‘ভারতে ভ্যাকসিন এলে বাংলাদেশ আগে পাবে’

প্রকাশ | ২৩ নভেম্বর ২০২০, ২১:৫০ | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২০, ২২:০৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বাজারে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সরবরাহ শুরু করলে বাংলাদেশ তা ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে’ পাবে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

তিনি বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউট যেদিন আন্তর্জাতিক বাজারজাতকরণ শুরু করবে সেদিন থেকেই বাংলাদেশ মাসে ৫০ লাখ করে ডোজ পাবে।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

‘করোনাকালীন বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ পরিস্থিতি’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভায় সালমান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে কম দামেই এই ভ্যাকসিন পাবে। প্রতি ডোজের দাম পড়বে মাত্র ৫ ডলার। সেরামের কাছ থেকে বাংলাদেশ ৬ মাসে মোট ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাবে।’

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মডার্না ও ফাইজারের তৈরি ভ্যাকসিনের দাম রেখেছে ৪০ ডলার। সম্প্রতি চীনে বাজারজাত হওয়া আরেকটি ভ্যাকসিনের দাম ৬০ ডলার। আর বাংলাদেশ ভাকসিন পাবে ৫ ডলারে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করছে, তার উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া।

ভারত থেকে ওই টিকা এনে বাংলাদেশে সরবরাহ করার জন্য গত অগাস্টে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে দেশের ওষুধ খাতের শীর্ষ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। আর সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে চলতি মাসের শুরুতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার।

বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসই সরকারকে ওই ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে।

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউট ভারত সরকারকে যে দামে ভ্যাকসিন বিক্রি করবে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে। আমরা আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন সম্পর্কে সুখবর পাওয়া যাবে। তারপর থেকেই বাংলাদেশের ভ্যাকসিন পাওয়া শুরু হবে।’

করোনাভাইরাসের মহামারিতে অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলানোর জন্য প্রকৃত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) প্রণোদনার ঋণ দিতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলেও জানান সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলানোর জন্য সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, এর মধ্যে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তরা ঋণ পেয়েছেন। অনেকেই পান নাই। যেটা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। গঠনমূলক সমালোচনা ঠিক আছে। কিন্তু এটা নিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে, যা ঠিক না। করোনার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা যে সমস্যায় পড়েছেন, সে বিষয়ে সরকার অবগত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যেই ৫ হাজার কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। প্রকৃত এসএমই উদ্যোক্তাদের না পাওয়ায় মূলত ঋণ বিতরণে সমস্যা হচ্ছে। সরকার এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি খাতে এসএমই উদ্যোক্তাদের নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। মূল লক্ষ্য হলো- প্রকৃত এসএমই উদ্যোক্তারা যেন প্রণোদনার ঋণ পায়।

 

ফ্রিল্যান্সারদের বিষয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ফ্রিল্যান্সাররা নিবন্ধন করতে পারলে তাদের কাজের সুযোগ বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সারদের নিবন্ধন বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে।

 

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি এই উপদেষ্টা বলেন, দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক ইতিবাচকভাবে এগোলেও গড় জিডিপি অনুপাত কাঙ্খিত পর্যায়ে আসেনি। এমনকি বন্ড মার্কেটও কার্যকর নয়। অনেকেই বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু গড় জিডিপির অনুপাত বাড়ছে না কেনো। আমাদের কাছেও এর সঠিক উত্তর নেই। তবে করের আওতা বাড়ানো না গেলে এই সূচকটির উন্নতি করা যাবে না। এমনকি কর বিষয়ে ব্যবসায়ীরা যে হয়রানির কথা বলেন তাও কমবে না।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইউন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন ও আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ।

 

ঢাকাটাইমস/২৩নভেম্বর/ইএস