বাসের আগুনে উত্তপ্ত রাজনীতি, চাপে বিএনপি

প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০২০, ১০:০৬ | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২০, ২২:৪১

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে বাসে আগুন-সন্ত্রাসের ঘটনা এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। ঠিক একই কায়দায় গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় ১০টি বাসে অগ্নিসংযোগ করে কে বা কারা। অগ্নিসংযোগে অভিযুক্তরা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত না হলেও ওই ঘটনায় বেশ বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি।

বাস পোড়ানোর দিন চলছিল ঢাকা-১৮ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন। এই ভোট ঘিরে বিরোধী দল বিএনপি বাসে আগুন দেয়ার কাজটি করেছে বলে দাবি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের। আর বিএনপি দাবি করছে, তাদের ফাঁদে ফেলতে ক্ষমতাসীনরাই আগুন দিয়ে বাস পুড়িয়েছে।

একদিনে রাজধানীর কয়েক স্থানে ১০ বাসে যারাই আগুন দিয়ে থাকুক, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন। দীর্ঘদিন পর আবারও মামলা, গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় পড়েছেন বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী। গ্রেপ্তার এড়াতে সতর্ক অবস্থানে থাকছেন দলের আরও অনেক নেতাকর্মী।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিরোধিতা করে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের সময় শুরু হয়েছিল আগুন-সন্ত্রাস। সেসময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় শতশত বাসে আগুন দেয়া হয়। এতে বহু প্রাণহানির পাশাপাশি জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে দগ্ধ অনেকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন।

বাস পুড়িয়ে মানুষ হত্যার অভিযোগে তখন ব্যাপক ধরপাকড়ের মুখে পড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এমনকি বাস পোড়ানোর মামলায় আসামি হতে হয়েছে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকেও। গত বৃহস্পতিবারের ঘটনাগুলাতেও অভিযোগের তীর বিএনপির দিকে, যদিও এটা ক্ষমতাসীনদের চক্রান্ত বলেই দাবি দলটির।

বিএনপির নেতারা বলছেন, এটা সরকারের ষড়যন্ত্র। বিএনপিকে চাপে রাখার জন্য এজেন্টদের দিয়ে বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। তারা এই ঘটনার নিন্দাও জানিয়েছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের যে অভিজ্ঞতা তাতে দেখা যায় সরকারের কিছু কিছু অংশ যারা বিভিন্নভাবে কাজ করে। কেউ কেউ সাবোটাজ করার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটায়। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, বিএনপি এই রাজনীতি করে না।’

বৃহস্পতিবারের বাস পোড়ানোর ঘটনায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ১৪টি মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় শনিবার রাত পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৪১ নেতাকর্মী; যাদের মধ্যে ৩২ জনকে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
 
এদিকে বাস পোড়ানোর ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে এর জবাব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি তাদের নীলনকশা অনুযায়ী ভোটের দিন রাজধানীতে বাসে আগুন দিয়ে নাশকতা করেছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এর দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে।

২০১৪-১৫ সালের মতো এবারও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অগ্নিকাণ্ড নিয়ে ফোনালাপ সংগ্রহ করেছে বলে খবরে জানা গেছে। এরমধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই চন্দ্র রায়ের সঙ্গে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের একটি ফোনালাপ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফোনালাপটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে শনিবার জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খাঁন কামাল।

ওই ফোনালাপের সঙ্গে বাস পোড়ানোর ঘটনা কেন মিলিয়ে দেখা হচ্ছে, সেটি বুঝতে পারছেন না বিএনপির নেতা নিতাই চন্দ্র রায়। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকাটাইমসকে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘যেহেতু এসব ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ, এবার তারা তদন্ত করুক। আমি একজন আইনজীবী, আমার ফোন সব সময় খোলা থাকে। ফরিদা তার মামলা সংক্রান্ত কাজে আমার কাছে আসার কথা ছিল। আসতে না পারার কারণ জানাতেই আমাকে সে ফোন করেছিল।’

ফোনালাপটির বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় একটি কল রেকর্ড পেয়েছি আমরা। সেটি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। যারা কথা বলেছেন তাদের পরিচয় জানতে কাজ করা হচ্ছে। তবে এই কল রেকর্ড মামলা প্রমাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এভিডেন্স হিসেবে কাজ করবে। কল রেকর্ড আর আগুনের ঘটনার সঙ্গে কথোপকথনের মিল রয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এটা নতুন কিছু নয়। অতীতে যেভাবে আমাদের চাপে রাখার জন্য নাশকতা করা হতো, এবারও একই ফর্মুলা। এটা দুঃখজনক।’

(ঢাকাটাইমস/১৫নভেম্বর/ডিএম/কেআর)