শতভাগ ‘স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট’ শুধু কাগজে-কলমেই

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০২০, ১৩:০৪ | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২০, ১৪:৩৩

নূরে আলম সিদ্দিকী, বিরামপুর (দিনাজপুর)

২০১৪ সালের পর থেকে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় জনস্বাস্থ্য জরিপ করা হয়নি, নেই কোনো হালনাগাদ তথ্য। সাত বছর আগে ইউনিয়নকে শতভাগ ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে মিল নেই। উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় জনসংখ্যার তুলনায় স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারকারী শতকরা ৯৫ শতাংশের কম নয়।

অন্যদিকে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় নির্মিত স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটগুলোর বেশির ভাগ সময় তালাবদ্ধ থাকে। এতে করে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন।

বিরামপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এলাকার সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য পৌরশহরের মাছবাজারে একটি, ২ নম্বর কাটলা ইউনিয়নে কাটলা হাইস্কুলে একটি এবং দিওড় ইউনিয়নের বেপারিটোলা হাইস্কুলের একটিসহ মোট তিনটি স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়। টয়লেটগুলো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এছাড়া উপজেলা পরিষদের মধ্যে সমাজসেবা অফিসের পাশে নির্মিত গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পৌরশহরের পাবলিক টয়লেটটি তুলনামূলক স্বাস্থ্যসম্মত থাকলেও বাকি টয়লেট দুটোর অবস্থা অত্যন্ত বেহাল। এগুলোর কোনোটিতেই সাবানের ব্যবস্থা নেই। টয়লেটের প্যানগুলো ময়লার ভাগাড় হয়েছে। টয়লেটগুলো মশামাছির আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।

এছাড়াও উপজেলা পরিষদের ভেতর সমাজসেবা কার্যালয়ের পাশে নির্মিত গণপূর্ত দপ্তরের টয়লেটটির বাইরের দেয়াল ও ছাদে বড় মাপের ঘাসে পরিপূর্ণ। ভিতরের অবস্থা আরও বেহাল। নেই পানির ব্যবস্থা, প্যানগুলোর চারপাশ বিড়ি-সিগারেটের আবর্জনা, এনার্জি ড্রিংকসের খালি বোতল। ভেতরে মাছি ভোঁ-ভোঁ করছে। টয়লেটটির আশপাশ ঝোপঝাড় থাকায় সেটি মশার অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে।

বুধবার দুপুরে উপজেলা চত্বরে ট্রেজারি অফিসে জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা আসমা বেওয়া বলেন, সকালে উপজেলা রেজিস্ট্রি অফিসে জমি বিক্রি করতে এসেছি। দুপুরে টয়লেট চাপলে অনেকটা বিপদে পড়ি। বাধ্য হয়ে সমাজসেবা অফিসে গিয়ে টয়লেটের কাজ সারতে হলো।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২০১৪ সালের এক জরিপ অনুযায়ী উপজেলায় সাতটি ইউনিয়নে ও একটি পৌরসভার মধ্যে মোট পরিবার সংখ্যা রয়েছে ৪২ হাজার ১৪০টি। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করেন ৪১ হাজার ১৪৮টি পরিবার। শতভাগ টয়লেট ব্যবহার করা ইউনিয়নগুলো হলো- ১ নম্বর মুকুন্দপুর, ২ নম্বর কাটলা এবং ৭ নম্বর পলিপ্রায়াগপুর। এছাড়া খানপুর ৯৮ দশমিক ৮১ শতাংশ, দিওড় ৯৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, বিনাইল ৯৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ, জোতবানি ৯৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং পৌরসভায় ৯৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। এতে পুরো উপজেলায় ৯৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ  মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করছেন।

২ নম্বর কাটলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, ২০১১ সালে কাটলা ইউনিয়নকে শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহার করা এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বর্তমানে সেই তথ্যের সঙ্গে  অনেকটাই গরমিল রয়েছে। এখনো প্রায় ১৫০টির বেশি পরিবার স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারের আওতায় আসেনি।

উপজেলা চেয়ারম্যান খায়রুল আলম রাজু বলেন, উপজেলায় ২০১৪ সালের পর থেকে পাবলিক টয়লেটের বিষয়ে নতুন করে আর জরিপ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে এই অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারগুলোতে  স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক কম। উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পল্লীগুলোতে কতটি পরিবার আছে এবং তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহারের উপর জরিপ কাজ চলছে।

তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের পাশের নির্মিত টয়লেটটি গণপূর্ত  বিভাগের হওয়ায় আমরা সেখানে কিছু করতে পারছি না। তাছাড়া উপজেলায় গণপূর্ত দপ্তরের অফিস না থাকার কারণে টয়লেটটির বিষয়ে চিঠি দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী  প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, উপজেলায় ২০০৩ সালে প্রথম স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারের উপর একটি জরিপ করা হয়। পরে ২০১৪ সালে আবারো জরিপ হয়। এছাড়াও ২০১১ সালে আদমশুমারি অনুযায়ী ওই পরিবারগুলো নির্ধারণ করা হয়। তবে যেসব পরিবার এখনো স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করার সুবিধা পায়নি তাদেরকে পর্যায়ক্রমে সরকারি সহযোগিতার আওতায় আনার কাজ অব্যাহত রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২১নভেম্বর/কেএম)