শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিদ্যুৎ খাতে বিস্ময়কর সাফল্য

প্রকাশ | ২৩ নভেম্বর ২০২০, ১৯:৩৬ | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২০, ১৯:৪০

ড. মো. আওলাদ হোসেন

শিক্ষা যেমন জাতির মেরুদণ্ড, তেমনি বিদ্যুৎ কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের গত দুই মেয়াদে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ খাতে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা নিয়ে ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এ স্লোগানে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) কর্তৃপক্ষ প্রত্যন্ত গ্রামগুলো আলোকিত করার কাজ করে যাচ্ছে। সারা দেশে শতভাগ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিতে বিদ্যুৎ খাতে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।

২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে বিদ্যুতের অভাবে দেশের অর্থনীতি ছিল ভঙ্গুর, শিল্প-বাণিজ্য ছিল স্থবির এবং জনজীবনে লোডশেডিং ছিল অসহনীয়। বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে (মে ২০১৯) দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৩ হাজার ৫৯৮ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ)। একই সাথে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা থেকে বেড়ে ৫১২ কিলোওয়াট(৩) ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। ২০০৯ সালের আগে  বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। যদিও গ্রীষ্মকালে সে সময় ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এর চাহিদা ছিল। চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে পার্থক্য বেশি হওয়ায় তখন সারা দেশে ব্যাপক পরিমাণ লোডশেডিং হতো। এতে ব্যাহত হতো শিল্প ও কৃষির উৎপাদন।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশে ১১১টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ২০০৯-২০১৯ সময়ে দেশে মোট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ২৭ থেকে ১৩৮টি হয়েছে, গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ৮ লক্ষ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩.৮৭ কোটিতে উন্নিত হয়েছে, সঞ্চালন লাইন ৮ হাজার থেকে ১২,২৯৩ সার্কিট কিলোমিটার এ উন্নিত হয়েছে, বিতরন লাইন ২ লক্ষ ৬০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ ৮৮ হাজার সার্কিট কিলোমিটার হয়েছে, সেচ সংযোগ ২ লক্ষ ৩৪ হাজার থেকে ৩ লক্ষ ৬২ হাজারে উন্নিত হয়েছে। আর বর্তমানে দেশের মোট ৯৮ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধাভোগী। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ থেকে ‘লোডশেডিং’ শব্দটি দূর হয়েছে। দেশের শতভাগ বিদ্যুতায়নের বিষয়টি আর স্বপ্ন থাকছে না। এটা শিগগিরই হতে যাচ্ছে বাস্তব।

৬ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ ও ২ হাজার ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ২০২৩ সাল থেকে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করার অঙ্গীকার নিয়ে গত ৩০ নভেম্বর ২০১৭ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ নং ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাই উদ্ধোধন এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পথে পা দিয়েছে এবং দেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ ক্লাবে পদার্পণ করেছে।

বর্তমানে প্রতিবেশী দেশের সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ১,১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া আঞ্চলিক সহযোগিতায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে ক্রসবর্ডার বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করতে দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য নেপালের সাথে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ চাহিদা বিবেচনায় সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নত করা হচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা ও সেবার মান।

বাংলাদেশের অত্যন্ত দুর্গম, চর ও দ্বীপাঞ্চলের বিদ্যুৎবিহীন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সোলার প্যানেল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় ৪৫ লাখ মানুষ সৌরবিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২০২১ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করছে সরকার। ৪ হাজার ৯১৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য এরই মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ২০২৩ সালের মধ্যে এ কেন্দ্রগুলো উৎপাদন শুরু করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগেই স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর বিদ্যুৎ পায় ছিটমহলবাসী। এতে ছিটমহলের ৩০৮ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের ফলে ১১ হাজার ৮৮২টি পরিবার বিদ্যুৎ পাচ্ছে। সম্প্রতি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপাঞ্চল সন্দ্বীপও বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে। এ ছাড়া অফ গ্রিড এলাকা হাতিয়ায় বিদ্যুতের জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মনপুরায় “সূর্যগ্রাম” নামক প্রকল্প দিয়ে সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’এসব সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায়।

বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতের সমিতিগুলো প্রতি মাসে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে। আগে বিদ্যুতের মিটার পাওয়া কষ্টকর হলেও শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির পর এখন সংযোগ প্রদান দ্রুত ও সহজতর হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের দূরদর্শী, সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বিদ্যুৎ খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

লেখক: ভেটেরিনারিয়ান, পরিবেশবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক কর্মী।