ন্যায়বিচার নিশ্চিতের অভাবে কন্যাশিশু নির্যাতন মহামারি হচ্ছে: টিআইবি

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০২০, ২১:১৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

করোনা মহামারি স্বাস্থ্য সংকটের পাশাপাশি নারীর ওপর সহিংসতা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো পাশবিক অপরাধের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের অভাবে ক্রমান্বয়ে তা মহামারির মতোই ছড়িয়ে পড়ছে। নারী ও কন্যাশিশুর ওপর সহিংসতা বন্ধে সর্বজনীন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

নারী ও কন্যাশিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী ১৬ দিনের কর্মসূচির প্রাক্কালে আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেন টি্আইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তাতে বলা হয়, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, আর্থিক অসচ্ছলতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশের অদক্ষতা, অবহেলা ও পক্ষপাতিত্ব, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, নিরাপত্তাহীনতা এবং সম্পদ ও ক্ষমতার যোগসাজশসহ চলমান করোনা সংকটের কারণে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনা ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে বলে মনে করে টিআইবি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যথাসময়ে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবে ধর্ষণের মতো অপরাধ প্রতিরোধ করাও সম্ভব হচ্ছে না।

নির্যাতিত নারীদের আইনি সহয়তা দেয় এমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিসংখ্যান তুলে ধরে টিআবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, `করোনা মহামারি স্বাস্থ্য সংকটের পাশাপাশি নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাকেও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ নারী নির্যাতনের ঘটনা ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছে ১৯২ জন। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে পারিবারিক নির্যাতনে খুন হয়েছে ২৩৫ জন নারী। একই সঙ্গে, ধর্ষণের মতো পাশবিক অপরাধের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের অভাবে ক্রমান্বয়ে তা মহামারির মতোই ছড়িয়ে পড়ছে।”

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এবং পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০ বলবৎ থাকার পরও এসব আইনে দায়ের হওয়া মামলায় খুব কমই দোষীদের সাজা হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন ইফতেখারুজ্জামান।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সরকারি ৯টি ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের একটির হিসাবে প্রায় ১১ হাজার নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নির্যাতনের ন্যায়বিচার পেয়েছে। বাদ বাকি ৯৯ শতাংশ ঘটনার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়নি।

একইভাবে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে বর্তমানে ১৫ শত মামলা বিচার কার্যক্রম বন্ধ থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ করার মাধ্যমে বিচারহীনতার ঝুঁকি সৃষ্টি করা হচ্ছে। আইনের এই মারপ্যাচ ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। দুঃখজনকভাবে এক ধরনের ধারণার জন্ম হয়েছে যে, সময় ক্ষেপণের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ করতে পারলে শাস্তি এড়ানো সম্ভব হবে।

হত্যাকাণ্ডের অনেক ঘটনারই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. জামান বলেন, “তনু হত্যাকাণ্ড, নুসরাত হত্যাকাণ্ড, ফেনীর সোনাগাজীর ঘটনা,  সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনার পেছনে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অদক্ষতা বা পক্ষপাতিত্ব, ক্ষমতা, প্রভাব ও রাজনৈতিক পরিচয়ের যে অশুভ আঁতাত দেশবাসী লক্ষ্ করেছে, তা সতিই উদ্বেগজনক।

তিনি  আরও বলেন, বিচারহীনতার এই সংস্কৃতির বাতাবরণে প্রকৃত অর্থে দুর্বৃত্তরাই উৎসাহ পাচ্ছে। সবাইকে সম্পৃক্ত করে নারী ও কন্যাশিশুর ওপর সহিংসতা বন্ধে সর্বজনীন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।

(ঢাকাটাইমস/২৫নভেম্বর/মোআ)