অণুকাব্য: পঞ্চপর্ণ: উদ্ধৃতি (পর্ব ছয়)
১৫৬.
আমি যখন মগ্ন ঘুমে,রইলে তুমি জেগে,
তাইতো সুখের স্বপ্ন এসে ভীষণ গেলো রেগে।
সুখ চেয়োনা, পাথর চেপে কষ্ট শুধু সও,
সুখটা এসে হাসলে কাছে বলবে,' বিদায় হও।'
সুখকে যদি আমল না দাও তবেই পাবে সুখ,
চাইলে তারে, দাম বাড়ে তার,ফিরিয়ে নেবে মুখ।
সুখ যে তুমি চাও সে খবর সুখ যেনো না জানে,
রাখলে তারে দূরে দূরে সে যে কাছে টানে।
১৫৭.
পরের রুটি বেলিস নে,
আগুন নিয়ে খেলিস নে,
খেদের ঝাঁপি মেলিস নে,
পাপের দিকে হেলিস নে,
লক্ষ্মী পায়ে ঠেলিস নে,
চোখের জল আর ফেলিস নে।
১৫৮.
কী নেবে গো রাজার দুলাল?
-পংখিরাজ আর আবীর গুলাল।
চাষীর ছেলে, কী চাও তুমি?
-বলদজোড়া, চিলতে ভূমি।
১৫৯.
মর্ত্য থেকে মৃত্যু রথে মানুষ সোজা স্বর্গে যাবে,
দুর্ঘটনা খড়গে পড়ে হায় রে কেনো মর্গে যাবে?
১৬০.
বিশ্বে এখন আকাল ভীষণ আগুনে জ্বলছে আশা,
স্বার্থ-বেদিতে চলে বলিদান সম্প্রীতি-ভালবাসা।
১৬১.
আগুন নিজে না-পুড়ে পোড়ায়-যে ভুবন,
তুমিও পোড়োনা নিজে; পোড়াও আমার মন।।
মেঘ নিজে কেঁদে কেঁদে অশ্রু ঝরায়,
বেদনার ভার গলে বৃষ্টি ধারায়।
তুমিতো কাঁদোনা; ঝরাও আমারই নয়ন,
তুমিতো পোড়োনা নিজে, পোড়াও আমার মন।।
তোমাকে ভালোবেসে করেছি যে-ভুল
কতো কাল দেবো সেই ভুলের মাশুল?
কুলু কুলু বয় নদী কূলে কূলে কেঁদে,
দু কূলের মায়া তার বুকে বেঁধে বেঁধে।
তুমি শুধু করলে না আমাকে আপন;
তুমিতো পোড়োনা নিজে পোড়াও আমার মন।।
১৬২.
আমার চোখে তোমার প্রেমই খেলে রঙের খেলা,
আমার চোখে শ্রাবণ ঝরায় তোমার অবহেলা।
তোমার প্রেমই আমার প্রাণে বাজায় মোহন-বাঁশি,
দখিন হাওয়ার দোলায় ফোটে হাস্নাহেনার হাসি।
বনে বনে ফাগুন জাগায় হাজার ফুলের মেলা,
আমার চোখে শ্রাবণ ঝরায় তোমার অবহেলা।।
প্রেম যদি হায় না দাও তবে সেই বেদনার বিষাদ ভারে,
বিধুর হয়ে কাঁদে আমার সুরের সেতার তারে তারে।
ভালোবাসায় ভুবন হাসে প্রেম না পেলে কাঁদে,
তোমার প্রেমই জীবন জুড়ে প্রেম সাধনা সাধে।
বরণ করো আমার প্রেমের পূজার ব্যাকুলমালা,
আমার চোখে শ্রাবণ ঝরায় তোমার অবহেলা।।
১৬৩.
প্রজাকুলের দোষটা ভারি;
দেখায় নানান কর্তাগিরি।
চায় কেবলই এটা ওটা,
কথায় কথায় মারে খোঁটা।
“রাজ্য চলে প্রজার করে,
ভাত কেনো নেই ভূখার ঘরে?”
“এমন প্রশ্ন খুব অশোভন,
আটকে যাবে সব উন্নয়ন।
মুখ যেন সব কথার বাজার,
এই অপরাধ যোগ্য সাজার।”
তাইতো এখন বন্ধ কথা,
ফোটায় না ফুল কথার লতা।
মনের কথা সব অন্তরে,
প্রকাশ ব্যথায় গুমরে মরে।
১৬৪.
কী হিসাব নেবে আমার পাপ আর পুণ্যের,
পুণ্যের খাতে সব অংকই শূণ্যের।
বিচারের দিনে খোদা কী হিসাব দেবো আর,
পাপখাতে সব জমা বিস্তর বেশুমার।
তাওহীদে ভারি করো কৃপার ঐ পাল্লা,
বিশ্বাসে দৃঢ় আমি ‘লা শারিক আল্লাহ্ ‘।
১৬৫.
দুজনের ভাব,দুজনের ভাষা
দুজনেরই দেহ মন,
জীবনে এনেছে বেগ ও আবেগে;
জগতে বিবর্তন।
১৬৬.
স্বপ্ন বুনেছি আমি যতো মাঠ ভরে,
সব মাঠই পরিনত হলো বালুচরে।
যতো ক্ষেতে করিয়াছি স্বপ্নের চাষ,
সবই দেখি হলো আজ গবাদির ঘাস।
সেই ঘাস তৃণ লতা আগাছার চারা,
অকালেই বিনাশের মাঠে গেছে মারা।
পদে পদে পণ্ডই হলো সব শ্রম,
দেহে আর নাই বল, বুকে নাই দম।
স্বপ্নের চাষাবাদে আর নাই ফল,
তিলে তিলে সব আশা গেল রসাতল।
পলে পলে তাড়া করে হতাশার ভূত,
দরজায় কড়া নাড়ে মহাযম দূত।
১৬৭.
জাল ফেলেছি সাগর জোড়া;
জাল গুটাতে ফুরায় কাল,
জালের মাঝে হাঙ্গর কুমির;
সাগর জলেই ডুবছে জাল।
১৬৮.
ধন আর মন যদি একাকার হয়,
ঘটবে না সে মনের কোনো বোধোদয়।
ধনে চাপা পড়ে মন ঝরাবেই দুনয়ন;
প্রেমিকেরা করে যাবে মিছে অভিনয়,
মন ছেড়ে ধন নিলেধনবান হয়;
ধন ছেড়ে মন নিলে; সে মনঞ্জয়।
১৬৯.
জীবনকে নিয়ে যতো গবেষণা;
সে সবের কিছু জীবন জানে না,
এতো মতবাদ, এতো দর্শন,
সেই সবে তার নেই প্রয়োজন;
জীবনকে চালায় জীবনের চাল,
মানুষের কাছে সেটাই কপাল।
১৭০.
খাঁচার পাখির গান হোক যতো মনকাড়া সুরেলা মধুর
করুক যতোই মোহন সুরের যোজনা,
সেই গান প্রকৃতিতে কোনো কালেই বসন্ত আনে না।