৩০ বছরেও নির্মিত হয়নি সেতুটি

সোলায়মান হোসেন, জামালপুর
 | প্রকাশিত : ২২ নভেম্বর ২০২০, ২২:৪৭

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের হাতিভাঙ্গায় বন্যার পানির তোড়ে ভেসে যাওয়া চকপাড়া কংক্রিটের সেতুটি ৩০ বছরেও নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি নড়বড়ে একটি বাঁশের সাঁকোয় যাতায়াত করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে চকপাড়া, নয়াগ্রাম ও দক্ষিণ ভাতখাওয়াসহ পাঁচ গ্রামের হাজারো মানুষ।

তবে জামালপুর জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তা বলেছেন, বন্যায় যেসব ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো পুণঃনির্মাণের তালিকা তৈরির জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো অনুমোদন হলে সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার হাতিভাঙ্গা ইউনিয়নের চকপাড়া, নয়াগ্রাম, দক্ষিণ ভাতখাওয়া, মন্ডলপাড়া ও সরকারপাড়া গ্রামগুলো দুর্গম এলাকা হওয়ায় চলাচলের ভালো কোনো সড়ক নেই। এসব গ্রামের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য আশির দশকে চকপাড়া-নয়াগ্রাম সড়কের চকপাড়া খালের উপর একটি কংক্রিটের ব্রিজ নির্মাণ করে একটি বেসরকারি সংস্থা। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পানির প্রবল তোড়ে ভেসে যায় ব্রিজটি। এর পর ৩০ বছর পেরিয়ে গেলেও ব্রিজটি নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন।

গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের একটি সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত করে আসছে। পাঁচ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। প্রতি বছর সাঁকোটি সঠিকভাবে মেরামত করতে না পারায় এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই রিকশা-ভ্যানে করে কৃষিপণ্য পরিবহনের পাশপাশি স্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরাসহ প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করে আসছে।

নয়া গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ ছহির উদ্দিন খান বলেন, নয়া গ্রামের সেতুটা ভেঙে গেছে আজ ৩০ বছর যাবত। কোনো ব্রিজের ব্যবস্থা কেউ করে না। এলাকার মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই এই পথে চলাচলে।

চকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব দুদু মিয়া বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যায় এই সেতুটা ভেঙে যায়। এরপর অনেককেই বলা হলে কেউ ব্রিজ নির্মাণে উদ্যোগ নেয়নি। তাই গ্রামবাসী সবাই মিলে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

এই গ্রামের বাসিন্দা হক সাহেব বলেন, এই গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে তাদের দুর্ভোগ আরো বৃদ্ধি পায়। অসুস্থ ব্যক্তিকে ভ্যান গাড়িতে এনে এই সাঁকোর সামনে নামাতে হয়। তারপর ঘাড়ে করে সাঁকো পার করতে হয়। এতে অসুস্থ ব্যক্তি আরো অসুস্থ হয়ে যান। তাই তারা দ্রুত এই জায়গায় একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান।

চকপাড়া গ্রামের কৃষক মিষ্টার আলী বলেন, এই সাঁকোর উপর দিয়ে ফসল নিয়ে যেতে খুব সমস্যা হয়। ধান, পাট ইত্যাদি ফসল এই সাঁকোর উপর দিয়ে নিয়ে যেতে আলাদা লোকের প্রয়োজন হয়। এতে খরচও বেড়ে যায় এবং কষ্টও হয়। তাদের কষ্ট লাঘবে সাঁকোর জায়গায় একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

মন্ডলপাড়া গ্রামের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরভী আক্তার বলেন, অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা বাঁশের সাঁকো দেখলে ভয় পায়। তারা স্কুলে যেতে পারে না। তাদের পড়াশুনার অনেক অসুবিধা হয়। তারা এই কারণে পড়াশুনা করতে পারে না।

স্থানীয় প্রশাসন চকপাড়া খালের উপর একটি কংক্রিটের ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নিবে এমনটাই দাবি গ্রামবাসী ও স্থানীয় সচেতন মহলের।

জামালপুর জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তা নায়েব আলী জানিয়েছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সব ব্রিজ-কালভার্ট পুণঃনির্মাণের তালিকা তৈরি করার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো অনুমোদন হলে ব্রিজটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২২নভেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :