মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিলেন তৃণমূলের শুভেন্দু

প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০২০, ১৭:৩২ | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২০, ১৭:৩৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অবশেষে পদত্যাগ করলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পরিবহন, সেচ এবং জনসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূল ছেড়ে তিনি নরেন্দ্র মোদির বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

শুভেন্দুর পদত্যাগপত্র পেয়েছেন বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন রাজ্যপাল। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আজ (শুক্রবার) দুপুর ১টা বেজে ৫ মিনিটে শুভেন্দু অধিকারীর দপ্তর থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা পদত্যাগপত্র আমাকে ফরোয়ার্ড করা হয়। সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট থেকে বিষয়টি দেখা হবে’।

আনন্দবাজার জানায়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইস্তফার যে চিঠি পাঠিয়েছেন তাতে শুভেন্দু লিখেছেন, ‘রাজ্যের মানুষের সেবা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ’। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কেও ইমেলে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি। তবে এখনও পর্যন্ত বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি শুভেন্দু।

শনিবার শুভেন্দু দিল্লি যাচ্ছেন বলে শুরুতে শোনা গিয়েছিল। তবে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, এখনই দিল্লি যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই শুভেন্দুর। তাই তার বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা আরও জোরাল হচ্ছে। তবে এখনও তৃণমূল ছাড়েননি তিনি।

এ নিয়ে তৃণমূলের তরফে সৌগত রায় বলেন, ‘‘এখনও বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেননি উনি। দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও পদত্যাগ করেননি। যতক্ষণ বিধায়ক আছেন, ততক্ষণ দলের সদস্য উনি। মন্ত্রিত্ব ছাড়া একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ওর। আমি এতে দুঃখিত। ওর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, দল ছাড়বেন না। আমি এখনও আশাবাদী। যতক্ষণ দলে আছেন,  আমি আশা করব এবং চেষ্টা চালিয়ে যাব ওকে দলে রাখার।’’

এদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ শুভেন্দুকে বিজেপিতে স্বাগত জানিয়েছেন ইতিমধ্যেই। তিনি বলেন, ‘‘আমি আগেই বলেছিলাম তৃণমূলের মুষলপর্ব শুরু হয়েছে। এটা শেষের শুরু হল। এর পর দলটাই উঠে যাবে। শুধু শুভেন্দু নন, বাংলায় পরিবর্তনের জন্য যারা আসবেন, তাদের সকলকে বিজেপিতে স্বাগত।’’ বাংলায় বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘শুধু রাজ্যবাসীই নন, তৃণমূলের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন দলের নেতারাও।’’ শুভেন্দুর পদত্যাগ তৃণমূলের পক্ষে অশনি সঙ্কেত বলে মন্তব্য করেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীও।

নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সেখানকার বিধায়কও তিনি। তৃণমূলে তার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ আবু তাহের। তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রিত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত একান্তই ব্যক্তিগত। নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীরা আগামী দিনে কী সিদ্ধান্ত নেবে তা আলোচনার পর জানানো হবে। তবে রাজ্যে যেমন মমত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প নেই, তেমনই শুভেন্দু অধিকারীরও বিকল্প নেই।’’

যদিও শুভেন্দুর সিদ্ধান্ত ভালভাবে নেননি নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের আর এক নেতা শেখ সুফিয়ান। তিনি বলেন, ‘‘উনি মানুষের কথা না ভেবে নিজের স্বার্থের কথা ভেবেছেন। উনি দল ছাড়ছেন, মন্ত্রিত্ব ছাড়ছেন এতে নন্দীগ্রামে তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে না। তবে এই সিদ্ধান্তে নন্দীগ্রামের আন্দোলনকে অপমান করলেন।’’

তবে শুভেন্দুর প্রতি দলের আচরণেও ক্ষুব্ধ তৃণমূলের অনেকেই। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা তৃণমূলের সম্পাদক কনিষ্ক পন্ডা  বলেন, ‘‘মেঘনাদ যখন যুদ্ধ করছিলেন, তখন  সবাই তাকে ব্যবহার করে। শুভেন্দুকে যে আঘাত করা হল, তাতে পূর্ব মেদিনীপুরের মানুষকে আঘাত করা হয়েছে। 

এর আগে, বৃহস্পতিবার হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশন (এইচআরবিসি) চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেন শুভেন্দু। তার পর রাতারাতি সেই জায়গায় নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে, যার সঙ্গে শুভেন্দুর মতভেদের কথা কারও কাছেই চাপা ছিল না। তাতেই শুভেন্দু পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন বলে জানা গিয়েছে।

পদত্যাগপত্র পাওয়ার আগে এ দিন সকালে রাজ্য সরকারের দেওয়া জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তাও ছাড়েন শুভেন্দু অধিকারী। নিজের পাইলট কার এবং এসকর্টও ছেড়ে দেন। তার কিছু ক্ষণ পরেই পদত্যাগপত্র পাঠান মুখ্যমন্ত্রীকে।

ঢাকাটাইমস/২৭নভেম্বর/ইএস