নির্দোষ দাবি মজনুর, আদালতে চিৎকার-চেঁচামেচি
রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় একমাত্র আসামি মজনুকে যাবজ্জীন কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭। বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণার দিনে দুপুর আড়াইটার দিকে মজনুকে কাঠগোড়ায় তোলার জন্য নেয়া হয়। এসময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে অস্বাভাবিক আচরণ করেন মজনু। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকেন পুলিশ ও আইনজীবীদের। শুরু করেন চিৎকার-চেঁচামেচি। ধর্ষণের ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত বলে দাবি করেন তিনি।
চিৎকার করে মজনু বলেন, ‘আমি ধর্ষণ করি নাই, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি বাড়ি যাব। আমাকে ছেড়ে না দিলে লাফ দিয়ে মরে যাব।’
মজনু বলেন, ‘আমি ধর্ষণ করি নাই, ধর্ষণ করছে চারজন মিলে। কিন্তু পুলিশ তাদের ধরছে না। আমি গরিব দেখে আমাকে ধরেছে। আমার নাম মজনু পাগল, আমার গায়ে শক্তি নাই। আমাকে ছেড়ে দেন।’
পরে ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার মজনুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
১৩ কার্যদিবসে মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। গত ১২ নভেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১৯ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। মামলার ২৪ সাক্ষীর মধ্যে ২০ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নামেন ওই ঢাবি ছাত্রী। এরপর অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তার মুখ চেপে ধরে সড়কের পেছনে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের একপর্যায়ে জ্ঞান হারান ওই ছাত্রী। ডাক্তারি পরীক্ষায় নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায়।
পরদিন সকালে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে ওই ছাত্রীর বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি উত্তর)। ৮ জানুয়ারি মজনুকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ৯ জানুয়ারি সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে মজনুকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশকে অনুমতি দেন আদালত। ১৬ জানুয়ারি ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন অভিযুক্ত। পরে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।
২৬ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার ভার্চুয়াল আদালতে মজনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
এদিকে মজনুর যাবজ্জীবনের রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আফরোজা ফারহানা আহম্মেদ অরেঞ্জ। তিনি বলেন, আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি।
তবে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে মজনুর আইনজীবী (সরকার থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত) রবিউল ইসলাম বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাবো।
(ঢাকাটাইমস/১৯নভেম্বর/ইএস/জেবি)