অণুকাব্য: পঞ্চপর্ণ: উদ্ধৃতি (পর্ব চার)
৯১.
জীবনটাকে সঁপেছি তোমার বুকের পাটাতনে ,
জীবন যাবেনা ভিন্ন মুলুকে প্রেমের অণ্বেষনে।
৯২.
মন দিলে, মন পেলে, খাঁটি প্রেম হয়,
প্রেম-প্রেম খেলা মানে প্রেমের প্রলয়।
তাই বলি, প্রেমে যদি মন মজে যায়,
মন দিতে, মন নিতে ভোগোনা দ্বিধায়।
৯৩.
ভালোবাসা খাঁটি;
তবে মানুষই নকল,
প্রেমকে করেছে সেই
মানুষই দখল॥
৯৪.
পথ— চলতে চলতে যদি থমকে দাঁড়ায়,
কথা— বলতে বলতে যদি ভাষা হারায়,
মন— ভাবতে ভাবতে যদি আনমনা হয়;
তারেই কি ভালোবাসা
৯৫.
বৃষ্টি ঝরার ছন্দ, হাস্নাহেনার গন্ধ,
পাতার বাঁশি,শিশুর হাসি; সবখানে আনন্দ।
৯৬.
ঢেউ ভাংগে কূল ভাংগে
ভাংগে কতো মন,
সাপ-লুডু খেলা খেলে
নদী ও জীবন।
৯৭.
জীবন মানে আয়ূ কিংবা বায়ূর খেলা নয়,
জীবন মানে; দমের সংগে যমের পরিণয়।
৯৮.
দমের ভিতর যমের ঘর,
দম রাখে না সেই খবর;
দম-যা গুনে সব একুনে
জমায় এ যম গুপ্তচর।
৯৯.
সুখ আর দু:খ যেন সহোদর ভাই,
বিষাদে বেহালা বাজায় হরষে সানাই ।
১০০.
প্রেমতো আসলে এক মায়া-মরীচিকা,
মিলন বিরহ যেনো নিয়তিরই লিখা।
১০১.
সূর্যের খরতাপে পৃথিবীটা যতোই পোড়ে,
তবু সেই সূর্যই আশা জাগায়-
প্রতিদিন স্বর্ণালী ভোরে।
১০২.
জীবনরে বলি রে জীবন!
কী দায়ে ফেলিলি,
এক জনমের দায় মিটাইতে
কয় জনম খাটাইলি?
১০৩.
প্রেমের এখন আকাল ভীষণ রয়না হৃদয় জুড়ে,
প্রেমতো এখন ঠোঁটে ঠোঁটে নোটে নোটে ঘুরে।
১০৪.
জীবন বলে,
কওতো দেখি, আমি এখন কই?
আমি বলি,
সেথায় তুমি যেথায় মানানসই ।
১০৫.
অন্ধরে তুই বন্ধ ঘরে খেলিস কানামাছি,
দেখলিনা তুই বাইরে কতো আলোর নাচানাচি।
তোর চোখে কে মারলো ধূলি
আঁটলো চোখে পর্দা-ঠুলি
পারলিনা তুই ভিড়তে তাদের টিকির কাছাকাছি-
অন্ধ ; তবুও পট্টি বেঁধে খেলিস কানামাছি।
১০৬.
অমর জীবন চেয়ে কেনো রে কাঁদিস মন !
জীবনের চেয়ে বেশি যৌবনই প্রয়োজন ।
যৌবন গত হলে
অমর জীবন পেলে
দুর্বহ হয়ে যাবে দুঃসহ সে জীবন।
১০৭.
মাদক সেবন করেই যদি সাধক হওয়া যেতো,
সব মাতালই স্বর্গে যাবার আগাম সনদ পেতো।
১০৮.
প্রেমের সাগরে থাকে থৈ থৈ জল ,
সে সাগরে ডোবে প্রেম ব্যর্থ বিফল !
এক ঘটি জল তুলে সে সাগর থেকে,
দরদের দরিয়ার হৃদে দাও রেখে ।
১০৯.
যুদ্ধ চলছে দীর্ঘ হ্রস্ব,পুড়ছে বিশ্ব; হচ্ছে ভষ্ম,
যুক্তরাষ্ট্র করছে রঙ্গ; বাহ্ বা দিচ্ছে রাষ্ট্র সংঘ।
১১০.
আকাশ থেকে জ্যোৎস্না ঝরে বাতাস থেকে সাড়া ,
জোনাক থেকে আলোর সোনা ঝর্ণা থেকে ধারা।
আঁচল থেকে আদর ঝরে, মায়ের সোহাগ উপচে পড়ে-
তাদের ঝরে অশ্রু যারা মায়ের বাঁধনহারা ।
১১১.
করোনা’র শেষে মুক্ত বিশ্বে আমাদের দেখা হলে,
প্রেমালিঙ্গনে বুকেতে জড়াবো নীরব-চোখের জলে।
১১২.
মন যে কখন কোথায় হারায় মন জানে না সেই খবর,
মনকে যখন লুকাই মনে মন তখনও দেশান্তর।
১১৩.
প্রেমটাকে করো যদি উপরে উঠার সিঁড়ি,
আখেরে বিফলে যাবে ফেরেবের বাবুগিরি।
প্রতারণা পন্থার বিশেষ এক গুণ,
প্রকাশিত হলে জ্বালায় লংকার আগুন।
১১৪.
আমার জীবন খাঁখাঁ মরুভূমি;
সেই বন্ধ্যা ভূঁইয়ে তুমিই একমাত্র পুষ্পোদ্যান।
আমার জীবন নিস্তরঙ্গ সিকতা সাগর;
সেই নিষ্প্রাণ তল্লাটে প্রমোদে ভাসতে পারে
কেবল তোমারই মর্মের সাম্পান।
তাই আমার সব ভাবনা গল্প কবিতা গান;
অবলীলায় হয়ে যায় তোমারই অনশ্বর প্রেমের উপাখ্যান ।
১১৫.
আজকে তেনার শপথ গ্রহণ কাটছে বিশাল কেক,
বসন্তেরই কোকিল তিনি, বর্ষাকালের ভেক।
স্বজনরা সব ভাগ্যাহত
সেই সভাতে অবাঞ্ছিত
আজকে বুঝি খেঁক শেয়ালের হচ্ছে অভিষেক!
১১৬.
দেখলে তো মানুষ ক্ষমতা তোমার পলকা ঠুনকো কতো,
পুঁচকে একটা জীবাণুর কাছে উদ্যত শির নত।
এখনো তোমার অহংকারের ভাব যে অসংযত,
বিধাতার উপর ভরসাকে আজো করোনি জীবন-ব্রত!
১১৭.
মানুষ রে তোর জ্ঞান বিজ্ঞানে মিললো না আর নিস্তার,
দুর্যোগে শুধু তোর সম্বল বিধিলিপি বিধাতার।
১১৮.
কত্তো জাতের চোর যে আছে, নেই যে হিসেব এই সমাজে,
দ্যাখ চেয়ে দ্যাখ চোরের বাজার, এই সমাজে রম-রমা যে ।
ভেতরে যে দস্যু সাজে
বাইরে সাধুর ভাব বিরাজে;
ছিঁচকে চোরে খাচ্ছে ধরা;সিঁদেল চোরে পায় ক্ষমা যে।
১১৯.
শ্রমিকের শ্রমে-ঘামে যে গড়েছে গোলা,
সেই ধন ধন নয়; বিষ তোলা-তোলা।
১২০.
গাছে গাছে পরগাছারা যাচ্ছে গাছের রস খেয়ে,
লাড্ডু পাওয়া গর্দভে যায় এখন দশে দশ পেয়ে।
এমন আজব দেশও আছে
মেধা মরে গাধা বাঁচে;
কীর্তিনাশা কর্তারা যায় সে দেশটাতে যশ পেয়ে।
১২১.
পরের কুৎসা রটাতেই যদি আঁটো শুধু কূটবুদ্ধি ,
কোন তরিকায় করবে নিজের জরুরি আত্মশুদ্ধি ?
১২২.
কালো টাকা সাদা করার ফন্দি করে স্থির,
কালো টাকার মালিক সাজে সাধু যুধিষ্ঠির।
কালো টাকা কালি মুছি
হোক যতোই শুদ্ধ-শুচি;
কালো টাকার মালিকরা সব ‘কালা জাহাঙ্গীর’।
১২৩.
কালো টাকা সাদা টাকা;এসব আবার কোন্ কথা?
সব টাকারই এক চেহারা; নেই ক্ষমতার ভিন্নতা ।
বরং দেখি সাদার চেয়ে
কালোই অধিক মূল্য পেয়ে
সাদার ঘাড়ে কুড়াল মেরে ; প্রমাণ করে যোগ্যতা।
১২৪.
ইতিহাসের পাতায় পাতায় নব্য ইতিহাস,
ভাতা পাওয়া ঐতিহাসিক কাটছে ঘোড়ার ঘাস।
ইতিহাসের আসল পাতা
কাটছে পোকায় করছে যা-তা
সত্য ইতিহাসটা এখন দারুন পরিহাস।
১২৫.
আশা যদি শুধু মিছে আলেয়াও হয়,
মনে তবু সুখবোধ হয় সঞ্চয়।
স্বপ্ন সফল হবে—মনে এই পণ,
স্বপ্নকে তাই করি যত্নে লালন।
আশা আর স্বপ্ন দুই সহোদর,
দরদের দরিয়ায় দু:খের দোসর।
১২৬.
ঘামের দামে নাম কিনেছি, মজুর চাষা মুটে,
তবুও আমার শ্রম নিয়েছে ভদ্দলোকে লুটে।
আমার গায়ে গন্ধ ঘামের
সর্বহারা কিংবা বামের
তাইতো আমার পাঁজর ভাঙ্গে তাদের পায়ের বুটে।
১২৭.
সত্য মিথ্যা ফারাক করার পাল্টে গেছে ধরণ,
মিথ্যাটাই হলো যেন মূল জাতীয়করণ।
ঝিকিমিকি ঝুঁটের মোড়ক
গলি ছেড়ে ধরলো সড়ক,
‘কৌশল’ই আজ মিথ্যা কাজের শোভন সংস্করণ।
১২৮.
চরকাতে তেল মাখছে চতুর,তাইতো তেলের দাম বাড়ে,
চরকাটা কার,সেই ভাবনার সে কি কভু ধার ধারে ?
হোক তা পরের, হোক অচেনা;
কিচ্ছু তাতে যায় আসেনা,
তেল মারা যার স্বভাব,সেতো চরকা পেলেই তেল মারে।
১২৯.
মর্ত্যভূমিতে মাতৃমমতা পেয়েও যে-অভাজন,
স্বর্গ রচনা করতে পারেনি;নিষ্ফল সে জীবন।
১৩০.
মানুষের জন্যে যে করে প্রাণপাত,
তার কাছে তুচ্ছ সব বিত্ত-বেসাত।
১৩১.
সব নিয়মের মাথায় এখন অনিয়মের টুপি,
অনাচারের পাগড়ি মাথায় আচার বহুরূপি।
ন্যায়ের মাথা ন্যাড়া করে
ঘোল ঢেলে দেয় ধুরন্ধরে;
সভ্যসুজন সত্যভাষণ দেয় যে চুপি চুপি।
১৩২.
এখানটাতে ক্লিক করে সে ওখানটাতে যায়,
স্থির থাকেনা চোখের পলক;তথ্য নতুন চায়।
এই আধুনিক বিশ্বটাকে
বাঁধল কে যে ক্লিকের পাকে ?
অস্থিরতার ঘোর বিপাকে স্বস্তি পাওয়া দায়।
১৩৩.
এমন অনেক কথা আছে ;বলার অতীত,
এমন অনেক পথও আছে;চলার অতীত।
এমন অনেক মনও আছে
প্রেমের পুলক যায়না কাছে,
এমন অনেক মাঠও আছে; উষর পতিত।
১৩৪.
এত্তো সুখের জীবন পেয়ে মন যে নাচে ধিন-তা,
যারা তোমায় এ-সুখ দিল, ছাড়লে তাদের চিন্তা।
যারা তোমায় তিলে তিলে
গড়লো মানুষ সবাই মিলে
ক্যামন করে শোধবে বলো তাদের বিশাল ঋণটা?