জল্পনার পর অবশেষে আগামী রবিবার নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য সম্মেলন আহ্বান করেছে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটির আমির পদে থাকা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর উত্তরসূরি কে হচ্ছেন সেটা নিয়ে এখন সারাদেশের আলেম-উলামার মধ্যে জোর আলোচনা চলছে।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব পদে আছেন আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী। আল্লামা শফীর জীবদ্দশায় তার ছেলে আনাস মাদানীর সঙ্গে বিরোধের কারণে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসা ও হেফাজতে ইসলামে অনেকটা কোণঠাসা ছিলেন। তবে হাটহাজারীতে ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে আনাস মাদানী বলয়ের পতনের পর এখন বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে আল্লামা বাবুনগরী বলয়। তারাই মূলত হেফাজতের নতুন সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছে। যদিও এতে দাওয়াত দেয়া হয়নি আনাস মাদানী ও তার বলয়ের লোকদের।

রবিবার সকালে হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের কাউন্সিল আহ্বান করা হয়েছে। এতে সারাদেশের জেলা প্রতিনিধিসহ প্রায় পাঁচশজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিনিধি সম্মেলন হলেও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন জ্যেষ্ঠ আলেমদের ১৫ জনের শূরা কমিটি। এতে হেফাজতে ইসলামের আমির ও মহাসচিব নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া অন্য কয়েকটি শীর্ষ পদেও পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন নাজিরহাট আল জামিয়া আল আরাবিয়া নছিরুল ইসলাম মাদ্রাসার শূরা সদস্য ও ফটিকছড়ি বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীর মামা।

হেফাজতের নতুন আমির পদে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীর নাম জোরেশোরে প্রচারিত হচ্ছে। আর মহাসচিব পদে আলোচিত হচ্ছে বর্তমান নায়েবে আমির এবং ২০ দলীয় জোটভুক্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর নাম। এছাড়াও আমির পদে মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এবং মহাসচিব পদে মাওলানা মামুনুল হকের নাম আলোচিত হচ্ছে।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচশজনকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। তারাই নির্ধারণ করবেন হেফাজতে ইসলামের পরবর্তী নেতৃত্ব।

তবে হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী এই কাউন্সিলকে অবৈধ দাবি করেছেন। তার দাবি, মহিবুল্লাহ বাবুনগরী কাউন্সিল আহ্বান করেছেন, অথচ তিনি হেফাজতের কেউ নন। তিনি হেফাজত থেকে পদত্যাগ করেছেন। যদিও অপর অংশের দাবি, মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী হেফাজত থেকে পদত্যাগ করেননি।

এদিকে হেফাজতে ইসলামের এক সময়ের নিয়ন্ত্রক যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ ও মাঈনুদ্দিন রুহী এবং দপ্তর সম্পাদক আনাস মাদানীকে সম্মেলনে দাওয়াত দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। আল্লামা শফীর ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলামে তারা কর্তৃত্ব হারিয়েছেন। নতুন কমিটিতেও তাদের স্থান হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হেফাজতে ইসলাম ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও ব্যাপক আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ থেকে মহানবী ও ইসলামের বিভিন্ন অবমাননার অভিযোগ তুলে ওই বছরের ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করে হেফাজতে ইসলাম। তবে এর এক মাস পর ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে শাপলা চত্বরে বিপর্যয়ের পর হেফাজতে ইসলাম অনেকটা কোণঠাসা হয়ে যায়। যদিও পরবর্তী সময়ে সরকারের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তী সময়ে বড় কোনো কর্মসূচি নিয়ে হেফাজতকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি।

আল্লামা শফী যতদিন জীবিত ছিলেন সরকারের সঙ্গে তার ও হেফাজতে ইসলামের সুসম্পর্ক ছিল। অভিযোগ রয়েছে, আল্লামা শফীর নাম ব্যবহার করে তার ছেলে আনাস মাদানীসহ একটি চক্র সরকারের কাছ থেকে ব্যাপক সুবিধা গ্রহণ করেছে। এজন্য ক্ষুব্ধ অংশটি হাটহাজারী মাদ্রাসায় ব্যাপক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আল্লামা শফীকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে। স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয় আনাস মাদানীকে।

এরপর থেকে হাটহাজারী নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলয়ের। এবার তারা হেফাজতে ইসলামেও নিজেদের একচ্ছত্র প্রভাব প্রতিষ্ঠা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিরোধী পক্ষের অভিযোগ, বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে এই বলয়ের সম্পর্ক রয়েছে। যদিও তাদের দাবি, হেফাজতে ইসলাম কারও বলয়ের নয়, ইসলামবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে।

(ঢাকাটাইমস/১৩নভেম্বর/জেবি)