যেসব ব্যায়ামে সুস্থ থাকে ফুসফুস

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০২০, ১৫:২৬ | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২০, ১৬:০২

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কীভাবে ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়িয়ে নেবেন সে সম্পর্কে জানা জরুরি। ফুসফুসের ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এ রকম কয়েকটি ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নিন।

 

চাপ কমায়

 

এই ব্যায়ামটি আপনার চাপ কমাবে, উদ্বেগ এবং ভয় দূর করে স্বস্তি দিবে। প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম হৃদস্পন্দনের হারকে কমিয়ে ফেলে। গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম নার্ভাস সিস্টেমকে উদ্দীপ্ত করে হৃদস্পন্দনকে স্বাভাবিক করে। তাছাড়া, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এই ব্যায়াম।

 

শরীরকে বিষমুক্ত করে

 

গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস রক্ত পরিষ্কার করে, শরীরে সব অঙ্গের রক্ত পাম্প করে এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়।

 

ফুসফুসের পেশী শক্ত করে

 

গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসের পেশী শক্ত করে এবং শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করে। আমাদের জীবনযাত্রার কারণে কম অক্সিজেন শ্বসন করি। গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস পর্যাপ্ত অক্সিজেন পেতে সহায়তা করে। অক্সিজেন ঘাটতির জন্য ক্লান্তি এবং অসতর্কতাও দায়ী। 

 

গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম

 

পা আড়াআড়ি করে চেয়ারে অথবা ফ্লোরে বসুন। হাঁটুর ওপর দুই হাত রাখুন। বুক ও পেট ভর্তি করে ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিন। তারপর ধীরে ধীরে শ্বাসত্যাগ করুন। এ রকম করে বার বার গভীরভাবে শ্বাস নিন এবং পাঁচ থেকে দশ সেকেন্ড পর ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। প্রতিদিন অন্তত দশ মিনিট ব্যায়ামটি চালিয়ে যান।

 

৪-৭-রিলাক্সিং ব্রিদিং

 

 পিঠ সোজা রেখে আরাম করে বসুন। ‘হুস’ আওয়াজ করে মুখ দিয়ে ফুসফুসের সবটুকু বাতাস বের করে দিন। এবার চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে নাক দিয়ে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। সেটা ভেতরে আটকে রাখুন, মনে মনে ৭ পর্যন্ত গুনুন। এবার ঠোঁট গোল করে আবার ‘হুস করে পুরোটা বাতাস বের করে দিন ৮ পর্যন্ত গুনতে গুনতে। কয়েক সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পর পর চারবার এভাবে শ্বাস নিন। এই ব্যায়াম দিনে দুবার করা ভালো। এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক চাপ কমে। ঘুমও ভালো হয়।

 

শ্বাস গোনার ব্যায়াম

 

এই ব্যায়ামে ক্রমান্বয়ে প্রশ্বাসের সময় ধীর করে আনতে হয়। মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। চোখ বন্ধ করে পর পর কয়েকবার গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ধীরে ধীরে এর গতি কমে আসবে। প্রথমে প্রশ্বাস ছাড়ার সময় এক গুনবেন, তার পরের বার দুই, এভাবে পাঁচ পর্যন্ত। তারপর আবার নতুন করে এক দিয়ে শুরু করুন। এই ব্যায়ামটি দিনে ১০ মিনিট করবেন। এটি এক ধরনের মেডিটেশন বা ধ্যান। এটি মস্তিষ্ককে সজাগ করে ও মনঃসংযোগ বাড়ায়। মানসিক চাপ কমায়।

 

বেলো ব্রিদিং

 

মুখ বন্ধ করে চটপট নাক দিয়ে ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ব্যায়াম এটি। প্রতি সেকেন্ডে তিনবার শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার চেষ্টা করুন। শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার সময়টি সমান থাকবে। এতে বুকের ও বক্ষচ্ছদার মাংসপেশির দ্রুত ব্যায়াম হবে। তারপর কিছুক্ষণ স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ১৫ সেকেন্ডের বেশি নয়। এটি যোগব্যায়ামের একটি কৌশল। এতে ক্লান্তি ঝরে যায় এবং কর্মস্পৃহা ও উদ্যম বাড়ে।

ব্রিটিশ লাং ফাউন্ডেশনের পরামর্শ হলো, গভীর শ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুস থেকে শ্লেষ্মা দূর করে অধিক বায়ু সঞ্চালনে সাহায্য করতে পারে। এ ব্যায়াম করতে ৫-১০ বার গভীর শ্বাস নিতে হবে। তারপর কয়েক বার জোরে কাশি দিয়ে রিপিট করতে হবে। এতে ফুসফুস আরও শক্তিশালী হবে।

ফুসফুসের সক্ষমতা বাড়াতে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার পর খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠলে হাঁটা শুরু করে শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পরবর্তীতে হাঁটার গতি আরো বাড়াতে হবে।

এসব ব্যায়াম স্বল্পমেয়াদী কোন ব্যায়াম নয়। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যায়ামের চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।

 

যেসব ক্ষেত্রে এসব ব্যায়াম করা যাবে না

 

যদিও ফুসফুসের সক্ষমতা বাড়াতে চিকিৎসকরা ব্যায়ামের পরামর্শ দিচ্ছেন, কিন্তু কারো যদি শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা কাশি থাকে, তখন এই ধরণের ব্যায়াম না করাই ভালো।

যাদের হৃদরোগ বা ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগ রয়েছে, তারা ব্যায়ামের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

(ঢাকাটাইমস/১৮ নভেম্বর/আরজেড/এজেড)