আমাদের মাস্কও কি পরিয়ে দেবে সরকার?

বোরহান উদ্দিন
 | প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর ২০২০, ২২:০৩

একটা সময় কালেভদ্রে মানুষের মুখে মাস্ক নজরে পড়ত। ধুলাবালুর হাত থেকে বাঁচতে অনেকে মাস্ক পরতেন। কিন্তু বিশ্বজুড়ে তোলপাড় করে দেয়া করোনাভাইরাসের ফলে এখন মানুষের হাতে হাতে গুরুত্বপূর্ণ এই সুরক্ষা সামগ্রীটি। চিকিৎসকরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি ঘরের বাইরে মাস্ক পরলে সংক্রমণের হাত থেকে নিরাপদে থাকার সুযোগ বেশি। তাই অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের সরকারও নাগরিকদের এই ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষায় মাস্ক ব্যবহারে জোর দিচ্ছে। মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে নানা প্রচার-প্রচারণা, বিনামূল্যে মাস্ক দেয়া হচ্ছে। এত কিছুর পরেও মাস্ক ছাড়াই যারা বাইরে বের হচ্ছেন তাদের অনেককে পড়তে হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মুখে। গুনতে হচ্ছে জরিমানা, কেউ যাচ্ছেন জেলে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই তালিকায় ২৪ নম্বরে থাকা বাংলাদেশে শনিবার পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৬ হাজার ৩৫০জন। মোট আক্রান্ত সংখ্যা তিন লাখ ৬০ হাজার ৩৫২ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসছে শীতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ইতিমধ্যে সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে অন্তত মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে চেষ্টা করছে সরকার। সর্বত্র ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন হলো- নিজের এবং পরিবার বা আশপাশের মানুষদের সুরক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার অতি জরুরি। সেখানে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে কেন এত আয়োজন করতে হবে? এ প্রসঙ্গে পরে আসছি।

তার আগে গত কয়েকদিনের মাস্ক ছাড়া ও থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে রাখা কয়েকজন বাসযাত্রীর সঙ্গে আলাপের কথা বলছি। বুধবার ঢাকার আজমেরী পরিবহণে মাস্ক ছাড়া উঠলেন এক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জানতে চাইলাম মাস্ক কোথায়? বললেন- আছে পকেটে।

বৃহস্পতিবার সকালের আরেকটি ঘটনা। সাভার পরিবহনে শাহবাগ আসার সময় তাঁতীবাজার থেকে বাসে উঠলেন একজন বয়স্ক পুরুষ। মুখে পান চিবুতে চিবুতে গিয়ে পেছনের দিকে বসলেন। তিনি অবশ্য মাস্কসহই ছিলেন। কিন্তু সেটা ঝুলছিলো থুতনিতে। খানিক বাদে কয়েকটা কাশি দিলেন মুখ খোলা রেখে। কিছুটা রেগে গিয়ে বললাম- মুখ খোলা রেখে মাস্ক পরছেন আবার কাশি দিচ্ছেন এটা কেমন কথা? বাস থেকে নেমে যান। পরে অবশ্য মাস্কটি যথাস্থানে পরে চুপচাপ বসে থাকলেন তিনি।

এবার উদাসীন এক পরিবারের অবস্থা দেখুন। শুক্রবার ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ভিক্টর পরিবহণে বাড্ডা যাচ্ছিলেন নাম না জানা এক আন্টি। কারো মুখে মাস্ক নেই। বিনয়ের সঙ্গে বললাম আন্টি মাস্ক কোথায়? বললেন আছে ব্যাগে। বললাম- মাস্কটা তো মুখে পরার কথা, ব্যাগে রাখলে কেমনে হবে? কথা শুনে পাশ থেকে কানের হেডফোন খুলে তার ছেলে বললো কি সমস্যা ভাইয়া? বললাম তোমাদের মাস্ক কই? বললো আছে মায়ের কাছে। পরে ব্যাগ থেকে তিনটা মাস্ক বের করে ছেলের হাতে দিয়ে বললেন তোমার আপু আর তুমি পরে নাও। আন্টি নিজের জন্য একটাও রাখলেন না। যাত্রার শেষ অবধি মাস্ক পরলেন না।

এখানেই শেষ নয়। মায়ের দেয়া মাস্ক ছেলেটি ঠিকই পরলো অথচ পাশে বসা বোনটাও পুরো পথ মাস্ক ছাড়াই গেলেন। মনে মনে ভাবলাম আন্টি এবং তার মেয়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হয়তো বেশি। তাই বলে লাভ নেই।

এমন অসংখ্য ঘটনা সবার চোখের সামনেই ঘটছে প্রতিদিন। মাস্ক পরার কথা বললে কেউ কেউ তেড়ে আসেন। কেউ আবার বাঁকা চোখে দেখেন। অনেকে আবার নানা যুক্তি দিয়ে নিজের অনিয়মটাকে বৈধ করার চেষ্টা করেন। যদিও ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে পরলে তখন চুপচাপ জরিমানা গুনতে হয় এসব অসচেতন মানুষের।

এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। হঠাৎ করে ছড়িয়ে পরা করোনা ভাইরাস নিয়ে শুরুতে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। অনেক অব্যবস্থাপনার কথাও স্পষ্ট। অনিয়মের খবরও গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে। কিছু কিছু ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। চিকিৎসায় অনেক ব্যাঘাতও ঘটেছে। তবে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় বাদ দিলে অব্যবস্থাপনা কিন্তু বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেও হয়েছে। সবকিছুর পরও এখন ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হতে চলছে। অনেক অজানা বিষয় নীতিনির্ধারকদের নজরে এসেছে।

কিন্তু নাগরিকদের মাস্ক ব্যবহারের কি হবে? করোনাকালে মানুষের আয় কমেছে। অন্য অনেক খরচ বেড়েছে। তাই বলে কি একটা মাস্ক কিনে পরার মতো অবস্থায় মানুষ নেই। অবশ্যই আছে। হয়তো কেউ বেশি টাকা দিয়ে মাস্ক পরছেন। কেউ কম টাকায় সার্জিক্যাল মাস্ক পরছেন। তাই বলে নানা অজুহাতে মাস্ক ব্যবহার না করা মানুষকে কি সরকারের পক্ষে ঘরে ঘরে দেখভাল করা সম্ভব? সরকারের কি সবার মুখে মুখে মাস্ক তুলে দেয়া সম্ভব?

সরকারের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে বিনামূল্যে মাস্ক দেয়ার পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব। সরকারের নানা দপ্তরের লোকজনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনকে এ কাজে যুক্ত করা যেতে পারে। যারা ঘুরে ঘুরে মানুষকে মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করবে। মুখে মাস্ক পরিয়ে দেবে। মাস্ক নিয়ে কি এর থেকে বেশি আশা করা ঠিক হবে?

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :