করোনায় উদাসীনতা আনতে পারে ভয়াবহ বিপদ

শাহাবুদ্দিন শুভ
 | প্রকাশিত : ২৩ নভেম্বর ২০২০, ১৫:০৫

করোনা নিয়ে কি আমরা খুব বেশি অবহেলা করছি? নাকি পাত্তা দিচ্ছি না! এর ভয়াবহতা আগের সব পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে তা কি আমরা বুঝতে পারছি? যদি না বুঝে থাকি তাহলে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। যদি আমরা আমাদের পরিচিতজনদের মধ্যে একটু খোঁজখবর নেই, তখন দেখা যায় কেউ না কেউ দেশে কিংবা বিদেশেও আক্রান্ত হয়েছেন কিংবা মারাও যাচ্ছেন। প্রথম দিকে শুধু নিজেদের পরিচিতজনদের মধ্যে মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এখন দ্বিতীয় ধাপে এসে এটি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং অনেক কাছের মানুষ ও আত্মীয়স্বজনদেরও মৃত্যুর খবর পাচ্ছি প্রতিনিয়ত। তার পরও কেন যেন সবাই ঘোরের মধ্যে আছি, নিজেদেরকে নিজেরাই মৃত্যুর মিছিলে ঠেলে দিচ্ছি শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে।

বিশ্বে করোনা আক্রান্তের হারে দ্বিতীয় স্থানে থাকা আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখতে পাব সেখানেও ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে, যার ঢেউ এসে লাগতে পারে আমাদের গায়েও। ১৯ নভেম্বর কলকাতার শীর্ষস্থানীয় দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের শিরোনাম করে ‘দৈনিক সংক্রমণ বেড়ে ফের ৪৫ হাজার ছাড়াল, ২৪ ঘণ্টায় বাড়ল মৃত্যুও’ খবরে বিস্তারিত তারা লিখে ‘ফের বাড়ল দেশের দৈনিক সংক্রমণ। এ সপ্তাহের শুরুতে যা নেমেছিল ৩০ হাজারে, বুধবার তা বেড়ে সাড়ে ৩৮ হাজার ছাড়িয়েছিল। বৃহস্পতিবার তা ফের ৪৫ হাজার ছাড়াল। ৪ দিন পর দৈনিক মৃত্যুও ৫০০ ছাড়িয়েছে। সঙ্গে অল্প হলেও বেড়েছে সংক্রমণের হার।’

তাদের খবরে আরও বলে, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫ হাজার ৫৭৬ জন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হলেন ৮৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮৩ জন। এই সংখ্যক আক্রান্ত নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থান ভারতের। প্রথম স্থানে থাকা আমেরিকার মোট আক্রান্ত ১ কোটি ছাড়িয়ে রোজ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এখনও অবধি সেখানে ১ কোটি ১৫ লাখ লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অক্টোবরের শেষ থেকেই আমেরিকাতে বাড়ছিল দৈনিক সংক্রমণ। গত ১৫ দিন ধরে তা রোজই ১ লাখ ছাড়াচ্ছে। এখন সেখানে দৈনিক সংক্রমণ ১ লাখ ৮২ হাজার।’

আমরা যদি গত ২-১ দিনের পত্রিকার খবরগুলো একটু পর্যালোচনা করে দেখি তাহলে বুঝতে পারব আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। দৈনিক প্রথম আলো ২১ নভেম্বর তাদের একটি সংবাদে প্রকাশ করে যে ‘এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৪৩ শতাংশ’ । একই দিনে ঢাকা টাইমস তাদের খবরের শিরোনাম করে ‘করোনায় আরও ২৮ মৃত্যু, শনাক্তের হার আড়াই মাসে সর্বোচ্চ। এই দুটি নিউজে সহজেই বুঝা যাচ্ছে করোনার গ্রাফের ঊর্ধ্বগতি গাণিতিক হারে নয়, হচ্ছে জ্যামিতিক হারে।

অনেকের মধ্যে একটি ধারণা ছিল যে করোনায় শিশুরা আক্রান্ত হয় না বা হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কম কিন্তু এই তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে। লন্ডন থেকে এক আত্মীয় ফোন করে জানালেন তার ৩ বছরের ছেলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে লাইফ সাপোর্টে আছে। তার অবস্থা অনেকটা আশঙ্কাজনক। আমাদের দেশের দিকে যদি একটু তাকান তাহলে করোনায় শিশুমৃত্যুর খবরও পাবেন। রবিবার ঢাকা টাইমস তাদের পত্রিকাতে একটি খবরের শিরোনামে লিখেছে ‘শিশুসহ করোনায় প্রাণ গেল আরও ৩৮ জনের’। খবরে বিস্তারিত যদি আমরা একটু দেখি তাহলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে বলে আমার ধারণা। তারা লিখেছেন ‘মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৩৮৮ জনে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২ দিনের যদি তথ্য পর্যালোচনা করি তাহলে দেখা যায় শনিবারের তথ্য অনুযায়ী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২৮ জনের প্রাণ গেছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৫০ জনে। এছাড়া নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৮৪৭ জন। পরীক্ষার বিপরীতে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১৪.৬১ শতাংশ, যা গত আড়াই মাসের (৭৮ দিন) মধ্যে সর্বোচ্চ।

রবিবারের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৩৮৮ জনে। এছাড়া নতুন করে শনাক্ত হয়েছে আরও দুই হাজার ৬০ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল চার লাখ ৪৭ হাজার ৩৪১ জনে।

শনি থেকে রবিবারে মৃত্যুর সংখ্যা একদিনে ১০ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ২১৩ জন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২০৬০ জন। এই পরিসংখ্যান যদি আমাদের কাছে খুব কম মনে হয়ে থাকে তাহলে মহাবিপদের ঘণ্টা কিন্তু সামনের দিকে আসছে। আসন্ন শীতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। কঠোর হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে। ইতিমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করছে। সব কিছুই ব্যর্থ হবে যদি আমরা সচেতন না হই।

এখন হয়তো অনেকেই বলবেন এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি? উপায় হচ্ছে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এই মহামারির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া। ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরা এবং হুর গাইড লাইন অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। মনে রাখতে হবে ‘করোনায় উদাসীনতা আনতে পারে ভয়াবহ বিপদ’।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, সিলেটপিডিয়া

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :