করোনা পজিটিভ হলে আইসোলেশনে যেভাবে থাকবেন

প্রকাশ | ২৬ নভেম্বর ২০২০, ১২:৫৩ | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২০, ১৩:৩৩

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

বিশ্বব্যাপী মহামারি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মানুষকে ভোগাচ্ছে। অনেকের গলাব্যথা নেই। নেই জ্বর। তবে রোগী করোনা পজিটিভ। ক্রমশই বাড়ছে এমন উপসর্গহীন করোনা রোগীর সংখ্যা। করোনার লক্ষণ দেখা দিলেও টেস্ট করার আগ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায় না যে ওই ব্যক্তি আসলেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না। টেস্ট করার পর পজিটিভ বলে শনাক্ত হলে অবশ্যই আলাদা এক ঘরে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে। যাতে করে তার কাছ থেকে পরিবারের অন্য কেউ বা অপরিচিত কারও মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে।

আইসোলেশনে থাকার সময় সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কী কী করবেন তার একটি রুটিন বা তালিকা তৈরি করুন এবং মেনে চলার চেষ্টা করুন।

খাওয়া, ঘুম, শরীর চর্চা, বিনোদনমূলক কাজ কখন কত সময় ধরে করবেন তার আলাদা আলাদা তালিকা তৈরি করা যেতে পারে।

আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তির যিনি দেখাশোনা করেন সেই ব্যক্তির সাথে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে এবং মাস্ক ব্যবহার করে যোগাযোগ করা, কথা-বার্তা বলা যেতে পারে।

করোনাভাইরাস পজিটিভ হলে অনেকেই ঘাবড়ে যান। মনোবল হারিয়ে ফেলেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, মনোবল না হারালে এবং মানসিকভাবে শক্ত থাকাই এসব লক্ষণ থেকে সেরে ওঠার প্রাথমিক শর্ত।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে ঘুমের বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে আইসোলেশনে থাকার সময় একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। সেই সাথে দুপুরে এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেয়া যেতে পারে।

শারীরিক অবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে শরীরটাকে সচল রাখার জন্য তাকে হালকা ব্যায়াম করতে হবে। তবে যেহেতু এ সময় জ্বর থাকে তাই ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলতে হবে।

রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। আর সেটি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছালে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হতে পারে। সেকারণে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক আছে কি না তা পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

করোনায় আক্রান্ত হলে সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সময় পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সবল হয়।

গলা ব্যথা বা গলায় খুসখুস করলে, ভারী হয়ে থাকলে বা গলায় কিছু জমে আছে এমন অনুভূতি থাকলে গরম পানি খেলে বা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করলে আরাম বোধ হয়। সেটি করা যেতে পারে।

আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় লবণ দৈনিক মাত্র ৫ গ্রাম খেতে হবে। এর বেশি নয়। লবণে প্রচুর পরিমাণ সোডিয়াম রয়েছে। তা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। শুরু হয় হৃদরোগের সমস্যা। এই সময় এমনিই রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমতে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ বিপদ ডেকে আনতে পারে।

চিনি ভুলে যান রোজকার খাবার থেকে। মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করলে খেজুর কিংবা টাটকা মওসুমি ফল খান। অতিরিক্ত চিনি ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা কমে গেলে ভাইরাস ভয়াল আকার নেবে।

বারবার নয় চা-পান/বাজারি প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট: অনেকে বারবার চা খাচ্ছেন। অবিলম্বে বন্ধ করুন। বেশি চা খেলে শরীরে ডিহাইড্রেশন হয়। দিনে দু’বারের বেশি চা খাবেন না। দিনে বেশি চা জাতীয় পানীয় খেতে ইচ্ছে করলে গ্রিন টি খান।

হোম আইসোলেশনে কোনোভাবেই বাসি অথবা ঠান্ডা খাবার খাবেন না। খাবার গ্রহণ করার আগে অবশ্যই তা ফুটিয়ে নিন। ঠান্ডা খাবারে যদিও বা জীবাণু জন্মায় ফুটিয়ে নিলে তা শেষ হয়ে যাবে।

এই কয়টা দিন ফ্রিজের খাবার ভুলে যান। শরীরের তাপমাত্রার সঙ্গে ফ্রিজের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক। দুই ধরনের তাপমাত্রা শরীরে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

কোনো কায়দার রান্না নয়। আধাসিদ্ধ খাবার বাদ দিয়ে পুরোপুরি রান্না করা খাবার খান।

আদা-রসুন-পেঁয়াজ-হলুদ: এই চার অস্ত্র ভাইরাসের যম। করোনা চিকিৎসায় এবং ভাইরাস ঠেকাতেও এদের জুড়ি মেলা ভার। পেঁয়াজে থাকে ভিটামিন সি-সালফার, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম। রসুনের ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, সালফার আর আদার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান ভাইরাস বধের মূল অস্ত্র। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কাঁচা হলুদ অব্যর্থ দাওয়াই।

দুধ রাখুন রোজকার খাদ্যতালিকায়। যারা দুধ খেতে চান না, তারা দই অবশ্যই খাবেন। দই-দুধ অথবা ছাঁচ প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার।

বেশি পিএইচযুক্ত খাবার খেলে করোনাকে ঠেকানো সম্ভব। মোসম্বি, পাতিলেবু, পাকা পেঁপে, আমন্ড বাদাম, আনারসে আছে প্রচুর পিএইচ।

অ্যালকোহল খাওয়া বাদ দিন। বিশেষ করে ভাইরাস শরীরের নানা অঙ্গকে আঘাত করেছে। তা ঠিক রাখতে যে সমস্ত ওষুধ খাচ্ছেন অ্যালকোহল সেগুলোকে কাজই করতে দেবে না।

বারবার স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোবেন। বাড়িতে থাকলে সাবান পানি দিয়েই চল্লিশ সেকেন্ড ধরে হাত পরিষ্কার করুন। এই সাবান/স্যানিটাইজার ত্বকের করোনাভাইরাসের প্রোটিন আস্তরণকে ভেঙে দেয়। মাস্ক পরুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।

(ঢাকাটাইমস/২৬ নভেম্বর/আরজেড/এজেড)