ইতির চোখে মানবিক সমাজ গঠনের স্বপ্ন

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০২০, ১৪:২০ | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২০, ১৪:২১

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিটি সচেতন নাগরিকের রয়েছে দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। দেশের সব বিষয়ে তার রয়েছে আন্তরিক একটা টান, একটা উপলব্ধি। দেশের যেকোনো সংকটে সে যেকোনো ধরনের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে, বিলিয়ে দিতে পারে নিজেকে দেশের জন্য। প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের দেশ নিয়ে একটা পরিকল্পনা থাকে। তিনি ভাবেন কীভাবে দেশের কল্যাণে কাজ করে দেশকে পৃথিবীর বুকে পরিচিত করা যায়।

করোনা সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও আঘাত হেনেছে। লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে সব কিছু। করোনা নতুন সংক্রমণ ব্যাধি হওয়ায় মানুষের মাঝে এক ধরনের ভয়ের কাজ করছিল সবসময়। এমনই মুহূর্তে সব ভয়কে জয় করে দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আয়শা আক্তার ইতি। 

ইতি বলেন, করোনা আক্রান্তের হার যখন বেশি ছিল সে সময় আমরা দিনরাত কাজ করেছি। এর আগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বা অন্য সংগঠনের সাথে কাজ করেছি। শীতবস্ত্র বিতরণ, পথশিশু শিক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ, বৃদ্ধাশ্রমে অসহায় বাবা-মাকে ঈদ উপহার দিয়েছি বিভিন্ন সময়। করোনার সময়ে নিজের গ্রামের মানুষের কষ্ট দেখে প্রথম ভাবলাম ২-৪ জনকে সহায়তা করব বন্ধুরা মিলে, কিন্তু মানুষ এতটাই অসহায় ছিল যে, ২-৪ জন বন্ধু মিলে কিছু করার মতো না।

পরবর্তীতে ‘ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ আর্মি’ নামে সংগঠন গড়ে তুলি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও বড় ভাই-আপুদের পরামর্শে এবং তারপর থেকে গ্রামে গ্রামে গিয়ে আমরা অসহায় মানুষের লিস্ট করতাম। ফান্ড কালেক্ট করে তাদের জরুরি খাদ্য সহায়তা, যাদের চাকরি গেছে তাদের আর্থিক সহায়তা, চিকিৎসা সহায়তা, রমজান উপহার, ঈদ উপহার, জনসচেতনতা বিষয়ক ক্যাম্পেইন: মাস্ক আপ বাংলাদেশ করেছি। আমরা প্রথম দিকে খুব অল্প সংখ্যক ভলান্টিয়ার নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। পরবর্তীতে ১৪ জেলায় প্রায় ২৫ জন ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে ৭০০ পরিবারের কাছে আমাদের জরুরি সহায়তাগুলো পৌঁছে দিতে পেরেছি।

আমাদের মাস্ক আপ বাংলাদেশ ক্যাম্পেইন এখনো চলছে, মানুষকে করোনার দ্বিতীয় ধাপ সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে আমরা বর্তমানে ক্যাম্পেইনটি পরিচালনা করছি। কাজ করছি সমাজের অবহেলিত শ্রেণির মানুষদের নিয়ে। ভবিষ্যতে দুস্থ নারীদের স্বাবলম্বীকরণ ও অবহেলিত শ্রেণির পরিবারগুলোর শিশুদের মৌলিক অধিকার নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাও রয়েছে আমাদের।

করোনার জন্য শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি, ক্লাস হচ্ছে না। কিন্তু ক্লাস কিংবা পড়াশোনা থেমে নেই। পারিবারিক অর্থনৈতিক স্থবিরতা হয়তো বারবার থামিয়ে দিচ্ছে তাদের পড়াশোনা। আমি চেয়েছি গ্রাম ও শহরের যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনার প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনতে পারছে না, তাদের সেই উপকরণ উপহার দেওয়া যাতে তারা পড়াশোনা না থামিয়ে দেয়। তবে শিক্ষা উপকরণ উপহার প্রজেক্টে আমরা বিভিন্ন কলম-খাতা জাতীয় কোম্পানিগুলোর সাথে কাজ করার চিন্তা-ভাবনা করছি। এছাড়াও সমাজের বিত্তবান ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিতে চাচ্ছি।

ইতি জানান, এ ধরনের কাজের অনুপ্রেরণা তিনি নিজ থেকেই পেয়েছেন। নিজ থেকেই নিয়েছেন উদ্যোগ। কিন্তু পাশে পেয়েছেন সবসময় তার পরিবারকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বড় ভাই-বোন, সহপাঠী ও বিভিন্ন ক্লাবের মানুষজনকে। 

করোনাকালীন সময়ে সমাজের অসহায় মানুষের জন্য কাজ করার সম্মাননাও পেয়েছেন ইতি। পেয়েছেন জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০২০। গত ১৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর আইটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন। যেখানে ৩০টি সংগঠন পাচ্ছে এই অ্যাওয়ার্ড। ইতি স্বপ্ন দেখছে একটি মানবিক সমাজ গঠনের।

লেখক: মো. শাহিন রেজা, শিক্ষক

ঢাকাটাইমস/২৫নভেম্বর/এসকেএস