নিজেকে সংশোধনে ব্যস্ত আসামি হাসানুজ্জামান

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০২০, ১৪:২৩ | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২০, ১৪:৩০

বেলাল হোসাইন, সাতক্ষীরা

আদালতের নির্দেশে নিজেকে সংশোধনে ব্যস্ত হয়ে ওঠেছেন সাতক্ষীরার মাদক মামলার আসামি হাসানুজ্জামান সরদার। তিনি নিজেকে কৃষিকাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য উদ্যোগ নেন। এক বছর আগে থেকে তিনি পার্শ্ববর্তী বিলে প্রতি বছর ৪৮ হাজার লিজের টাকা দিয়ে তিন বিঘা জমিতে কুল চাষের উদ্যোগ নেন। প্রায় ৬০০ কুল গাছ লাগান তিনি।

এছাড়া কুল বাগানের নিকটে তিনি প্রতি বছর আট হাজার লিজের টাকা দিয়ে ১০ কাঠা জমিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন। বর্তমানে বাবা-মা, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচজনের সংসার তার।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালি ইউনিয়নের ভাদড়া গ্রামের মাদক মামলার এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাসানুজ্জামান বলেন, ‘এক সময় অসৎ সঙ্গে মিশে অতি লোভে মাদক বহনের কাজে যুক্ত হয়ে পড়ি। সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-২ এর বিচারক ইয়াসমিন নাহার আমাকে কারাগারে না পাঠিয়ে মায়ের মত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দিয়েছেন। আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। আদালতের নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলব।’

জানা গেছে, সম্প্রতি সাতক্ষীরা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান একের পর এক দৃষ্টান্ত রেখে চলেছেন। জেলা ও দায়রা জজের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেই হাসানুজ্জামানকে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে বিচারক ইয়াসমিন নাহার রেখেছেন আরেক দৃষ্টান্ত।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে সাইকেলে করে তিন কেজি গাঁজাসহ খানপুর নামক স্থানে র‌্যাব সদস্যরা হাসানুজ্জামানকে আটক করে। পরদিন র‌্যাব-৬ এর জেওসি আব্দুল্লাহ হেল ওয়ার্ছি বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করেন। পরে ৩ মার্চ তিনি জামিনে মুক্তি পান। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক ও বর্তমানে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

হাসানুজ্জামান জানান, গত ১০ নভেম্বর মঙ্গলবার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহার মাদক বিক্রির অভিযোগে তাকে এক বছর কারাদণ্ড দেন। তবে প্রবেশন হিসেবে তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকার সুযোগ করে দেন। এজন্য তাকে পাঁচটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে।

শর্তগুলো হলো- কোনোরূপ মাদকদ্রব্য সেবন করা যাবে না, কোনো খারাপ সঙ্গীর সঙ্গে চলা যাবে না, প্রতি ছয় মাস অন্তর বাড়িতে ১০টি করে গাছ লাগাতে হবে, বাবা-মায়ের সেবা করতে হবে, সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন মাদকবিরোধী প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে, তিন মাস অন্তর আদালতে হাজিরা দিতে হবে, সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন অফিসারকে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে হবে।

এরই অংশ হিসেবে তিনি গত শনিবার সকাল থেকে স্থানীয়দের নিয়ে মাদকবিরোধী প্রচারণা শেষে মানববন্ধন করেছেন। বাড়িতে চারটি গাছ লাগিয়েছেন। জীবন জীবিকার তাগিদে তিনি নিয়মিত কুলগাছ পরিচর্যার পাশাপাশি মাছ চাষে সময় কাটান। অবসর সময়ে অন্যের জমিতে কাজও করেন তিনি। এছাড়া বাবা-মাকে যথাযথভাবে সেবা যত্ন করে থাকেন। এতে তার দুই সন্তান, স্ত্রী ও বড় ভাই খুশি।

বাবা রজব আলী সরদার, মা আকলিমা খাতুন ও বড় ভাই হাবিবুর রহমান লাল্টু বলেন, ‘বিচারক ইয়াসমিন নাহার যেভাবে হাসানুজ্জামানকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন, তা তারা চিরজীবন মনে রাখবেন।’

হাসানুজ্জামানের আইনজীবী ফখরুল আলম বাবু বলেন, বিচারক ইয়াসমিন নাহার হাসানুজ্জামানকে পরিবারের মধ্যে থেকে কিছু শর্ত আরোপ করে যেভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন, এর জন্য তিনি প্রশংসার দাবিদার। প্রবেশনের জন্য কোনো আবেদন না করার পরও জীবনের প্রথম অপরাধী হিসেবে তাকে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। 

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার সুমনা শারমিন বলেন, তিনি হাসানুজ্জামানের বিষয়ে তিন মাস পরপর আদালতে রিপোর্ট জমা দেবেন।

(ঢাকাটাইমস/১৮নভেম্বর/পিএল)