অণুকাব্য: পঞ্চপর্ণ: উদ্ধৃতি (পর্ব তিন)
৬২।
শুধু প্রেম নিয়ে লেখা হলো এতো
নাটক, নভেল, কবিতা, গান,
উপসংহারে পৌঁছেনি তবু প্রেমের উপাখ্যান।
যতো লেখে ততো পরিধিই বাড়ে
মেলেনা প্রেমের সীমা বা তল,
নতুন স্বরূপে প্রেমের প্রতিমা আনন্দে বিহ্বল।
প্রেমের ভুবন রহস্যে ঘেরা
কল্পনামেঘের চাদরে ঢাকা,
মানুষ চেনে না প্রেমের ম্যাপের অক্ষ-দ্রাঘিমা রেখা।
৬৩।
এখনো কোভিডের ভ্যাকসিন পেতে নাই শেষ সফলতা,
এখনো নানান সীমাবদ্ধতা,সীমাহীন ব্যর্থতা।
এতো গবেষণা,এতো আয়োজন
এতো ফর্মুলা,এতো রসায়ন
এতো টাকাকড়ি,তপ্ত ভাষণ;
সকলি কি রসিকতা;
নাকি এখানেও আছে রাজনীতি;
বৈশ্বিক কুটিলতা?
৬৪।
না-হয় তুমি শতায়ূই হলে;
এর বেশি কিছু নও,
তবু কেন এতো ধন জড়ো করে
ভারি বোঁঝা কাঁধে বও?
ভারবাহী পশু তার পিঠ ভরে
যতো মালামালই বয়,
সে প্রাণিও জানে একটি কণারও
সে নিজে মালিক নয়।
পশুরা যা বোঝে, বোঝে না মানুষ
বিষয় মায়ায় ক্লিব হয়ে;
মানুষ কেনো যে এতো নির্বোধ
সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে!
৬৫।
বিত্তের ভার যার যতো বেশি বাড়ে,
হিসেবের দায় ততো পড়ে তার ঘাড়ে।
বিত্ত-ধনের হিসাব তো হবে কাতরা কাতরা কণা,
হিসাবের খাতা এক কানাকড়ি কোনো দায় লুকাবে না।
যে বিত্ত শুধু নিজের আয়েশই বাড়ায়,
আখেরে সকলি নরক কুণ্ডে হারায়।
যেই ধন আসে মানুষের কল্যাণে,
সেই ধনই ধন্য হয় স্বর্গ সাধনে।
৬৬।
হিসেব নিকেষ করে যে প্রেমিক চায় কেবলই জিততে,
সেই প্রেম তবে খাঁটি নয় মোটেই; মিথ্যে-মিথ্যে-মিথ্যে।
৬৭।
চোখ যদি না-ই কাঁদে, চোখ থেকে লাভ কী!
বৃষ্টি না ঝরে যদি; মেঘ থেকে লাভ কী!
প্রেম যদি না-ই জাগে মন থেকে লাভ কী!
ভাষা যদি না-ই থাকে ভাব থেকে লাভ কী?
৬৮।
তুমি বললে,ভালোবাসা চেয়ো না
চাও যদি মুঠো ভরে একরাশ কবিতা দিতে পারি।
হায়রে পাষাণি! বুঝলে না কেনো
প্রেমহীন কবিতা; চৈত্র-চিতারই আহাজারি!
প্রেমে আছে কবিতার সব আয়োজন,
প্রেম ছাড়া কবির আর কী বা প্রয়োজন?
প্রেম হতে কবিতার স্বত:উৎসারণ,
প্রেম ছাড়া কবিতার অকাল মরণ।
৬৯।
যেখানেই অবারিত ভালোবাসার উর্বর
উদার জমিন,
সেখানেই কবিতার বীজ বোনে অজানিতে
মনের গহীন।
৭০।
মানুষ জানেনা ভেতরে ভেতরে সে কতো শক্তিমান,
অধমের পায়ে তাই মাথা কুঁটে মাগে সে কৃপার দান।
একদিন যদি ভেতরে সুপ্ত সম্ভাবনার খোঁজ মিলে,
সেই অভাজনও পৌঁছুতে পারে সার্থকতার মঞ্জিলে।
৭১।
জীবনকে যতো বাঁধো কঠিন বাঁধনে,
তোষামোদ যতো করো সাধ্য-সাধনে।
কষতে কষতে বাঁধ বাঁধো যতো কষে,
আখেরে সে কষা বাঁধ নিজে নিজে খষে।
জীবন থাকে না কারো অধীনতা বশে,
জীবনের প্রাণ বাঁচে জীবনেরই রসে।
যতোই তোয়াজ করো সে থাকে উদাস,
আত্মমগ্ন হয়ে করে বসবাস।
জীবনকে যতো করো বৃথা তোষামোদ,
মহাকাল স্রোতে সে তো ফাঁপা বুদ্বুদ।
ক্ষণিকের স্ফুলিঙ্গ কোথা উবে যায়!
জীবন পড়ে না বাঁধা কোন সংজ্ঞায়।
আনন্দ সৃষ্টি ও আনন্দ দানে,
জীবনের এন্তার আন্তর মানে।
৭২।
সুখ যে আসলে কী জানে কোন্ লোক?
তুমি যারে সুখ ভাব; তাই তবে সুখ।
৭৩।
লেখক পাঠক স্রোতাকে দরদে কাগজই তো দেয় অপার সুখ,
কতো কলমের খোঁচার আঘাতে বিক্ষত করে নিজের বুক।
কাগজের মতো সর্বংসহা আমরাও যদি হতে পারি,
সব যন্ত্রনা বুক পেতে সয়ে অন্যকে সুখ দিতে পারি।
৭৪।
যেই কবিতাটি লিখবো বলে নিত্যদিনই করি আঁকিবুকি,
সে অরূপ আজো মনের কোনেতে স্বরূপে দিলো না উঁকি।
অমর কাব্য লিখা তো হলো না আজো আছি তার খোঁজে,
বেলাও-যে প্রায় পড়ে এলো হায় চোখও যেনো এলো বুজে।
এ অতৃপ্তি নিয়ে একদিন অজানায় চলে গেলে পরে,
এ সব ছাই-ভষ্ম আঁধার ঘরের কোনে পড়ে রবে অনাদরে।
৭৫।
দর্পের সাথে আছে সর্পের মিল,
মানুষের দর্পেও সর্প শামিল।
দর্পের দাপট আর সর্পের বিষ,
পায় না-যে বিধাতার কৃপা বা আশিস।
তাই বলি, দর্প করো পরিহার,
বিনয়ের মাঝে কৃপা পাবে স্রষ্টার।
৭৬.
শুকনো গাঙে নৌকা বাওয়ার দুর্দিন এলো,
আমায় ফেলে মাল্লা মাঝি সব পালালো ।
চতুর্দিকে সর্বনাশা ঝড় তুফান,
আমার জীবন-নদে বিষম ভাটার টান।
বিরান মাঠে আমি একা সঙ্গিহীন,
কালের স্রোতে বিলীন হবার গুনছি দিন।
৭৭.
মা-গো তুমি নেই; দুনিয়া আমারে
পদে পদে করে সাংগেসার,
চাপরাশি হয়ে নিগ্রহে আছে
তোর সে আদুরে রাজকুমার।
দুয়ারে দুয়ারে আঘাত করে মা
বন্ধ পেয়েছি সব দুয়ার,
দুনিয়াতে যেনো তোর সোনাযাদু
সদরঘাটের পকেটমার।
৭৮.
অস্তাচলের প্রাঙ্গনে এসে উদয়াচলকে বলি,
সোনা আলো ঢেলে ভরে দাও আমার
জীবনের অলিগলি।
উদয়াচল-যে থাকে উদাসীন মুখে নেই কোনো বুলি,
শূন্যতা এসে হাহাকারে ভরে কর্মফলের ঝুলি।
৭৯.
জীবনের মানে যার কাছে শুধু ভোগ রূপ-রস-রঙ্গ,
বিষাদই কেবল সে-অভাজনের জীবনের অনুসঙ্গ ।
৮০.
কিছু কিছু চাওয়া চেয়েছি এতো-যে অতি ব্যগ্রতা ভরে,
ওটাকে না পেলে এ জীবনই বৃথা; নির্ঘাত যাবো মরে।
সে চাওয়া যখন পূর্ণ হয়েছে তৃপ্তিতে মন ভরেছি,
শেষে দেখলাম ওটাকে পেয়েই আখেরি মরণ মরেছি।
কতো চাওয়া আছে; অবুঝের মতো তুমিও চাইতে পারো,
কোন পাওয়াটাতে মঙ্গল সেটা; বিধাতার হাতে ছাড়ো।
৮১.
নি:স্বকে আর দেবে কে সুখ; সুখের ঘর ?
সুখও গেছে সরে, ঘরও গেছে দূর-দেশান্তর।
৮২.
ধন চায়, সুখ চায় অস্থির মন,
বোঝে-না যে স্বস্তি কী অমূল্য ধন,
সুখের চেয়েও স্বস্তির কতো প্রয়োজন!
৮৩.
হারাই হারাই ভয়ে থাকি সারাক্ষণ,
সে ভয়ের মাঝে প্রেম করছি লালন।
৮৪.
সাধ আর সাধ্যের সঙ্গতি সাধন,
এই কসরতে কাটে সারাটা জীবন।
যতো মোছে কপালের ঘামের নহর,
সাধ্য পায় না খুঁজে সাধের বহর।
কোনো পাওয়াতেই চাওয়া হয়না তো শেষ,
নিত্যই চাওয়াদের নব উণ্মেষ।
সাধের নেই যে শেষ, নেই যবনিকা,
তৃপ্তিহীনতা এর কপালেরই লিখা।
চাওয়ার বৃত্ত যদি স্বস্তিতে ভরে,
পরম প্রাপ্তি-সুখ জাগে অন্তরে।
সব সাধ যদিও-বা না হয় পূরণ,
স্বস্তিকে কায়মনে করো আবাহন।
স্বস্তির হাতে সঁপে দাও দেহ মন,
স্বস্তিই দিতে পারে সুস্থ জীবন।
৮৫.
আমি যারে বলি প্রেম; তুমি বলো উপহাস,
আমি বলি মধু-বাসর; তুমি বলো পরবাস।
৮৬
এতোই যদি বোঝো!
বেদ ত্রিপিটক বাইবেলে কি স্বর্গ-চাবি খোঁজো!
ভূখার মিছিল দেখলে কি আর চোখ দুটোকে বুজো!
এতোই যদি বোঝো!
দুর্গতদের ত্রাণ মেরে কি নিজের টেঁকে গুঁজো!
নিরন্নদের গ্রাস কেড়ে কি উদর ভরে ভোজো!
সত্যি যদি বোঝো!
বিত্ত দেবের ভজন ছেড়ে মানুষ দেবে পূজো;
নিউট্রনের বোমার ঘায়ে ক্ষুধার দানব যোঝো।
৮৭.
আমি মন চাহিলে বলো তুমি, “ মন কি তোমার কেনা ? ”
আমি ধন চাহিলে বলো তুমি, “ আছে আগের দেনা । ”
সুখ চাহিলে বল, “সুখ কী ছেলের হাতের মোয়া?”
প্রেম চাহিলে বল, “প্রেমের মর্ম গেছে খোয়া।”
এমনি করেই সকল চাওয়ার ঘটলো করুণদশা ,
তাইতো আমার চাওয়ার খাতে নিত্য মাজা-ঘষা ।
৮৮.
মৃত্যুহীন প্রাণ যে কতো মহামূল্যবান,
শহীদদের মর্যাদা থেকে মিলে সে প্রমাণ।
৮৯.
ফুল ছিঁড়ো না;
বিচ্ছেদে কাঁদবে বোঁটা,
ব্যর্থ করে দিওনা
পৃথিবীতে গোলাপ ফোটা।
৯০.
প্রেমিক ছাড়া কেউ কি জানে প্রেমের গভীরতা!
হৃদয়হীনের কাছে সে প্রেম; হাস্য-রসিকতা।