অণুকাব্য: পঞ্চপর্ণ: উদ্ধৃতি (পর্ব সাত)
প্রকাশ | ২৪ নভেম্বর ২০২০, ২০:২৬
১৭১.
প্রেমের জন্যে নেই প্রয়োজন অনন্ত যৌবন,
এক পলকের পুলকেও ঘটে আবেগের বন্ধন।
এক ঝলকেও জেগে যায় হৃদে নন্দিত স্পন্দন,
ভুবনের রূপ বদলাতে পারে ক্ষণিকের শিহরণ।
ক্ষণিকের ভাবে বাসর সাজায় প্রেমের নন্দকানন,
এ ভাবেই প্রেম পৃথিবীতে গড়ে আনন্দ নিকেতন।
১৭২.
আগুনকে বলেছি,তুমি জ্বলো
মোমকে বলেছি, তুমি গলো:
আগুন নিজে না জ্বলে মোমকে জ্বালালো
মোমও নিজের অঙ্গ আগুনে পোড়ালো।
এরকম জ্বলা-পোড়া প্রেমের কুলুঙ্গিতে
নিত্য একাকার,
জ্বলেপুড়ে মোমের মতো দীপ্তি ছড়ায়
প্রেমেরই অঙ্গার।
১৭৩.
আমি ফুল নেবো না, ফুল-
ফুলের মাঝে থাকতে পারে কাঁটা,
থাকতে পারে জড়িয়ে অনেক ভুল-
আমি ফুল নেবো না, ফুল।
ফুলতো বলে ফুলের কথা,
মনে তোমার তার অন্যথা;
তাইতো আমার ফুলে অনেক ভয়,
পাছে এমন হয়-
তোমার মন আর ফুল যদি-না একই কথা কয়?
নিতে পারি তোমার দেয়া কাঁটা,
থাকুক তাতে যতোই ঘৃণা আঁটা।
কাঁটাতে নেই ছল-চাতুরি
ভাবের ভাষা হয় না চুরি,
কাঁটার কথা, মনের কথা এক রকমই হয়-
ফুলের মতো তাইতো আমার কাঁটাতে নেই ভয়।
১৭৪.
অষ্ট প্রহর কষ্ট করে ঝড়ালে যে ঘাম!
তোমার গণতন্ত্র এখন কোথায় আব্রাহাম?
ডান কেটেছে দখিণ হাত,বাম কেটেছে সাম্য,
এমন গণতন্ত্র ছিলো কোন মুলুকে কাম্য?
তোমার দেশেই বর্ণসাম্য বুটের তলায় কাতরায়,
উল্টো চালের গণতন্ত্র জনরোষে সাঁতরায়।
ব্যর্থ হলো তোমার সকল গণতন্ত্রের চেষ্টা,
দুগ্ধ ঘৃত দধি খাচ্ছে নব্য যুগের কেষ্টা।
১৭৫.
কোন রঙে যে রাঙবো কখন
বুঝি না তার মুণ্ডু মাথা!
রঙের এমন গোলক ধাঁধাঁয়
ঘুরছে মাথা; কলের যাতা।
১৭৬.
বাঁধন কষতে কষতে যতোটা শক্ত কষা-ই কষবে,
ততোই ত্বরিতে সকল বাঁধন খড়কুটো হয়ে খষবে।
১৭৭.
পূর্ণিমা চাঁদকে আমি বলেছি সেদিন,
এই দিনই দিন না;আছে আরো দিন।
পরিণাম না ভেবে তো বাঁধ ভাঙ্গা হাসি হাসা
নয় সমীচীন,
সে হিসাব রেখে হেসো,অমাবস্যা আসতে আর
বাকি কতো দিন!
১৭৮.
ওদের সিঁড়িতে গালিচা গিলাফ আল্পনা কারুকাজ,
তোমার সিঁড়িতে ঝুলানো ত্রিশূল,পাতা করাতের খাঁজ।
ওদের সিঁড়ি সোনার আখরে লিখে উত্থান সমাচার,
তোমার সিঁড়ির করাত গুঁড়োতে পতনের হাহাকার।
সিঁড়ি বেয়ে ওরা উঠছে উপরে তুমি সিঁড়ি ভেঙে নীচে,
ওরা চলে যায় শীর্ষ-শেখরে তুমি পড়ে থাকো পিছে।
ওদের সিঁড়ি ও তোমার সিঁড়িতে যোজন যোজন ভেদ,
ওদের সিঁড়িতে তৃপ্তির হাসি,তোমার সিঁড়িতে খেদ।
সময় ওদের অনুকূলে তাই সিঁড়িও এদের সখা,
সকল কীর্তি-মহিমা লিখছে কালের ভাগ্যরেখা।
‘ওদের বা তোমার’ বলে কিছু নেই; সবই সময়ের সিঁড়ি,
মহাকাল স্রোতে ভেসে যায় সব সময়ের বাবুগিরি।
১৭৯.
তোমাকে বোঝাতে বোঝাতে
আহ্নিক-বার্ষিক গতির পালা যদি হয়ে আসে শেষ,
তোমাকে বুঝতে বুঝতে দমের রাজ্য থেকে
যমের জঠরে আমি হলে নিরুদ্দেশ;
তখন তোমাকে খুঁজে পাই যদি লোকোত্তরের কোনো সীমানায়,
তখনো তোমাকে বোঝাবো; ক্যামন করে মর্ত্যাতীত প্রেম
পূর্ণ হয় কানায় কানায়।
১৮০.
ভালোবাসা কোন হিসাবের খাতা নয়,
ভালোবাসা কোন ডায়েরির পাতা নয়;
ভালোবাসা হলো হৃদয়ে হৃদয়ে কথা,
হৃদিনন্দনে পুষ্পিত চারুলতা।
১৮১.
বেঁধেছো আমাকে এমন শক্ত বাঁধনের পর বাঁধনে,
বাঁধন টুটেনা; আমার নিযুত চেষ্টা সাধ্য সাধনে।
ছিঁড়তে চাইলে সে বাঁধন আরো শক্ত বাঁধনে বাঁধে,
শাস্তিও মিলে বাঁধন ছেঁড়ার চেষ্টার অপরাধে।
১৮২.
কোন তীরে বাঁধা তরী,কোন তীরে ভাসবে!
কোন প্রাতে সোনা রোদে অনাগত হাসবে!
কোন মাঝি লগি হাতে কোন তরী বাইবে!
কোন সাঁই মেঠো পথে মরমীয়া গাইবে!
সে লীলার সব চাল একজনই চালবে,
করুণার বরিষণে সুধাধারা ঢালবে।
১৮৩.
মাল্লারা সব ডুবলো জলে
সর্বনাশা জলের ঢলে,
ভাঙ্গা হালে ছেঁড়া পালে
কূল পাবে নাও কেমন করে?
তুমি মাঝি থাকলে রাজি
ভাঙ্গা তরী ভিড়ে তীরে।
১৮৪.
পেখম-তোলা ময়ূর পালক,
পাখির কূজন, দাদীর শোলক,
বায়না-ধরা খোকার সাথে মায়ের মধুর দ্বন্দ,
আনন্দরে আনন্দরে সবখানেই আনন্দ ।
১৮৫.
সুখ আর দু:খ যেন সহোদর ভাই,
বিষাদে বেহালা বাজায় হরষে সানাই।
১৮৬.
গরীবের দু:খ যদি দিলে না বাজে,
সিয়াম সাধনা তবে আসে কোন কাজে?
কী তাকওয়া অর্জন করে রোজাদার,
অভুক্ত থাকে যদি প্রতিবেশী তার?
আর্থিক অনটনে যারা অসহায়,
ঈদের খুশিতে যদি অংশ না পায়;
বিত্তবানের তাতে থাকে ভারি দায়
ইবাদত কবুলের কী তবে উপায়?
১৮৭.
আল্লাহ্ আল্লাহ্ জপলি মন,
পাইলি না তাঁর দরশন,
নবীর নূরের পিদিম জ্বেলে;
খুঁজে নে সেই গুপ্তধন।
১৮৮.
মাদকে যদি কারো হয় হাতেখড়ি,
তার হাতে বেঁধে দিও সময়ের ঘড়ি।
দেখবে সে তার আয়ু
জীবনের প্রাণবায়ূ
নিঃশেষ হয়ে যায় কতো ত্বরা করি।
১৮৯.
মাদক সেবন করেই যদি সাধক হওয়া যেতো,
সব মাতালই স্বর্গে যাবার আগাম সনদ পেতো।
১৯০.
নেশাখোর নেশাখোর
নেশা হলো পেশা তোর;
জানো; তবে মনো না যে
নেশা যমঘেষা ঘোর।
১৯১.
খাঁটি প্রেমের আশায় যতোই জীবন করো মাটি-
প্রেম পাবে না খাঁটি;
নকল প্রেমই আসল প্রেমের মারবে গালে চাটি।
আসল প্রেমের আস্তানাতে প্রেম-বিনাশী অস্ত্র হাতে
চৌকি বসায় মেকি প্রেমের ঘাঁটি।
প্রেম পাবেনা আসল,তবে কষ্ট পাবে খাঁটি,
প্রেমতো এখন সোনার হরিণ,সোনার পাথরবাটি।
১৯২.
প্রেম চাইলাম প্রেম দিলে না;
বললে, সেটাই ভালো—
বিচ্ছেদের এই অগ্নিশিখায়
প্রেমের পিদিম জ্বালো।
১৯৩.
প্রেমের সাগরে থাকে থৈ থৈ জল ,
সে সাগরে ডোবে প্রেম ব্যর্থ বিফল !
এক ঘটি জল তুলে সে সাগর থেকে,
দরদের দরিয়ার হৃদে দাও রেখে ।
১৯৪.
মাশুকে ইলাহি আর আশেকে রাসূল,
কার দিদারের ইন্তিজারে কে ছিল ব্যাকুল
বেশি, কে ছিল ব্যাকুল?
১৯৫.
জীবন যদি সংজ্ঞা খুঁজে নিজের সঙ্গা হারায়,
যমদূত এসে আলিঙ্গনের শীতল বাহুই বাড়ায়।
১৯৬.
জীবন নিজের সংজ্ঞা খুঁজে নিজেই বেকারার,
সে আর আমায় কী দেবে প্রেম-প্রীতি উপহার ?
১৯৭.
জীবন যখন জ্বলে পুড়ে নিজেই ফানা-ফানা,
আমার মাথার উপর দেবে কিসের সামিয়ানা!
১৯৮.
জীবন আমার পরীক্ষা লয় খাতা দেখি আমি,
খাতার আদি-অন্তে দেখি ভুলের সালতামামি ।
পরিক্ষার্থী নিজেই যখন নিজের পরীক্ষক,
নিয়তির আর কী দায় তখন;বাঁধা যে তার ছক।
১৯৮.
সর্প ও শয়তান হরিহর আত্মা;
চোরে চোরে মাসতুতো ভাই,
আদম আর হাওয়াকে স্বর্গচ্যুত করে
দুনিয়ায়ও পিছু ছাড়ে নাই।
সর্প ও শয়তান
থেকে হও সাবধান,
এরা আনে মৃত্যু ও
নরকের ফরমান।
১৯৯.
হিসেব নিকেষ করে যে প্রেমিক চায় কেবলই জিততে,
সেই প্রেম তবে খাঁটি নয় মোটেই; মিথ্যে-মিথ্যে-মিথ্যে।
২০০.
অমর জীবন চেয়ে কেনো রে কাঁদিস মন !
জীবনের চেয়ে বেশি যৌবনই প্রয়োজন।
যৌবন গত হলে
অমর জীবন পেলে;
দুর্বহ হয়ে যাবে দুঃসহ সে জীবন।