অণুকাব্য: পঞ্চপর্ণ: উদ্ধৃতি (পর্ব এক)
প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০২০, ১৬:৪৮
১।
বাইরের আগুন নেভানো না গেলে; যতো দূরে পারো পালাবে,
ভেতরের আগুন সাধ্য সাধনে শুভ ইন্ধনে জ্বালাবে।
২।
বাঁধনহারাকে বাঁধতে হলে সর্বহারাকে লাগে,
সকল বাঁধন টুটলেই মন বাঁধা পড়ে অনুরাগে।
৩।
জীবন যেখানে যেমন আমিও তেমন,
সংসার বিরাগী কভু; কভু মহাজন।
৪।
কোন তীরে ভিড়ে তরী কোন্ ঘাট ভাংগে,
মনমাঝি সে-খবর জানে সবার আগে।
৫।
সুখ খুঁজে যতো কাঁদে উচাটন মন,
দু:খ এসে বাঁধে আরো শক্ত বাঁধন।
৬।
বিপন্ন দেশ আর বিষন্ন মন,
এই নিয়ে বেঁচে আছি কষ্টে এখন।
৭।
ঢেউ ভাংগে,কূল ভাংগে,ভাংগে কতো মন,
সাপ-লুডু খেলা খেলে; নদী ও জীবন।
৮।
বিধাতা দিয়েছে সবুজ শ্যামলিমা বন,
মানুষ গড়ছে যত্নে বাগিচা কানন।
স্রষ্টার নিখুঁত সৃষ্টি চিরায়ত খাঁটি,
মানুষেরই মমতায় হয় পরিপাটি।
৯।
কিছুই হলো না যার— না ঘর, না বাড়ি,
প্রাণের পুকুর থেকে মাছ গেছে চুরি।
তবু সে আশায় থাকে ফল যদি ফলে,
দিন গুনে গুনে দিন যায় অস্তাচলে।
১০।
হাসতে তো পারি বাঁধভাঙ্গা হাসি মিলনের মোহনায়;
জানি যদি কভু কাঁদতে হবেনা বিচ্ছেদ বেদনায়।
হাসতে তো পারি বিজয়ের হাসি, গ্যারান্টি যদি মিলে;
কান্নারা এসে ভিড় জমাবে না পথান্ত মঞ্জিলে।
১১।
মানব সেবায় প্রত্যয়ী এক ব্যাংক আছে সারা বিশ্বের,
সোনালী স্বপ্ন সঞ্চিত যেথা সব বঞ্চিত-নি:স্বের।
দরিদ্রতার চির-অবসানে
আছে নিবেদিত জনকল্যাণে
সঞ্চার করে ম্রিয়মান প্রাণে নতুন দিনের দৃশ্যের—
বিশ্বব্যাংকই মূল রূপকার ‘দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বের’।
১২।
মানুষের সুখে মানুষ যদি হতো সখা,
মানুষের দু:খে মানুষ হতো যদি দোসর;
পৃথিবীতে কতো সুখে বাঁধা যেতো ঘর।
১৩।
ধর্মের ভেদাভেদ না করে হিসাব,
রাহুলের সাথে হয় রাহেলার ভাব।
রহিম আর রমা মিলে
মন দিলে মন নিলে
এ যুগেও তেড়ে আসে শাস্ত্র-কিতাব।
১৪।
নগর-জীবন দুর্বিষহ মশার অনাচারে,
মারবো কত; যতোই মারি তার শতগুণ বাড়ে।
করতে নিপাত মশার ঘাঁটি
লাগবে বুঝি জাদুর কাঠি
হাতির সমান কর্পোরেশন মশার কাছে হারে-
তবুও কেনো প্রতি বছর করের বোঁঝা বাড়ে?
প্রশ্ন আছে ; জবাব দেবার দায় নেবেন না কেউ,
নগরসেবার কিস্তি ডুবায় উন্নয়নের ঢেউ।
১৫।
পথে ঘাটে পড়ে মরে নির্জলা সত্য,
তার টুঁটি চেপে ধরে একচোখা দৈত্য।
অকাজের যারা ধাঁড়ি
কাজে তারা কারবারি
তারা আজ কাঁড়ি কাঁড়ি জমা করে বিত্ত-
তাদের হাতে সমাজের সব আধিপত্য ।
১৬।
ফোরাতের কূলে নয় বিষাদের কারবালা প্রান্তর,
কারবালা আজ সব মোমেনের শোকার্ত অন্তর।
১৭।
একে একে মিলে হয় একতা,
জনে জনে মিলে হয় জনতা।
একতার পতাকায় রক্তিম আখরে
লিখা থাকে মুক্তির বারতা।
১৮।
একটা আকাশ অনেক তারা,একটা বাগান অনেক ফুল;
একটা হৃদয় অনেক প্রেম, অনেক শাখা একটা মূল।
একটা মুখ অনেক ভাষা,একটা বুক অনেক আশা,
একটি নদী দুটি কুল,একটা জীবন অনেক ভুল।
১৯।
যে বোটায় ফোটে ফুল; ফলও সে বোটায়,
মন আর জঠরের খোরাক জোটায়।
২০।
জীবন মন্থন করে যতো নেই রূপ রস সুধা,
নিত্যই ততো বাড়ে সে সবের অনিবার ক্ষুধা।
২১।
মানুষের আয়ু আর কলমের কালি,
একদিন ফুরাবেই যতো মারো তালি।
যতো কাজ যতো লিখা
ক্ষণিকেরই ক্ষীণ শিখা,
সবই গ্রাস করে নেবে চির চোরাবালি।
২২।
লাভ কিছু নেই আমার রোদন শুনে,
আমার বুকের হাড়গুলো নিন গুনে।
শরীরতো নয়; হাড়ের খাঁচা,
এই বাঁচা যে ক্যামন বাঁচা!
যায়না বলা কথার প্যাঁচাল বুনে।
২৩।
সূতোর টানে শোলার পুতুল নাচবি কতো ওরে!
নাচবি যতো মরবি ততো হাজার বছর ধরে।
শক্তি শেলে বীরের মতো
নে বুঝে নে পাওনা যতো;
সূতো ছিঁড়ে যা চলে যা, ঘুরিস না আর ঘোরে,
বাঁচতে হলে লড়তে হবে মুক্তি পাবি মরে।
২৪।
কিছুই হলো না যার— না ঘর, না বাড়ি,
প্রাণের পুকুর থেকে মাছ গেছে চুরি।
তবু সে আশায় থাকে ফল যদি ফলে,
দিন গুনে গুনে দিন যায় অস্তাচলে।
২৫।
গাছ কেটে মন দিলে আগাছার যতনে,
সে বাগিচা ভরে যায় ‘জঞ্জাল-রতনে’।
আগাছার অনাচার রস খেয়ে বাগিচার;
মন দেয় কর্তার নিদারুন পতনে।
২৬।
সময়ই বাজায় কালোর দমের বারোটা,
ঘড়ির কাঁটার সাথে তার দম আঁটা।
আঁধার যতোই লুকায় রাতে তার গা টা,
আলোর ছুরিতে তার গলা যায় কাটা।
২৭।
সুখের দিনের সখা শুধু যারা, তারাতো বন্ধু নয়,
দু:খের দিনের দোসর হলেই; আসল বন্ধু হয়।
যাদের বিপদে ছিলো না তোমার দুর্ভাবনার শেষ,
অথচ তোমার মহাদুর্যোগে তারাই নিরুদ্দেশ।
বিপদের দিনে যে বন্ধুদের মেলেনি টিকির সন্ধান,
তাদেরকে আজো বন্ধু ভাবাটা মানবতার অপমান।
২৮।
পাহাড়-প্রমাণ খাদ্য আছে যার গোলাতে বোঝাই,
ক্ষুধার জ্বালা কেমন জ্বালা ক্যামনে তারে বুঝাই!
২৯।
বিত্ত বেসাত নাই বা থাকুক নাই বা থাকুক অর্থ ধন,
মাটির মানুষ মাটির বুকেই গড়ছে মাটির সিংহাসন।
৩০।
কানের মতোন এতো দুর্ভাগা কোনো অঙ্গই নয়,
কতো বাচালতা, বাজে বক্তৃতা নীরবে সইতে হয়।
এদের সহ্যগুণ দেখে ভাবি
কোন্ দিন ওরা তুলবে সে দাবি;
আর ঢোকাবো না কানের গহীনে বক্তৃতা জ্বালাময়-
করবো না আর শ্রবণ শক্তির অকারণ অপচয়।
৩১।
কবিতার ভাত নাই;কলকব্জার ভাত,
ক্ষতি নাই হয় যদি কাব্য নিপাত।
তাই মেনে চাও যদি প্রিতমের হাত;
সাথে করে নিয়ে যেও কলের করাত।
সে করাতে প্রেম যদি বরাতে না জোটে,
কবিতার দুই কলি আওড়াবে ঠোঁটে।
৩২।
জীবনকে দিয়েছো তুমি নিয়মের যতোটা শাসন,
জীবনও ততোটা করে জীবনের কালিমা শোষণ।
৩৩।
কোন পথে যেতে চান?
ঘুরে ফিরে শেষে,সব পথই গেছে
চিতা বা গোরস্তান ।
কোন দেশে যেতে চান?
সব দেশ ঘুরে, শেষ দেশই হলো
কবর কিংবা শ্মশান ।