অণুকাব্য: পঞ্চপর্ণ: উদ্ধৃতি (পর্ব পাঁচ)
১৩৫.
কর্ম যদি সত্য না হয় সত্য ধর্মে লাভ কি হায়!
মানুষ দেখি মিছের কাছে সত্যটাকে ঢের বিকায় ।
কর্ম যদি বর্ম হতো
ধর্ম হতো সুরক্ষিত
সত্য কর্ম সত্য ধর্ম; করতো বিরাজ সখ্যতায়।
১৩৬.
অঙ্গে রূপের থাকলে বহার চুপ থাকা কি যায়?
রূপের ঝিলিক যুক্ত করে কথার ভঙ্গিমায়।
নিজের রূপের আয়না লয়ে
মোহন রূপে মুগ্ধ হয়ে
নিজের সাথে কয়-সে কথা নিজেই নিরালায়।
১৩৭.
হক কথা আর বলিসনা রে হকেরতো নেই ভাত,
হক গিয়েছে নির্বাসনে ঠকের বাজার মাৎ।
হক কথাটা বলতে গেলে
জুলুম তোরে নিবেই জেলে
হক সাহেবের ভাগ্যে এখন ঠকের পদাঘাত ।
১৩৮.
কলের পুতুল কলের পুতুল তুইতো বুঝিসনা রে,
ঘুরায় কারা কলের চাবি কলকাঠি কে নাড়ে!
বুঝবি যখন ঘুরবিনা আর
লুটবি চাবি সকল তালার
নাচবে তারা; তোদের যারা নাচায় বারে বারে।
১৩৯.
পাখি বলে , শোনো কবি ! কিছু কথা বলি ,
কেনো এতো ভাব খোঁজো চষে অলিগলি?
আমি দেখো! ইচ্ছের পাখামেলা ছবি,
কবিতায় আমার কথা লেখে কত কবি।
পাখিকে বলেছি, পাখি ভেবেনা তেমন,
তোমার আছে পাখা আর আমার আছে মন।
ডানা মেলে তুমি যেমন উড়ে চলে যাও,
আমার মনও তেমন পবনের নাও।
তোমার পাখায় যেমন আঁকা আল্পনা,
আমার মনেরও আছে রাঙা কল্পনা।
আকাশ যেমন তোমার ভাবনার নীল,
কল্প-আকাশে উড়ে ভাবের আবাবিল।
১৪০.
সত্যের এখন চতুর্দিকে শৈত্য মেরুর শীত,
মিথ্যেটাকে যায় না নাড়া; পোক্ত যে তার ভিত।
মন্দের এমন চলছে ধারা
শুভবোধের চেতন হারা
সুস্থ সমাজ গড়ার কাজে স্রোত যে বিপরীত।
১৪১.
সত্যনদীর বুকটা জুড়ে মিথ্যে বালির চর পড়ে,
সাচ্চা কথা বললে গালে চপাট চপাট চড় পড়ে।
মিথ্যের এমন চললে দাপট
যুগান্তরের খুলবে কে জট?
এমনি করে সভ্যতারই ভিতটা যে হয় নড়বড়ে।
১৪২.
এক শরীরে এত্তো সোহাগ ক্যামোন করে ধরো?
ক্যামোন করে এত্তো মায়ার গুণ করেছো জড়ো?
আমার যত মায়ার ক্ষুধা
মিটায় তোমার সোহাগ সুধা
কোন্ মমতায় মাগো আমার জীবন তুমি গড়ো!
১৪৩.
কত আর অনাচার সওয়া যায়?
কত আর সেবাদাস হওয়া যায়?
কত আর মেষ হয়ে
যাবো নিঃশেষ হয়ে
কত আর এ কাহিনি কওয়া যায় ।
১৪৪.
চতুর্দিকে অন্ধ চোখের এত্তো জলের ঢল,
কেমন করে সইবো কালোর পাথর জগদ্দল?
আলো যখন দিলো উঁকি
হওনা সবে আলোর মুখি
কালোর পূজো ছেড়ে আলোর তীর্থ রথে চল।
১৪৫.
ভাঙ্গা চালে বর্ষা ঢালে চোখের জল,
আমার ঘরে চোখের জলের নামলে ঢল।
বর্ষা কাঁদে আমি কাঁদি; ঢেউ ভাঙ্গে জল ছলাৎ ছল।।
বর্ষা জানে আমার দুঃখ; বর্ষা আমার মিতা,
বর্ষাধারা নিভায় আমার মন-শ্মশানের চিতা।
বর্ষা বাজায় বৃষ্টি ধারায় বিষাদ বিধুর নুপুর মল-
বর্ষা কাঁদে আমি কাঁদি ঢেউ ভাঙ্গে জল ছলাৎ ছল।।
বর্ষা এলে ফর্সা লাগে অতীত দিনের স্মৃতি,
বর্ষা টানে বুকের কাছে হারিয়ে যাওয়া প্রীতি।
বর্ষা এলে পদ্য ঝরে ভেংগে মনের সব আগল-
বর্ষা কাঁদে আমি কাঁদি ঢেউ ভাঙ্গে জল ছলাৎ ছল।।
১৪৬.
অদ্ভুত আঁধারে শুভবোধগুলোর যখন অঘোর নিদ,
তুমিই দিয়েছ আলো জ্বালাবার অনন্য এ তাগিদ:
“ আলো নিয়ে আসো; দিগন্ত জুড়ে আঁধারের ঘনঘটা,
তারুন্য-তেজে তিমিরে ছড়াও আলোকের রূপছটা।
তামাশার সব তমসা ঘুচাতে আলোর দিশারী হও,
জ্ঞানের আলোর দীপ্তি ছড়িয়ে আলোর পতাকা বও।”
জন্ম তোমার সার্থক হলো জীবন তোমার ধন্য,
জীবনের চেয়ে কর্ম-সাধনা জগতে অগ্রগন্য।
তোমার জন্য জন্মের নাই কোন তিথি ক্ষণ দিন,
জন্ম তোমার আলো-মহিমায়; জন্ম নিত্যদিন।
মিছের মাদকে সত্যের চোখে অঘোর যখন নিদ,
তুমিই দিয়েছ সত্যালোকের,স্বপ্নের সু-তাগিদ;
শ্রদ্ধা জানাই শিক্ষাগুরু; আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
১৪৭.
মন যে কখন কোথায় হারায়
মন জানে না সেই খবর,
মনকে যখন লুকাই মনে
মন তখনও দেশান্তর।
১৪৮.
মানুষতো ভুলে যেতে চায়,তার যতো স্মৃতি আছে মন্দ,
তবুও দুঃখের স্মৃতি হায়, জীবনকে করে নিরানন্দ।
আগুনতো ভুলে যায় দহনে সে কতটুকু জ্বলেছে,
সূর্যও ভুলে যায় জ্বলে জ্বলে কতো কাল চলেছে।
যুগে যুগে এই জ্বলা অবিরাম পথ চলা
গতিময় করেছে সে- দ্বন্দ্ব-
মানুষতো ভুলে যেতে চায় তার যতো স্মৃতি আছে মন্দ।।
সুখের স্মৃতিরা যে-ই উঁকি দেয় দীপ্তির জানালায়,
দুঃখের স্মৃতিরা ঢাকে। সে-পুলক বিষাদের কালিমায়।
সাগরতো ভুলে যায় কতো ঢেউ ভেঙ্গেছে-সে উত্তাল
ডুবে গেছে কতো তরী ভেঙ্গে গেছে অকুলেই কতো হাল।
তবুও জীবন চলে সময়ের পলে পলে
চিরচলমান এই গতি-ছন্দ-
মানুষতো ভুলে যেতে চায় তার যতো স্মৃতি আছে মন্দ।।
১৪৯.
এখন তোমার আছে ধনজন; ক্ষমতার আস্ফালন,
মরণের পর নিন্দা রটাবে শংকিত জনগন।
পরলোকে দায় শংকার মাঝে রবে তুমি নির্বাক ,
ধিক্কারে হবে মুখরিত সব সাহসি মুক্তবাক।
১৫০.
শুভবোধগুলো মরছে দেখেও নীরব যে জনপদ,
সে সমাজে নীতি, সত্যানুভূতি নয় মোটে নিরাপদ।
১৫১.
তাকেই আমি বাসি ভালো যে আমারে কাঁদায়,
অশ্রুবীণার তারে তারে সুখের সুর যে সাধায়।।
আমারে যে বঞ্চনা দেয়; আমার সকল সুখ কেড়ে নেয়
আড়াল থেকে হই-যে আকুল তারই ভালোবাসায়-
তাকেই আমি বাসি ভালো যে আমারে কাঁদায়।।
বঞ্চনা আর শোকের মাঝে; সব পাবার যে সুখ বিরাজে
সেই সুখে যে সুখ বিলাবে, থাকি তারই আশায়-
তাকেই আমি বাসি ভালো যে আমারে কাঁদায়।।
চাওয়া-পাওয়ার পথের ধারে পথ হারিয়ে হারাই যারে
পেয়ে হারাই বারে বারে খোঁজার সুখের নেশায়-
তাকেই আমি বাসি ভালোযে আমারে কাঁদায়।।
১৫২.
সূর্যের খরতাপে পৃথিবীটা যতোই পোড়ে,
তবু সেই সূর্যই আশা জাগায় প্রতিদিন স্বর্ণালি ভোরে।।
তোমার স্মৃতির-চিতা যতোই জ্বলে,
সে-দহনে দু’নয়নে অশ্রু গলে।
চোখের জলের নদি
দু’কুল ভাসাতো যদি
বইতো সুখের বান পোড়া অন্তরে-
সূর্যের খরতাপে পৃথিবীটা যতোই পোড়ে,
তবু সেই সূর্যই আশা জাগায়-
প্রতিদিন স্বর্ণালি ভোরে।।
মনে যদি আশা হ’য়ে জাগে আলেয়া,
সে আলোরই স্রোতে ভাসে প্রেমের খেয়া।
বিরহে পুড়েছি যতো
খাঁটি হ’লো প্রেম ততো
হতাশার মেঘ গ’লে সোহাগ ঝরে-
সূর্যের খরতাপে পৃথিবীটা যতোই পোড়ে,
তবু সেই সূর্যই আশা জাগায়-
প্রতিদিন স্বর্ণালি ভোরে।।
১৫৩.
গরম কথ নরম সুরে সহজভাবে বলবে,
পথের কাঁটা পথেই থাকুক; কায়দা ক’রে চলবে।
কায়দা ক’রে ফায়দা লুটো; পন্থা ধরো খাঁটি,
আঁতের বিষটা দাঁতে এনে সব ক’রোনা মাটি।
১৫৪.
আঁখি ছলছল
পানি টলটল
আলো ঝলমল
জল কলকল
দ্যোতি জ্বল জ্বল
মুখে ঠল ঠল
কথা গলগল
গদি টলমল।
১৫৫.
কতো নদীর কূল ভেংগেছে
ডুবছে কোটিপতি,
তোমার যদি মন ভেংগে যায়
তেমন কী আর ক্ষতি!