অণুকাব্য: পঞ্চপর্ণ: উদ্ধৃতি (পর্ব দশ)

ড. নেয়ামত ভূঁইয়া
| আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২০, ১২:১৫ | প্রকাশিত : ২৭ নভেম্বর ২০২০, ১২:০৮

২৩৫.

কোথা গেলো আজ সেই সুখ সুখ অনুভব!

উল্লাসে ভরা দিন আজ হায় কই সব!

দূরান্তে চলে গেলো দুরন্ত শৈশব,

সাথে করে নিয়ে গেলো ভালো লাগার ঐসব।

২৩৬.

অনন্য না হয়ে তুমি; অন্যতম হলে,

জনপ্রিয়তার ফাঁস পড়তো না গলে।

২৩৭.

জীবনের কিছু সাধ অপূর্ণ রয়,

এভাবেই জীবনটা থাকে গতিময়।

২৩৮.

জীবনের গুরুভার কতো বওয়া যায়!

ভারে ভারে বাঁচবার আশাই ফুরায়।

এক ভার নামালে আরো এক ভার,

এসে বলে, ভার থেকে নেই নিস্তার।

যেই ক্ষণে হবে তুমি পুরো নির্ভার,

বুঝে নেবে মৃত্যুই খুলেছে দুয়ার।

২৩৯.

কার কাঁধে কতটুকু ভার দেয়া যায়,

সে হিসেব লেখা থাকে বিধির খাতায়।

যতোটুকু ভার নিতে তুমি সক্ষম,

সে হিসাবে পাও তুমি জীবনের দম।

সব ভার বিধাতার ছকে থাকে বাঁধা,

সেই ছকে মানুষের সব হাসা-কাঁদা।

২৪০.

যার পথ চেয়ে প্রিয় গুনছো প্রহর,

অপেক্ষা আক্ষেপে গিলছো জহর।

বিরহের কন্টক শ্বাসে শ্বাসে বিঁধে,

বিচ্ছেদে নেই ছেদ পিয়াসার হৃদে।

হয়তো সে ফিরবে না কোনো ফাল্গুনে,

তবু করো দিন পার দিন গুনে গুনে।

মিলনে হয় না প্রেম অজর অমর,

বিরহের মাঝে প্রেম অবিনশ্বর।

২৪১.

জীবনের সব আশা পূর্ণ যদি হতো,

বাঁচবার সব সাধ তখনি ফুরাতো।

জীবনের কিছু সাধ অপূর্ণ থাকে,

এভাবে জীবন তার গতি ধরে রাখে।

২৪২.

মাতৃভূমির মাটি মায়েরই আদল,

ক্ষুধায় খাদ্য দেয়,পিপাসায় জল।

কপালের ঘাম মোছে মায়েরই আঁচল,

মাতৃভূমিই যেন মা-ই অবিকল।

মায়ের সাজেই দেখি মাতৃভূমি সাজে,

সোহাগের কোল হয় জমিনের ভাঁজে।

মা আর মাতৃভূমি: এ দুয়ের মাঝে;

ব্যবধান কোন কিছু চোখে পড়ে না-যে।

মা আর মাতৃভূমি—এ দুয়ের মান,

রক্ষায় দেয় প্রাণ দেয় বীর সন্তান।

২৪৩.

আমায় কেবল দোষী করো

তোমার দোষ কি ছিলো কম?

নাকি দোষের ভাগি সেই হয়

তোমার চেয়ে যে অধম!

ছিলাম দু’জন নন্দবনে,

বললে আমায়, ‘যাও ভুবনে’।

তোমার আদেশ কে না মানে;

শক্তি তোমার নিরূপম,

আমায় কেবল দোষী করো

তোমার দোষ কি ছিল কম?

জানতে, আমি কর্মদোষে,

পড়বো তোমার ঘৃণার রোষে

ফিরলে অপরাধির বেশে

বলবে ঠিকই ‘স্বাগতম’—

আমায় কেবল দোষী করো

তোমার দোষ কি ছিল কম?

২৪৪.

সীতার বিরহে কাতর

রাবনবধের পণে আবদ্ধ রামের মতো

আমার-যে অসময়েই তোমার আশিস ভারি প্রয়োজন,

যদিও জানিনা, তোমার কৃপায়

কতটুকু ফলবতী হবে ভক্তের অনাহুত

আবশ্যক অকালবোধন।

২৪৫.

আর একবার দিলখোলা হাসি হাসো,

আর একবার সাদা মন নিয়ে মানুষকে ভালোবাসো।

যে বিষন্নতা তোমাকে করেছে মর্মে মর্মে কাতর,

দেখবে তখন,কতো ফুল ফোটায় অভিমানি সেই পাথর!

২৪৬.

শুকনো পাতার মর্মরে; বর্ষশেষের সুর ঝরে,

নতুন দিনের লাগলো হাওয়া নবীন পাতা-পত্তরে-

নতুন বর্ষ জাগাক হর্ষ; সকল হতাশ অন্তরে।

২৪৭.

সবাই বলে, ‘নষ্ট হলো’, নষ্ট তবে কে?

নষ্টটা যার স্পষ্ট হলো; নষ্ট বুঝি সে-ই ?

যেই নষ্ট হয় না স্পষ্ট; ধোয়া তুলসী পাতা;

নষ্ট যারে তুষ্ট করে; সে হয় মাথার ছাতা।

২৪৮.

‘আমি হলে গান আর তুমি হলে সুর ,

জীবনের সংগীত হতো যে মধুর!’

কাব্যের ভাবে গলে

শবনম হেসে বলে,

‘শীঘ্রই যাবে চলে হেমায়েতপুর।’

তবু আমি তারই প্রেমে নিত্য বিভোর।

২৪৯.

কতো দিন,কতো রাত কাটাবো বলো আর তোমাকে ছাড়া,

কতো যুগ যুগ ধরে স্বপ্নের খেলাঘরে কাটাবো তন্দহারা!

ফুল তুলে কতো আর মালা গেঁথে বার বার ছিঁড়ে ফেলা যায় !

মন নিয়ে লুকোচুরি কতো খেলা যায় !

চোখ দু’টি অবিরাম ঝরাবে-যে কতো আর শাওন ধারা-

কাটাবো তন্দহারা।

সেতারের তারে তারে সুর দিয়ে বেদনারে

তোলা যায় কতো লহরি,

মিশিয়ে বিষাদ-মাধুরি !

সুদূরের বাণি শুনে শুধু দিন গুণে গুণে কতো থাকা যায় !

স্মৃতি-রঙে কতো আর ছবি আঁকা যায়?

হাজার তারার ভিড়ে যতোই তোমারে খুঁজি

পাইনা সাড়া-

কাটাবো তন্দহারা।

২৫০.

লেখালেখি যতো হোক ছাপা-যন্ত্রস্থ,

প্রকাশক যতো করে লিখা গ্রন্থস্থ;

ক’জনা যে পড়ে বই

সে হিসেব যদি লই;

দেখে সেই সংখ্যাটা হই সন্ত্রস্থ-

শিক্ষিত লোকই যেনো বেশি ব্যাধিগ্রস্ত।

২৫১.

তুমি যে সুরে সুরে বললে কথা সংগোপনে,

বুঝেছি প্রেম তখনি উঁকি দিলো মনের কোনে।

প্রেম আসে না ঢোল পিটিয়ে বাজার হাটে,

প্রেমতো আসে অজানিতে ভাবের ঘাটে।

২৫২.

ভক্তি যেমন গোপনীয়া

প্রেমও তেমন ভক্তি রূপী,

ধ্যানের ছায়ার ভাবের খেয়ায়

প্রেমের উদয় চুপি চুপি।

২৫৩.

আমার মনের কথা বলতে শুধু মুখে বাঁধে,

আমি কী চুপ করে রই সাধে সাধে!

কোনটা চেয়ে কোনটা হারাই দিন কেটে যায় সেই দ্বিধাতে,

আমি কী চুপ করে রই সাধে সাধে!

কোন চাওয়াতে সব হারালো

কোন পাওয়াতে আমার ভালো,

সেই বিপাকে গোল বাঁধালো

আমায় ফেলে অপবাদে-

আমি কী চুপ করে রই সাধে সাধে!

চাওয়া কী আর আমার সাজে!

ভুল হয়ে যায় চাওয়ার মাঝে,

দণ্ড-যে দেই সকল কাজে

চাওয়ার ভুলের অপরাধে-

আমি কী চুপ করে রই সাধে সাধে!

চাইলে তুমি কী ধন দিবে?

কোন শ্বাপদের প্রাণ বধিবে?

কোন্ পথে যে ফুল রচিবে

জড়াবোনা সেই বিবাদে-

আমি কী চুপ করে রই সাধে সাধে!

না-চাহিতে দিলে যত

সেই দানে হয় মাথা নত।

ধন্য এ মন অবিরত মাতে তোমার প্রশংসাতে-

আমি কী চুপ করে রই সাধে সাধে!

আরাধনার ফুলে ফুলে

প্রেম যা ছিল দিলাম তুলে,

মন শুধুই মনের ভুলে পড়ছে বাঁধা ধাঁধার ফাঁদে-

আমি কী চুপ করে রই সাধে সাধে!

অণুকাব্য: পঞ্চপর্ণ: উদ্ধৃতি (পর্ব দশ)

২৩৫.

কোথা গেলো আজ সেই সুখ সুখ অনুভব!

উল্লাসে ভরা দিন আজ হায় কই সব!

দূরান্তে চলে গেল দুরন্ত শৈশব,

সাথে করে নিয়ে গেলো ভালো লাগার ঐসব।

২৩৬.

অনন্য না হয়ে তুমি; অন্যতম হলে,

জনপ্রিয়তার ফাঁস পড়তো না গলে।

২৩৭.

জীবনের কিছু সাধ অপূর্ণ রয়,

এভাবেই জীবনটা থাকে গতিময়।

২৩৮.

জীবনের গুরুভার কতো বওয়া যায়!

ভারে ভারে বাঁচবার আশাই ফুরায়।

এক ভার নামালে আরো এক ভার,

এসে বলে, ভার থেকে নেই নিস্তার।

যেই ক্ষণে হবে তুমি পুরো নির্ভার,

বুঝে নেবে মৃত্যুই খুলেছে দুয়ার।

২৩৯.

কার কাঁধে কতটুকু ভার দেয়া যায়,

সে হিসেব লেখা থাকে বিধির খাতায়।

যতোটুকু ভার নিতে তুমি সক্ষম,

সে হিসাবে পাও তুমি জীবনের দম।

সব ভার বিধাতার ছকে থাকে বাঁধা,

সেই ছকে মানুষের সব হাসা-কাঁদা।

২৪০.

যার পথ চেয়ে প্রিয় গুনছো প্রহর,

অপেক্ষা আক্ষেপে গিলছো জহর।

বিরহের কণ্টক শ্বাসে শ্বাসে বিঁধে,

বিচ্ছেদে নেই ছেদ পিয়াসার হৃদে।

হয়তো সে ফিরবে না কোনো ফাল্গুনে,

তবু করো দিন পার দিন গুনে গুনে।

মিলনে হয় না প্রেম অজর অমর,

বিরহের মাঝে প্রেম অবিনশ্বর।

২৪১.

জীবনের সব আশা পূর্ণ যদি হতো,

বাঁচবার সব সাধ তখনি ফুরাতো।

জীবনের কিছু সাধ অপূর্ণ থাকে,

এভাবে জীবন তার গতি ধরে রাখে।

২৪২.

মাতৃভূমির মাটি মায়েরই আদল,

ক্ষুধায় খাদ্য দেয়, পিপাসায় জল।

কপালের ঘাম মোছে মায়েরই আঁচল,

মাতৃভূমিই যেন মা-ই অবিকল।

মায়ের সাজেই দেখি মাতৃভূমি সাজে,

সোহাগের কোল হয় জমিনের ভাঁজে।

মা আর মাতৃভূমি: এ দুয়ের মাঝে;

ব্যবধান কোনো কিছু চোখে পড়ে না-যে।

মা আর মাতৃভূমি—এ দুয়ের মান,

রক্ষায় দেয় প্রাণ দেয় বীর সন্তান।

২৪৩.

আমায় কেবল দোষী করো

তোমার দোষ কী ছিলো কম?

নাকি দোষের ভাগি সেই হয়

তোমার চেয়ে যে অধম!

ছিলাম দু’জন নন্দবনে,

বললে আমায়, ‘যাও ভুবনে’।

তোমার আদেশ কে না মানে;

শক্তি তোমার নিরূপম,

আমায় কেবল দোষী করো

তোমার দোষ কি ছিল কম?

জানতে, আমি কর্মদোষে,

পড়বো তোমার ঘৃণার রোষে

ফিরলে অপরাধির বেশে

বলবে ঠিকই ‘স্বাগতম’—

আমায় কেবল দোষী করো

তোমার দোষ কি ছিল কম?

২৪৪.

সীতার বিরহে কাতর

রাবনবধের পণে আবদ্ধ রামের মতো

আমার-যে অসময়েই তোমার আশিস ভারি প্রয়োজন,

যদিও জানি না, তোমার কৃপায়

কতটুকু ফলবতী হবে ভক্তের অনাহুত

আবশ্যক অকালবোধন।

২৪৫.

আর একবার দিলখোলা হাসি হাসো,

আর একবার সাদা মন নিয়ে মানুষকে ভালোবাসো।

যে বিষন্নতা তোমাকে করেছে মর্মে মর্মে কাতর,

দেখবে তখন,কতো ফুল ফোটায় অভিমানি সেই পাথর!

২৪৬.

শুকনো পাতার মর্মরে; বর্ষশেষের সুর ঝরে,

নতুন দিনের লাগলো হাওয়া নবীন পাতা-পত্তরে-

নতুন বর্ষ জাগাক হর্ষ; সকল হতাশ অন্তরে।

২৪৭.

সবাই বলে, ‘নষ্ট হলো’, নষ্ট তবে কে?

নষ্টটা যার স্পষ্ট হলো; নষ্ট বুঝি সে-ই ?

যেই নষ্ট হয় না স্পষ্ট; ধোয়া তুলসী পাতা;

নষ্ট যারে তুষ্ট করে; সে হয় মাথার ছাতা।

২৪৮.

‘আমি হলে গান আর তুমি হলে সুর ,

জীবনের সংগীত হতো যে মধুর!’

কাব্যের ভাবে গলে

শবনম হেসে বলে,

‘শীঘ্রই যাবে চলে হেমায়েতপুর।’

তবু আমি তারই প্রেমে নিত্য বিভোর।

২৪৯.

কতো দিন, কতো রাত কাটাবো বলো আর তোমাকে ছাড়া,

কতো যুগ যুগ ধরে স্বপ্নের খেলাঘরে কাটাবো তন্দহারা!

ফুল তুলে কতো আর মালা গেঁথে বার বার ছিঁড়ে ফেলা যায়!

মন নিয়ে লুকোচুরি কতো খেলা যায়!

চোখ দু’টি অবিরাম ঝরাবে-যে কতো আর শাওন ধারা-

কাটাবো তন্দহারা।

সেতারের তারে তারে সুর দিয়ে বেদনারে

তোলা যায় কতো লহরি,

মিশিয়ে বিষাদ-মাধুরি!

সুদূরের বাণী শুনে শুধু দিন গুণে গুণে কতো থাকা যায়!

স্মৃতি-রঙে কতো আর ছবি আঁকা যায়?

হাজার তারার ভিড়ে যতোই তোমারে খুঁজি

পাইনা সাড়া-

কাটাবো তন্দহারা।

২৫০.

লেখালেখি যতো হোক ছাপা-যন্ত্রস্থ,

প্রকাশক যতো করে লিখা গ্রন্থস্থ;

ক’জনা যে পড়ে বই

সে হিসেব যদি লই;

দেখে সেই সংখ্যাটা হই সন্ত্রস্ত

শিক্ষিত লোকই যেনো বেশি ব্যাধিগ্রস্ত।

২৫১.

তুমি যে সুরে সুরে বললে কথা সংগোপনে,

বুঝেছি প্রেম তখনি উঁকি দিলো মনের কোনে।

প্রেম আসে না ঢোল পিটিয়ে বাজার হাটে,

প্রেমতো আসে অজানিতে ভাবের ঘাটে।

২৫২.

ভক্তি যেমন গোপনীয়া

প্রেমও তেমন ভক্তি রূপী,

ধ্যানের ছায়ার ভাবের খেয়ায়

প্রেমের উদয় চুপি চুপি।

২৫৩.

আমার মনের কথা বলতে শুধু মুখে বাঁধে,

আমি কী চুপ করে রই সাধে সাধে!

কোনটা চেয়ে কোনটা হারাই দিন কেটে যায় সেই দ্বিধাতে,

আমি কী চুপ করে রই সাধে সাধে!

কোন চাওয়াতে সব হারালো

কোন পাওয়াতে আমার ভালো,

সেই বিপাকে গোল বাঁধালো

আমায় ফেলে অপবাদে-

আমি কী চুপ করে রই সাধে সাধে!

চাওয়া কী আর আমার সাজে!

ভুল হয়ে যায় চাওয়ার মাঝে,

দণ্ড-যে দেই সকল কাজে

চাওয়ার ভুলের অপরাধে-

আমি কী চুপ করে রই সাধে সাধে!

চাইলে তুমি কী ধন দিবে?

কোন শ্বাপদের প্রাণ বধিবে?

কোন্ পথে যে ফুল রচিবে

জড়াবোনা সেই বিবাদে-

আমি কী চুপ করে রই সাধে সাধে!

না-চাহিতে দিলে যত

সেই দানে হয় মাথা নত।

ধন্য এ মন অবিরত মাতে তোমার প্রশংসাতে-

আমি কী চুপ করে রই সাধে সাধে!

আরাধনার ফুলে ফুলে

প্রেম যা ছিল দিলাম তুলে,

মন শুধুই মনের ভুলে পড়ছে বাঁধা ধাঁধার ফাঁদে-

আমি কী চুপ করে রই সাধে সাধে!

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :