এক ঘুমেই ভম্বলের সাত দিন পার

আসাদ জামান, মানিকগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০২০, ১৯:০৫

এক ঘুমেই কাটিয়ে দেন টানা সাত দিন। টয়লেটেও পড়েন ঘুমিয়ে। গোসল করতে পুকুরে নামলে সকাল পেরিয়ে হয় বিকাল। একাই খেয়ে ফেলেন আট-দশজনের খাবার। মানিকগঞ্জে এমনই এক অদ্ভুত প্রকৃতির একজনের সন্ধান পাওয়া গেছে।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের অক্ষয় শীলের ছোট ছেলে ভম্বল শীল। প্রায় ২০ বছর ধরে এমন অস্বাভাবিক জীবন-যাপন চলছে বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা। পনের বছর বয়স পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিল ভম্বল। তারপর থেকেই তার এমন পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।

ভম্বল শীলের ভাই সংকর শীল জানান, আমার ছোট ভাই ভম্বলের বয়স ৩৮ বছর। ওর এমন সমস্যা প্রায় ২০ বছর যাবত। আগে এত গুরুতর ছিল না এই সমস্যা। দিন যাচ্ছে সমস্যা আরো বাড়ছে। আমি ফুটপাতে সেলুনের কাজ করি। দিনে দেড় ২০০ টাকা আয় হয়। আমার যে আয় তা দিয়ে নিজের পরিবারই চলে না।

তিনি আরো জানান, দুই-তিনবার পাবনা মানসিক হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। তারা বলেছিল- দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা করলে সে ঠিক হয়ে যাবে। আমি অভাবী মানুষ। ভাইকে চিকিৎসা করানোর মত সামর্থ্য আমার নেই। অর্থের অভাবে সুচিকিৎসা হচ্ছে না ভম্বলের। সমাজের কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি যদি আমার ভাইকে চিকিৎসা করানোর দায়িত্ব নিত, তাহলে ভম্বল স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারত।

ভম্বলের ভাবি কল্পনা শীল জানান, তিনি নিজের ইচ্ছা মতই চলে। কেউ ডাকাডাকি করলেও শুনেন না। সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুমায়। ১৫/২০ দিন পরপর গোসল করে। সকালে গোসল করতে গেলে বিকালে আসে। আর একাই কয়েকজনের খাবার খেতে পারেন। সব সময় পেট ভরে খাবার খেতে দিতে পারি না আমরা। আমাদের সামর্থ্য মত যতটুকু দিতে পারি, তাতে তার হয় না। কোন অনুষ্ঠানের দাওয়াতে গেলেই পেট ভরে খেতে পারেন।

প্রতিবেশী বিপুল গোস্বামী জানান, ভম্বল না খেয়েই পাঁচ-সাত দিন পার করে দেয়। বাড়ির লোক ডাকাডাকি করলেও বলে একটু পরে উঠব। এই বলে আবার ঘুমায়। আর ও একাই এক-দেড় কেজি চালের ভাত খেতে পারে। ওর ভাই তো অভাবী মানুষ। ঠিকমত ওর চাহিদা অনুযায়ী খাবারও দিতে পারে না। দাওয়াতের কোন অনুষ্ঠানে গেলেই তৃপ্তিসহ পেট ভরে খেতে পারে।

ভম্বল শীল জানান, একটানা পাঁচ-সাত দিন ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি কোন কিছু না খেয়েই। হাজার হাজার দিন চলে গেছে দুই-চার দিন ঘুমিয়েই। একফোটা পানিও খাইনি তখন।

তিনি আরো বলেন, ছয় বছর আগে আমাকে বিয়ে করানো হয়েছিল। স্ত্রী এখন আর আমার সাথে থাকে না। বালিরটেক বাজারে দীর্ঘ কয়েক বছর রাতে পাহারাদারের কাজ করেছি। তার বিনিময়ে বাজার কমিটির লোকরা আমাকে কোন পারিশ্রমিকই দেয় নাই। মাঝে মাঝে ৫০/৬০ টাকা দিয়েছে। এভাবেই আমাকে ঠকাইছে তারা।

কেন এত ঘুমান জানতে চাইলে বলেন, আমার শরীর অত্যন্ত দুর্বল, অস্থির অস্থির লাগে- তাই খালি ঘুম আসে। আগেতো পাহারাদারের কাজ কাম করতাম, কিন্তু এখন তো কোন কাজ-কাম বা আয় রোজগার নাই- তাই ঘুমাই। আর ঘুমাইলে ক্ষুধা লাগে না।

সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ জানান, ভম্বল শীল জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যাবে, তত তাড়াতাড়িই সুস্থ হবেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :