সত্যিকারের কিংবদন্তি, বহুরূপী ম্যারাডোনা

মামুন জোয়ারদার
| আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২০, ১৮:১৬ | প্রকাশিত : ২৬ নভেম্বর ২০২০, ১৫:০৫

কয়েক দিনের ব্যবধানে দুটি নক্ষত্রের বিদায়। বাদল রায়ের পর দিয়েগো ম্যারাডোনা। বাদল দার সঙ্গে কত স্মৃতি! সেগুলো চোখের সামনে জড়ো হচ্ছে আমার। ফুটবলের নিবেদিত প্রাণ, আপদমস্তক ভালো মানুষ এবং সর্বোপরি একজন যোগ্য সংগঠক ছিলেন বাদল রায়। তার মৃত্যু বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য বড় ক্ষতি। আর ম্যারাডোনার মৃত্যু তো গোটা দুনিয়ার ক্ষতি। ক্রীড়া দুনিয়ায় তার মতো বর্ণময় চরিত্র আরেকটি এসেছে বলে আমার জানা নেই। যাকে বলে ক্ষণজন্মা প্রতিভা। তারকার তারকা। সত্যিকারের কিংবদন্তি।

ম্যারাডোনা মানেই দুটি চরিত্র। একটি ফুটবল মাঠের সেরা বিনোদন দাতা। অন্যটি মাঠের বাইরের তুমুল বিতর্ক সৃষ্টিকারী। তিনি ফুটবলের ঈশ্বর। পায়ের জাদুতে মুগ্ধ করেছেন গোটা বিশ্বকে। শুধু তো ফুটবলার হিসেবে নয়, কোচ হিসেবেও তিনি উজাড় করে দিয়েছিলেন নিজেকে।২০১০ বিশ্বকাপে মেসিদের কোচ ছিলেন। ডাগআউটে ম্যারাডোনার অঙ্গভঙ্গি আজও হৃদয়ে দাগ কেটে রেখেছে।

ম্যারাডোনা। যে নাম বছরের পর বছর ধরে ফুটবলপ্রেমীদের জুগিয়েছে শিল্পের রসদ। সবুজ মাঠের ক্যানভাসে যাঁর বাঁ পা এঁকেছে অবিশ্বাস্য একাধিক ছবি। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ যার সর্বোত্তম উদাহরণ। ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম এবং জার্মানির বিরুদ্ধে ম্যারাডোনার পারফরম্যান্স ভোলা সম্ভব নয়। পিটার শিলটনকে বোকা বানানোর সেই ‘হ্যান্ড অব গড’ ইতিহাসে অমর হয়েই থাকবে চিরকাল। কী করে ভোলা সম্ভব, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অ্যাজটেক স্টেডিয়ামে তাঁর মুষ্টিবদ্ধ আস্ফালন।

১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর বুয়েনস আইরেসের এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম। পেটে খিদে নিয়েও স্বপ্ন সার্থক করার জন্য ফুটবলই ছিল যাঁর একমাত্র সঙ্গী। রাজধানীর ক্লাবেই (আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্স) তাঁর ফুটবলে পায়েখড়ি।

সালটা ১৯৭৬। দু’বছর পরে ঘরের মাঠে আয়োজিত বিশ্বকাপে তাঁকে দলে রাখেননি কোচ লুই সিজার মেনোত্তি। অভিমানে ভেঙে পড়েননি ডিয়েগো। বরং এই ঘটনা জেদ বাড়িয়েছিল তাঁর। ১৯৮২ সালে স্পেন বিশ্বকাপে তাঁকে নিষ্প্রভ করার জন্য ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ ফুটবল খেলতে বাধ্য হয় প্রতিপক্ষ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিরুদ্ধে মেজাজ হারিয়ে লাল কার্ড দেখেছিলেন ম্যারাডোনা।

কিন্তু মেক্সিকো বিশ্বকাপে দেখা গেল সম্পূর্ণ অন্য ফুটবলারকে। ডিফেন্ডারদের কঠিনতম চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য স্পর্শ করতে সফল হয়েছিলেন ডিএমটেন। ১৯৯০’তে ফাইনালে হারতে হয় ম্যারাডোনার আর্জন্টিনাকে। ’৯৪ বিশ্বকাপে পাঁচটি নিষিদ্ধ ড্রাগ নিয়ে নির্বাসিত হন তিনি।

বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? ২০০০ সালের পেলের সঙ্গে যৌথ ভাবে শতাব্দীর সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হলেন দিয়েগো। সে বছরই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হতে হল হাসপাতাল। অত্যধিক মাদক সেবনই অসুখের কারণ, জানান চিকিৎসকরা। সেই হৃদরোগ আর পিছু ছাড়েনি। ২০ বছর পর ২৬ নভেম্বর সেই হৃদরোগই থামিয়ে দেয় তাঁর হৃদস্পন্দন।

তিনি ছিলেন প্রচণ্ড দেশপ্রেমীক এবং কিউবার প্রয়াত অবিসাংবাদিত নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর ভাবশিষ্য। আর্জেন্টিনা বা ফিদেল কাস্ত্রো সম্পর্কে কেউ নেতিবাচক মন্তব্য করলেই প্রতিবাদে গর্জে উঠতেন ম্যারাডোনা। তার মনটা ছিল শিশুর মতো। সব সময়ই মুখে সারল্যের হাসি লেগে থাকত। হাসপাতাল থেকেও সে দিন হাসিমুখেই বেরিয়েছিলেন। বিশ্বাস ছিল, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন ম্যারাডোনা। ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুদিনেই আমাদের কাঁদিয়ে চলে গেলেন ফুটবল ঈশ্বর!

লেখক: সাবেক ফুটবল তারকা

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :