কথা দিয়েই কথার জবাব দিন

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০২০, ১৫:৫৪

মজিব রহমান

কথার বিরুদ্ধে অনেকেই চাপাতি দিয়ে জবাব দিতে পছন্দ করেন। সাকিব আল হাসানের পূজা উদ্বোধন/পরিদর্শন একেবারেই তার ব্যক্তিগত বিষয়। হিন্দুত্ববাদী প্রতিক্রিয়াশীলরাও বলতে পারতো, কেন একজন মুসলিম ক্রিকেটার দিয়ে উদ্বোধন করানো হলো? তারাও আপত্তি করতে পারতো! একজন সেলিব্রেটির ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ থাকে না, থাকে ফেসভ্যালু। যে ধর্মান্ধ ধর্মীয় অজুহাতে তাকে কোপাতে চেয়েছে সে আবার মাদকাসক্ত বলে পত্রিকার রিপোর্টে দেখলাম। নিজের মাদকাসক্তিতে আপত্তি নেই অথচ একজন সেলিব্রেটি কি উদ্বোধন করলো তা নিয়ে আপত্তি। এটাই প্রতিক্রিয়াশীলতা।

বাক-স্বাধীনতা থাকা উচিত সীমাহীন। বাজে ও মিথ্যা কথা যারা বলবে তারা সমাজেই মিথ্যাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পরিত্যাজ্য হবে। একসময়ই কেউই চাইবে না নিজের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে। আমাদের সংবিধানে বাক-স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে আবার আইন করেই অনেক স্বাধীনতা বন্ধ করে দেয়া আছে। অনুভূতির আঘাতের অজুহাত বাক-স্বাধীনতা হরণ ছাড়া কিছুই না।

আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার দেয়ার জন্য আমার এক কট্টর মৌলবাদী আত্মীয় একটি ফেসবুক ফেক আইডি খুলেছিলেন। তিনি কদিন অনবরত মিথ্যা প্রচার দিতে থাকলেন আমার সম্পর্কে। বিষয়টি আমার নজরে আসলে আমি তার পরিবারকে অবহিত করি। তার পরিবার তাকে কুলাঙ্গার আখ্যা দেয়। সে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য ভয়াবহভাবে অনবরত মিথ্যাচার করেছিল। কিন্তু আমার বন্ধু-স্বজন, এলাকার মানুষ আমাকে জানে, চিনে। আমার কোনো ক্ষতি হয়েছে বলে মনে হয়নি। এছাড়া স্থানীয় কতিপয় দুষ্কৃতকারী-প্রতারক অনবরত আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা পোস্ট দেয়। অধিকাংশই আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড নন এবং আমার নজরেও আসে না। তাদের অনবরত মিথ্যা প্রচারণায় আমার কোনো ক্ষতি হয়নি। ওদের অনেকেই প্রতারক/মিথ্যাবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আমি ওদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করিনি, খুব কমই জবাব দিয়েছি। জানতাম মিথ্যাবাদীরা সমাজে ধিকৃত হয়, হয়েছেও তাই।

কোনো লেখকের লেখাকে তুলোধোনা করলে কি হয়? তার লেখার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়ে। মানুষ পড়ে দেখতে চায়-কি কারণে এতো বিরোধিতা। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার হলেও তা সহজেই মানুষ বুঝে ফেলে। প্রতিবাদ হতে থাকে। এতে যখন সত্যটা বেরিয়ে আসে তখন ওই ব্যক্তি সম্পর্কেও সমাজ আরও শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠে। তিনি পরীক্ষিত হন। কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাও কাজে আসে না। মিডিয়া/প্রশাসন কোনো না কোনো ভাবে প্রকাশ করে যে অভিযোগ ভিত্তিহীন। তখন ওই রাজনৈতিক দলটি উল্টো লাভবান হয়, তাদরে প্রতি সহানুভূতি ও জনপ্রিয়তা বাড়ে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচন নিয়ে অনবরত মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। এতে তার সমর্থন দিন দিন কমতে থাকবে। তার দলও ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থাকে তিনি মিথ্যা বলে বিতর্কিত করতে পারেননি, পারবেনও না। সক্রেটিস, ব্রুনো, গ্যালিলিওর বিরুদ্ধে কত শত শত মিথ্যাচার করা হয়েছে। সক্রেটিসকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, ব্রুনোকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, গ্যালিলিওকেও অসম্মান করে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছে। তাতে মৌলবাদী-মূর্খদের আখেরে রক্ষা হয়নি। মিথ্যাবাদী প্রতারকরাই শেষ পর্যন্ত ঘৃণিত হয়েছেন। ইউরোপের অন্ধকার যুগে মৌলবাদী খ্রিষ্টানরা অতি বাড়াবাড়ি করেছিল ধর্ম নিয়ে। বহু মানুষকে তারা কতল করেছিল। সেই অতিরিক্ত চাপেই আজ আধুনিক-বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের বর্বরতাকে। যেকোনো ধর্মের জন্যই এটা সত্য। যদি মানুষের ওপর ধর্ম প্রয়োগ করে অনাচার করা হয় তার পরিণতি ভালো হয় না। আজ না হলেও কাল মানুষ প্রত্যাখ্যান করবে- বর্বরতাকে, মিথ্যাচারকে, প্রতারণাকে। এতে ধর্মের বিপুল ক্ষতিই হয়। যদি কথার জবাব কথা দিয়েই দেয়া যায় এবং সত্যটা প্রতিষ্ঠা করা যায় তবেই টিকে থাকা যাবে, লাভবান হওয়া যাবে।

একটা মিথ্যা বললে, সত্য তথ্য দিয়েই তার জবাব দিতে হবে। চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে সাকিবকে মেরে ফেললেও কোনো লাভ হবে না, তাতে মানুষের ঘৃণাই জুটবে। সাকিবের কন্যাকে নিয়েও কদিন আগে একটি বাজে মন্তব্য হয়েছিল। মানুষই ওই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে প্রতিক্রিয়াশীলদের থামিয়ে দিয়েছিল। যদি সত্য থাকে, অন্তঃসার থাকে তবে ভয় কিসের?

লেখক: সভাপতি, বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ

ঢাকাটাইমস/১৮নভেম্বর/এসকেএস