বিদেশে পড়ার সুযোগ পেতে দিতে হয় যেসব পরীক্ষা

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২০, ১১:৩৯ | প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০২০, ১০:৪৫

বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে আরও বেশি শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হয়ে উঠছে। কেউ স্নাতক আবার কেউ স্নাতকোত্তর করতে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। এছাড়াও বিভিন্ন কোর্স ও ডিপ্লোমা করতেও ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে যেতে আগ্রহী অনেক শিক্ষার্থী।

বিদেশে পড়ালেখার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের শুরুতেই কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। কেউ চায় আইইএলটিএস আবার কেউ চায় জিআরই। এছাড়া বিদেশে পড়াশোনার জন্য বেশ কয়েকটি পরীক্ষার প্রচলন রয়েছে। চলুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।

আইইএলটিএস

ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা যাচাই করার একটি আন্তর্জাতিক পরীক্ষা হলো ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম (আইইএলটিএস)। বিশ্ব জুড়ে ৯০০০ এরও বেশি প্রতিষ্ঠানে স্বীকৃত এই পরীক্ষা, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, অভিবাসন বিভাগ, সরকারি এজেন্সি, বহুজাতিক সংস্থা ইত্যাদি। যুগ্মভাবে পরীক্ষাটি পরিচালনা করে ব্রিটিশ কাউন্সিল, আইডিপি আইইএলটিএস অস্ট্রেলিয়া এবং কেমব্রিজ ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাসেসমেন্ট।

আইইএলটিএস পরীক্ষা দু’ধরনের হয়। একটি অ্যাকাডেমিক, অন্যটি জেনারেল ট্রেনিং। যেসব দেশের মাতৃভাষা ইংরেজি, সেসব দেশে পড়তে যাওয়ার জন্য এই পরীক্ষা দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। আর যারা কাজের অভিজ্ঞতার জন্য বা কোনো প্রশিক্ষণ নিতে কিংবা কোনো ইংরেজিভাষী দেশে প্রবাসী হতে চান, তাদের জেনারেল টেস্ট দিতে হয়।

পরীক্ষায় চারটে বিভাগ থাকে: লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং ও স্পিকিং। মোট সময় ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। লিসেনিং, রিডিং ও রাইটিং টেস্টগুলো একই দিনে হয়ে যায়। স্পিকিং টেস্ট অন্যান্য পরীক্ষাগুলোর দিনেও হতে পারে বা সপ্তাহখানেক আগে বা পরে হতে পারে।

আইইএলটিএস পরীক্ষার বিষয়ে জানতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইট www.britishcouncil.in ভিজিট করতে পারেন।

জিআরই

আমেরিকা, কানাডাসহ বিশ্বের বহু দেশের গ্র্যাজুয়েট প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাস্টার্স এবং পিএইচ ডি স্তরে ভর্তি হতে ‘গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশনস’ বা জিআরই দিতে হয়। বিশ্ব জুড়ে হাজারেরও বেশি বিজনেস স্কুলও এখন তাদের এমবিএ এবং অন্যান্য বিজনেস প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার ক্ষেত্রে জিআরই স্কোর দেখে নেয়।

জিআরই পরীক্ষা দু’রকমের— জেনারেল এবং সাবজেক্ট টেস্ট। গ্র্যাজুয়েট স্কুলগুলোতে মোটামুটি ভাবে জিআরই জেনারেল টেস্টের স্কোরই চাওয়া হয়। জেনারেল টেস্টে তিনটি বিভাগ থাকে: ১) অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং; ২) ভার্বাল রিজনিং; এবং ৩) কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিং।

মোট ছ’টি সেকশন। অ্যানালিটিক্যাল রাইটিংয়ে দু’টি টাস্ক থাকে, ‘অ্যানালাইজ অ্যান ইস্যু’ আর ‘অ্যানালাইজ অ্যান আর্গুমেন্ট’। প্রতিটি টাস্কের জন্য আধ ঘণ্টা করে সময় দেওয়া হয়। ভার্বাল রিজনিংয়ের দু’টি বিভাগে ২০টি করে প্রশ্ন থাকে। এখানেও এক একটি বিভাগের জন্য সময় থাকে আধ ঘণ্টা করে। কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিংয়ের দু’টি বিভাগেও ২০টি করে প্রশ্ন থাকে, উত্তরের জন্য সময় দেওয়া হয় ৩৫ মিনিট করে।

অ্যানালিটিক্যাল রাইটিংয়ের বিভাগই সব সময়ে এই পরীক্ষার প্রথমে থাকে, তারপর বাকি বিভাগগুলো ক্রমানুসারে আসে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি অতিরিক্ত ‘আনস্কোরড’ অথবা ‘রিসার্চ’ বিভাগ থাকে। কম্পিউটার বেসড জিআরইতে মোট সময় লাগে প্রায় ৩ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। পরীক্ষা দেওয়ার পর ১০-১৫ দিনের মধ্যে স্কোর পাওয়া যায়। জিআরই পরীক্ষা বিষয়ে জানার ওয়েবসাইট: www.ets.org/gre

টোয়েফ্‌ল

আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো যে সমস্ত দেশের মাতৃভাষা ইংরেজি, সেখানে পড়তে যেতে হলে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার প্রমাণ দেওয়ার জন্য ‘টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাজ আ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ’ (টোয়েফ্‌ল) পরীক্ষা দিতে হয়। ১৫০টি দেশের দশ হাজারেরও বেশি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে টোয়েফ্‌ল স্কোর দেখে নেয়। এছাড়া বিদেশে কাজ ও অভিবাসনের ক্ষেত্রেও এই টেস্টের স্কোর কাজে লাগে।

কী থাকে এই পরীক্ষায়? টোয়েফ্‌ল আইবিটিতে চারটে ভাগ— লিসেনিং, রিডিং, স্পিকিং ও রাইটিং। রিডিং বিভাগে থাকে তিনটি বা চারটি রিডিং প্যাসেজ। প্রত্যেকটি প্যাসেজে থাকে ১০টি করে প্রশ্ন। লিসেনিংয়ে থাকে দু’ধরনের বিষয়— লেকচার এবং কনভারসেশন। তিন-চারটি লেকচার থাকে, ৩-৪ মিনিট লম্বা। প্রতিটি লেকচারে থাকে ৬টি করে প্রশ্ন।

অন্য দিকে, ২-৩ মিনিটের দু-তিনটি কনভারসেশন থাকে। প্রতিটায় ৫টি করে প্রশ্ন থাকে। লেকচার, ক্লাসরুম ডিসকাশন এবং কথোপকথন শুনে তার পর উত্তর দিতে হয়। স্পিকিং-এ থাকে চারটি টাস্ক। কোনো পরিচিত বিষয়ের উপর মত প্রকাশ করতে হয়। রিডিং ও লিসেনিং টাস্কের উপর নির্ভর করছে স্পিকিং। রাইটিং-এ থাকে দুটো টাস্ক। রিডিং এবং লিসেনিং টাস্কের উপর ভিত্তি করেই প্রার্থীকে প্রবন্ধ লিখতে হয়। পরীক্ষার মোট সময় দেওয়া হয় তিন ঘণ্টা। আনুমানিক ছ’দিনের মধ্যে পরীক্ষার স্কোর জানা যায়। টোয়েফল সম্পর্কে জানার ওয়েবসাইট: www.ets.org/toefl/ibt/about

জিম্যাট

শতাধিক দেশের ২১০০ এরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ৬০০০ এর কাছাকাছি গ্র্যাজুয়েট ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে ভর্তির অন্যতম মাপকাঠি হল ‘জি-ম্যাট’ বা গ্র্যাজুয়েট ম্যানেজমেন্ট অ্যাডমিশন টেস্টের স্কোর। কারও যদি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়ার ইচ্ছে থাকে এবং সে যদি বিদেশ যেতে চায়, তাহলে এই পরীক্ষায় বসা উচিত।

পরীক্ষায় থাকে চারটে বিভাগ— অ্যানালিটিকাল রাইটিং অ্যাসেসমেন্ট, ইন্টিগ্রেটেড রিজনিং, কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিং, ভার্বাল রিজনিং। মোট সময় দেওয়া হয় ৩ ঘণ্টা ৭ মিনিট। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে চেক ইন করতে হয়। পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার প্রায় তিন সপ্তাহের মধ্যে পাওয়া যায় আনুষ্ঠানিক স্কোর।

কোভিডের কারণে এখন জিম্যাট অনলাইন এক্সামিনেশনও পরিচালিত হচ্ছে। এখানে থাকে তিনটি বিভাগ— কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিং, ভার্বাল রিজনিং এবং ইন্টিগ্রেটেড রিজনিং। সময় ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট, ১৫ মিনিট থাকে চেক ইন এর জন্য। স্কোর পাওয়া যাবে সাত দিনের মধ্যে। এ বিষয়ে জানার ওয়েবসাইট: www.mba.com/exams/gmat.

স্যাট

আমেরিকায় কলেজ স্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা ও সম্ভাবনা কতটা, তা যাচাইয়ের জন্য তিন প্রকারের পরীক্ষা হয়ে থাকে। এগুলো হল, স্যাট রিজনিং টেস্ট, স্যাট সাবজেক্ট টেস্ট এবং এসিটি বা অ্যাক্ট টেস্ট। যদিও আমেরিকার অনেক কলেজেই ভর্তির ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাগুলোর স্কোর বাধ্যতামূলক নয়। যাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তাদের মধ্যে বেশির ভাগ কলেজ স্যাট রিজনিং অথবা অ্যাক্ট টেস্টের স্কোরকে সমান গুরুত্ব দেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে সাবজেক্ট টেস্টের স্কোরও চাইতে পারে। স্যাট রিজনিং এবং স্যাট সাবজেক্ট টেস্ট আমেরিকার কলেজ বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়।

স্যাট রিজনিং-এ চারটে বিভাগ থাকে— রিডিং (প্যাসেজ এবং সেনটেন্স কমপ্লিশন), রাইটিং অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ (প্রবন্ধসহ ব্যাকরণ, শব্দের ব্যবহার, বাক্যে ভুল অংশ নির্ধারণ ইত্যাদি), ম্যাথমেটিক্স (অ্যারিথমেটিক অপারেশনস, অ্যালজেব্রা, জিয়োমেট্রি, স্ট্যাটিসটিক্স এবং প্রোব্যাবিলিটি), প্রবন্ধ। প্রবন্ধ বিভাগটি ঐচ্ছিক। এখানে ৫০ মিনিটে একটি প্রবন্ধ লিখতে হয়। পরীক্ষার্থী চাইলে শুধু প্রথম তিনটি বিভাগের জন্য পরীক্ষায় বসতে পারে।

এই পরীক্ষায় বসতে অনলাইনে রেজিস্টার করতে হয়। আবেদন করার জন্য https://collegereadiness.collegeboard.org/sat ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়।

এসিটি বা অ্যাক্ট টেস্ট

বেশির ভাগ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য এসিটি টেস্টের স্কোর গ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক স্তরে বছরে পাঁচ বার হয় এই পরীক্ষা— সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, ডিসেম্বর, এপ্রিল এবং জুন। এই টেস্টের মূলত চারটে ভাগ: ইংরেজি, ম্যাথমেটিক্স, রিডিং ও সায়েন্স। এছাড়া পরীক্ষার্থী যদি চায়, তাহলে পরীক্ষার সঙ্গে জুড়তে পারে প্রবন্ধ বিভাগ।

ঢাকা টাইমস/২৪নভেম্বর/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :