ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন

অনির্বাচিত কমিটি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর ২০২০, ২০:৫৯

নির্বাচিত কমিটিকে সরিয়ে গঠনতন্ত্রের বাইরে একদল শ্রমিক নেতার ‘অবৈধ কমিটি’ দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। গত আট বছর ধরে দফায় দফায় চিঠি দিয়ে সতর্ক করেও তাদেরকে নির্বাচনে আনতে পারেনি শ্রম অধিদপ্তর।

ফলে জেলার পরিবহন শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে এক ধরণের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। সমস্যা সমাধানে নির্বাচন দিয়ে বৈধ কমিটি করার দাবি জানালেও ‘অবৈধ নেতারা’ তাতে কর্ণপাত করছেন না বলে অভিযোগ পরিবহন শ্রমিকদের।

জানা যায়, নির্বাচন করে বৈধ কমিটির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে সবশেষ গত ২৪ সেপ্টেম্বর বর্তমান কমিটিকে চিঠি দেন শ্রম দপ্তরের রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়নের শ্রীমঙ্গলের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলাম। চিঠিটির অনুলিপি ইউনিয়নের আহ্বায়ক, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকেও দেয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক কমিটি কর্তৃক একটি মনোনীত (সিলেকটেড) কমিটি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু গঠনতন্ত্র ২৪ নং ধারায় সদস্যদের গোপন ব্যালটে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন করার কথা থাকলেও জমা দেয়া কমিটি গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই এটি অনুমোদন করা গেল না।

শ্রম অধিদপ্তরের চিঠিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর ১৬৯ (১) আমলে এনে ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র অনুসরণপূর্বক পত্র প্রাপ্তি থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে গোপন ব্যালটে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য আপনাদের নির্দেশ দেওয়া হলো। নির্বাচন সকল বিষয় দপ্তরকে অবিহিত করতে হবে এবং এই আদেশ লঙ্ঘন করলে ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে দানা-জাকির পরিষদ ও সেলিম-আনিস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে সেই নির্বাচনে সভাপদি পদে মনছুর আলী দানা মিয়া ও আনিস চৌধুরী বিজয়ী হয়। পরে একটি অংশ ওই কমিটির বিরুদ্ধে অনাস্থা জানায়। ২০১৬ সালে আবারও নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হলে হাইকোর্টের আদেশে তা স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে আর কাজ করতে পারছেন না নির্বাচিত কমিটি। প্রায় আট বছর অবৈধভাবে চলছে শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকলাপ।

শ্রম অধিদপ্তরের চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে জেলা পরিবহন সভাপতি সেলিম মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কোনো নির্বাচন হয়নি। সাধারণ সভায় কমিটি হয়েছে। এর বেশি আমি কিছু জানি না। কমিটির বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক হানিফ মিয়া ও যুগ্ম আহ্বায়ক নিয়ামত খান ভালো বলতে পারবেন।’

এবিষয়ে হানিফ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর কমিটির মেয়াদ শেষ হলে ১২ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে যেখানে আমাকে আহ্বায়ক করা হয়। পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করে নতুন কমিটির হাতে ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলে। পরে আমরা দুই পক্ষের সমন্বয়ে সাধারণ সভা করে কমিটি করে ফেলি।’ তবে নির্বাচন ছাড়া কমিটির বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

নতুন কমিটির কাছে কিভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে জানতে চাইলে যুগ্ম আহ্বায়ক নিয়ামত খান বলেন, ‘২০১৬ সালে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। পরে কুমিল্লায় এক বৈঠকে শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সেক্রেটারি আনিস চৌধুরী স্থানীয় এমপিকে নিয়ে অশালীন ভাষায় বক্তব্য দেন। পরে সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের নির্দেশনায় সাধারণ সভা করে কমিটি করা হয়।

শ্রম দপ্তরের চিঠিতে ওই কমিটিকে অবৈধ করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এডি (উপ-পরিচালক) নাহিদ একজন অসাধু লোক। তাকে টাকা দিলে অবৈধ কমিটিকেই বৈধ বলে দিবেন।’ চাইলেই নতুন কমিটি করা যাবে না মন্তব্য করে এই শ্রমিক নেতা বলেন, ‘এই কমিটি আমরা দিছি, এই কমিটিই থাকবে। সাহস থাকলে তাকে বলেন নির্বাচন দিতে।’

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের বিষয়ে জানি। তবে নির্বাচন না দিয়ে কমিটি করার কথা বলেছি এমন অভিযোগ মিথ্যা। করোনার জন্য নির্বাচন করতে পারেনি। তবে খুব শিগগিরই নির্বাচন হবে। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় অবগত আছেন।’

শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যেহেতু আমার দপ্তর থেকে এই কমিটিকে অনুমোদন দেয়া হয়নি। তাই আমার দপ্তরের কাছে এটা সবসময়ই অবৈধ কমিটি। আমি এই কমিটিকে এরইমধ্যে দুইটি চিঠি দিয়েছি। তারা যেন নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি করে সেকথা বলা হয়েছে চিঠিতে।’

শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক নাহিদুল জানান, ২০১৬ সালের যে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি ছিলো, তাদেরকে নির্বাচন না করলে ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের জন্য শ্রম আদালতে মামলা করা হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। গঠনতন্ত্র মেনে নির্বাচন ব্যতীত কোনো কমিটি গ্রহণযোগ্য নয়।

জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের চলমান জটিলতার বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খাঁন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের বিষয়ে জানি। তবে এই বিষয়ে আমরা প্রশাসনিক সহায়তা করা ছাড়া আমাদের কিছু করার এখতিয়ার নেই। এটা শ্রম দপ্তরের বিষয়।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের কাছেও শ্রম দপ্তরের চিঠিটি পাঠানো হয়। এই বিষয়ে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই চিঠিটি আমাদের কাছে আসার কেনো কারণও নেই। তাছাড়া নির্বাচন হলে জেলা পুলিশ সব ধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে।’

জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের একাধিকবারের সভাপতি মনছুর আলী দানা মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুসারে কোনো সাধারণ সভায় কমিটি হওয়ার বিধান নাই। নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি হতে হবে। আমি নিজেও সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছি।’

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নিয়ামত খানের এক বক্তব্যের প্রসঙ্গে মনছুর আলী দানা বলেন, ‘তিনি কি করে যুগ্ম আহ্বায়ক হন? তিনি তো আমার সংগঠনের সদ্যস্যই না। সাধারণ সভায় ৪৫ দিনের জন্য আহ্বায়ক কমিটি হতে পারে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হতে অবশ্যই নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচন না হলে সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে। সংগঠন বাঁচাতে নির্বাচন জরুরি।’

(ঢাকাটাইমস/১৮নভেম্বর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :