মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য কীর্তিসমূহ-২

ডা. মো. আওলাদ হোসেন
| আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২০, ১১:১২ | প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৫৮

বাংলাদেশের আপামর মানুষের দৃষ্টিতে দিনে দিনেই দৃশ্যমান হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা। বঙ্গবন্ধু কন্যা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক (Visionary Statesman) শেখ হাসিনা, আপনার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর এক মোহনীয় স্বপ্ন নয়, দৃশ্যমান বাস্তব। আপনার সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও স্বপ্ন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এ ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার আজ দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরের সর্বত্র বিরাজমান। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে e-governance, e-banking, e-commerce, e-learning, e-agriculture, e-health ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত করে জনগণকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। Digital Bangladesh for Good Governance, 2010 এ বলা হয়েছে- `The current government’s Digital Bangladesh by 2021 vision proposes to mainstream ICT’s as a pro-poor tool to eradicate poverty, establish good governance, ensure social equity through quality education, healthcare and law enforcement for all, and prepare the people for climate change.’

মানবতার কাণ্ডারি,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ২০১৮ সালে মায়ানমারে সেনাবাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত ও গণহত্যার শিকার হয়ে নিজভূমি থেকে বিতাড়িত প্রায় ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মুসলমানদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে, খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে আন্তর্জাতিক সমস্যায় মানবিক ও রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপ নিয়ে আপনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছেন এক ‘মানবতাবাদী দেশ’ হিসেবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আপনি গোটা বিশ্বের বিবেককে জাগিয়ে তুলেছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আপনি যে মানবিকতা ও মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন, তা ইতিহাসে বিরল। বিশ্ব কূটনীতিতে এটি একটি বিস্ময়কর ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপনি বলেছিলেন, ‘আমার দেশের ১৬ কোটি মানুষ খেতে পারলে ১০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানও খেতে পারবে’। মমতাময়ী মায়ের মত নিজের আঁচলে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মুসলমানদের আশ্রয় দেওয়ার কারণেই ব্রিটিশ মিডিয়া আপনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি (Mother of Huminity)’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা খালিজ টাইমস আপনাকে (বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী) ‘প্রাচ্যের নতুন তারকা’ হিসেবে অভিহিত করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইন্ডিয়া টুডে তাদের দীর্ঘ এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘শেখ হাসিনার হ্রদয় বঙ্গোপসাগরের চেয়েও বিশাল, যেখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে কার্পণ্য নেই’ এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান আপনাকে ‘বিরল মানবতাবাদী নেতা’অভিহিত করেন। ২০১৬ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হোসে ম্যানুয়েল সান্তোস আপনাকে ‘বিশ্বমানবতার বিবেক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ভারতীয় আরেক নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থী ‘বিশ্বমানবতার আলোকবর্তিকা’ হিসেবে তুলনা করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, ‘বাবার মতোই বিশাল হৃদয় তার।’

সম-অধিকারে বিশ্বাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনি ক্ষমতায় আসার পরপরই সব পর্যায়ে লিঙ্গ সমতা, নারীর উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য অসংখ্য নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করেন এবং বাস্তবিক অর্থে সব পর্যায়ে তা সুসংহত ও কার্যকর করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন। শিক্ষায় নারীদের শতভাগ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিকভাবে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা, নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করা, আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নারীদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করা এবং রাজনীতিতে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার জন্য আপনার গৃহীত উদ্যোগ ও সাফল্য অভাবনীয়। আপনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার ৬-১০ বছর বয়সী সব শিশুকে বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েরা টিউশন ফি ছাড়া পড়াশোনা করতে পারছে। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদান করা হয় এবং মেয়েদের স্কুলে যেতে উৎসাহিত করতে বৃত্তি দেওয়া হয়। সম্প্রতি সরকার ঘোষণা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিনামূল্যে দুপুরের খাবার (School Feeding) প্রদান করা হবে এবং শিক্ষার্থীরা স্কুলের পোশাক তৈরি করার জন্য এককালীন ২০০ টাকা পাবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনার নেয়া নারী কল্যাণ নীতির সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ। সরকারের সপ্তম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১৬-২০২০) অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতের অঙ্গীকার করা হয়েছে। বর্তমানে (২০২০) ৩০ লাখেরও বেশি নারী শ্রমিক পোশাক শিল্পে কর্মরত আছেন। এছাড়া ব্যবসায়ে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। ব্যবসায়ে সমান সুযোগ তৈরি করার উদ্দেশ্যে ২০১১ সালে জাতীয় নারী নীতি গ্রহণ করা হয়। দুস্থ, অসহায় ও পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য বর্তমান সরকারের বহুমুখী প্রকল্প চালু আছে; এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ভিজিএফ, ভিজিডি, দুস্থ ভাতা, মাতৃত্বকালীন ও গর্ভবতী মায়েদের ভাতা, অক্ষম মা ও তালাকপ্রাপ্তদের জন্য ভাতা, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি ইত্যাদি। এছাড়া কর্মজীবনে নারীদের অংশগ্রহণকে সহজ করার লক্ষে মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে বৃদ্ধি করে ৬ মাসে উন্নীত করা হয়েছে। প্রান্তিক নারীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজে পৌঁছে দেওয়ার জন্য খোলা হয়েছে গ্রামভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিকের; মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিমের আওতায় গর্ভধারণ থেকে প্রসবকালীন সব খরচ, এমনকি যাতায়াত খরচও এখন সরকার বহন করে। যার ফলে বাংলাদেশে মাতৃত্বকালীন মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, সেনা, নৌ, পুলিশ, বিজিবি, সাহিত্য, শিল্পসহ সর্বোচ্চ বিচারিক কাজেও নারীদের অংশগ্রহণ ও সাফল্য এখন লক্ষণীয়।

নারী-পুরুষের সমতা অনুধাবনের অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতায় নারী-পুরুষের আনুপাতিক অবস্থান। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীর অংশগ্রহণের বিষয় বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম। আপনার সহযোগিতায় বাংলাদেশের নারীরা খেলাধুলায়ও পিছিয়ে নেই। প্রথম নারী উপাচার্য, প্রথম নারী পর্বতারোহী, বিজিএমইএ-তে প্রথম নারী সভাপতি, সংখ্যালঘু প্রথম নারী মেজর, প্রথম নারী স্পিকার, প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিগত এক দশকে আপনার দ্বারাই সৃষ্টি হয়েছে। নারীদের ক্ষমতায়নে এই অভূতপূর্ব অংশগ্রহণের সুযোগ ও অনুপ্রেরণা উৎস আপনি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণকে সুসংহত করার জন্য জাতীয় সংসদে নারী আসনের সংখ্যা ৫০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে বহু নারীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে ১২ হাজারের বেশি নারী জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়েছে। বর্তমান সংসদে নারী সদস্য আছেন ৭২ জন এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার, শিক্ষামন্ত্রীসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের আসীন করা হয়েছে এবং তারা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নারীর প্রতি সব ধরনের সহিসংতা রোধে ২০১২ সালে আপনি পারিবারিক সহিংসতা দমন ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ প্রণয়ন করেন। এছাড়াও নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে প্রণয়ন করেন মানবপাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১১, বাল্যবিবাহ নিরোধ করে মেয়ে শিশুদের সমাজে অগ্রগামী করার জন্য বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন-২০১৭, মেয়েশিশুদের নিরাপত্তায় শিশু আইন-২০১৩। হিন্দু নারীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার্থে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন-২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে। আপনার উদ্যোগে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে এবং দেশের ৭টি বিভাগে One stop crisis center খোলা হয়েছে।

পৃথিবীতে কোন অবদানই বৃথা যায় না। নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইতিমধ্যে আপনি গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশিপ, প্ল্যানেট ফিফটি ফিফটি চ্যাম্পিয়ন, এবং এজেন্ট অব চেঞ্জ সহ নানাবিধ আন্তর্জাতিক সম্মাননা অর্জন করেছেন। এসব অর্জন বাংলাদেশের নারীদের যেমন গর্বিত করে, তেমনি আশার আলো দেখায় পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বৈষম্যহীন-সম্মানজনক অবস্থানে উন্নীত হয়ে দেশ গঠনে অংশগ্রহণে।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসে এক বৈঠকে আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। লেবার পার্টির সিনিয়র এমপি জিম ফিটজপ্যাট্রিকস বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য উন্নয়নের রোল মডেল।’

নানা অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে যে অভাবনীয় আর্থিক সমৃদ্ধি, উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে, তা মূলত নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতির জন্যই, আর এক্ষেত্রে যার অবদান অনস্বীকার্য, তিনিই আপনি, মহান রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা।

চলবে...

লেখার প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

লেখক: ভেটেরিনারিয়ান, পরিবেশবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক কর্মী

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :