শৃংখলা ফিরেছে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সের

অমিতাব বর্মণ, পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ২৩ নভেম্বর ২০২০, ১৯:১৬

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঠিক তদারকি ও কঠোর দিক নির্দেশনার কারণে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধিসহ কমেছে দালালদের দৌরাত্ম।

পীরগঞ্জ উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সটি পৌরসভাসহ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল। ইতিপূর্বে এ স্বাস্থ্য-কপ্লেক্সটিতে সেবা নিতে আসা রোগীরা স্থানীয় কিছু নারী পুরুষ দালালদের খপ্পড়ে পড়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে গিয়ে সর্বশান্ত করত। এরা স্থানীয় হওয়ায় কর্মরত ডাক্তার, নার্সসহ কিছু স্ট্যাফ দাদালদের নিকট জিম্মি ছিল।

স্ট্যাফদের মধ্যে অনেকে আবার এদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রোগীদের সর্বশান্ত করত। অনেক ডাক্তার নার্সসহ স্ট্যাফদের অনেকেই ক্যাস্পাসে অবস্থান করতো না। রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারি, লালমনির হাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধ্যাসহ বগুড়া থেকে ডাক্তার, নার্স ও স্ট্যাফরা আসা যাওয়া করতেন।

ডাক্তাররা অফিসে এসে আবার অধিকাংশ সময় চেম্বারে রোগীদের পরিবর্তে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়ে ভীড় করতেন। দূর থেকে আসা যাওয়ার কারণে এদের অনেকেই সঠিক সময়ে অফিসে উপস্থিত হতে পারতো না এবং বেলা ২টা থেকে ৩টার মধ্যে কর্মস্থল ত্যাগ করে তাড়াহুড়া করে চলে যেত। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সঠিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হত। এমনকি আগত রোগীদের সঠিকভাবে সরকার কর্তৃক সরবরাহকৃত ওষুধ দেয়া হতো না। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দালাল চক্র আগত রোগীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করত।

দালাল চক্র প্রয়োজনে অপ্রয়েজনে স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্স গেট সংলগ্নে গজে উঠা কিছু ভুঁইফোর ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে অসহায় মানুষদের ফুঁসলিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসার চড়া মূল্যে হাতিয়ে নিত। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্স চত্তর থেকে আগত রোগীদের স্বজনের বাইসাইকেলসহ অসংখ্য মোটরসাইকেল চুরি হত। মোট কথা স্বাস্থ্যসেবার নিম্নমানসহ অনিয়ম দুর্নীতি ও কঠিন বিশৃংখলার সাগরে ডুবেছিল এ প্রতিষ্ঠানটি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রহুল আমিন বুলেট এ স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে যোগদান ও দায়িত্বভার নেয়ার পর তার কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা, সততা, ধৈর্য্য, দায়িত্ববোধ এবং সাহসীকতায় এ চিত্রের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তিনি যোগদান করেই প্রথমে ডাক্তার নার্সদের ক্যাম্পাসে অবস্থান, সব স্ট্যাফের কর্মস্থলে যথা সময়ে উপস্থিতি এবং প্রস্থান নিশ্চিত করেছেন। এরপর দালালদের দৌরাত্ম কঠোরভাবে প্রতিরোধসহ ক্যাম্পাসের চুরি রোধে পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে সিসি ক্যামেরায় আওতায় নিয়ে এসেছেন।

রোগীদের মানসম্পন্ন খাবারের সঠিক চাহিদা নির্ধারণ, কমপ্লেক্সের পরিস্কার পরিছন্নতা বৃদ্ধি, অপারেশন থিয়েটার এক্সরে মেশিন ও প্যাথলজিক্যাল আধুনিকায়নসহ নতুন অ্যাম্বুলেন্স সংযোজন। চাহিদা মোতাবেক বিভিন্ন বিভাগের অভিজ্ঞ ডাক্তার সংযোজনসহ নতুন চিকিৎসা বিভাগের সৃষ্টি করতেও সক্ষম হয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছে উপজেলাবাসী।

এই কর্মকর্তা করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে জনসচেনতায় করোনার সম্মুখযোদ্ধার ভূমিকায় উপজেলার আনাচে কানাচে সমাবেশ, লিফলেট বিতরণ, মাইকিংসহ করোনা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর, খাদ্য, ওষুধ পথ্য ও বাজার সহায়তা এবং আক্রান্তদের সাহস যুগিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

কমপ্লেক্স চত্তরের ভিতরে পতিত জায়গাগুলোতে ফুলের বাগানসহ বিভিন্ন প্রজাতির শোভাবর্ধণ গাছও লাগিয়েছেন। মোট কথা এ কর্মকর্তার একাগ্রতার কারণে রুগ্ন এ স্বাস্থ্য সেবার প্রতিষ্ঠানটি ফিরে পেয়েছে নবযৌবন।

সরেজমিনে গত সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে গিয়ে কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা আব্দুর রহিম, মিলন মিয়া, রুবাইদা ও আমেনা বেগমের সঙ্গে। তারা জানান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিয়ে বর্তমানে সুস্থ হয়ে উঠছেন। কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক ওষুধপত্র ও খাদ্য সরবরাহ করছেন, কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা নিয়মিত খোঁজ নেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে ফল বিক্রেতা রেজাউল করিম, ওষুধ ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম ও চা বিক্রেতা নজরুল ইসলাম জানায় বর্তমানে এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনেকটা শৃঙ্খলা ও স্বস্তি ফিরে এসেছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রহুল আমিন বুলেটের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি শুধু আমার দায়িত্ব টুকু পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছি মাত্র। তবে এর পেছনে আরো একজন মানুষ রয়েছেন, তিনি হলেন পীরগঞ্জের এমপি ও জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। তারই সহযেগিতার কারণে মূলত আমি এ প্রতিষ্ঠানটির নানাবিধ জটিল সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে পারছি। তিনি আরো বলেন, আগামীতে স্পিকারের সহযোগিতায় ৫০ শয্যার এ কমপ্লেক্সটি ১০০ শয্যায় উন্নত করণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৩নভেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :