দিল্লি অবরুদ্ধ করতে এগোচ্ছে কৃষকরা

প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৫৩ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২০, ১১:২৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে দিল্লি জড়ো হয়েছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে দিল্লিতে প্রবেশের জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছে তারা। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, ৩ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে কৃষকদের আলোচনা নির্ধারিত রয়েছে। কৃষকরা সরকারের ঠিক করে দেওয়া ময়দানে সরে গেলে তার আগেই আলোচনা হতে পারে।

রবিবার সরকারের এই প্রস্তাব খারিজ করে কৃষক সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, তারা সরকারের মর্জিমাফিক বুরারি ময়দানে সরছেন না। কারণ সেটা আসলে খোলা জেলখানা। তার বদলে দিল্লিতে প্রবেশের পাঁচটি রাস্তাতেই অবরোধ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

কৃষক নেতাদের দাবি, তাদের কাছে চার মাসের রসদ রয়েছে। নরেন্দ্র মোদি সরকারের তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার না-করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে পিছু হটবেন না। এর মধ্যেই আজ বিজেপি তথা মোদি সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে হরিয়ানার প্রভাবশালী খাপ পঞ্চায়েতগুলো ‘সব রকমভাবে’ কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে। খাপের সদস্যরা সোমবার দিল্লির অভিমুখে যাত্রা করবে বলে জানিয়েছেন দাদরির বিজেপি সমর্থিত নির্দল বিধায়ক সোমবীর সাঙ্গোয়ান। মোদি সরকারকে কৃষি আইন পুনর্বিবেচনার অনুরোধও জানিয়েছে তারা। খবর আনন্দবাজারের।

অমিত শাহের প্রস্তাব নিয়ে কৃষক সংগঠনগুলোর আলোচনার পরে পাঞ্জাবের ভারত কিসান ইউনিয়ন (ক্রান্তিকারী) এর সভাপতি সুরজিৎ সিংহ ফুল বলেন, 'সরকার যেভাবে আলোচনার জন্য শর্ত রেখেছে, তাকে আমরা কৃষক সংগঠনের অপমান বলে মনে করি। আমরা কোনোভাবেই বুরারি ময়দানে যাব না। ওটা আসলে মুক্ত জেলখানা। প্রধান পাঁচটি সড়ক অবরোধ করে দিল্লি ঘেরাও করব।'

কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকে কৃষকদের মঞ্চে আসার অনুমতি দেওয়া হবে না বলেও তিনি জানান। হরিয়ানা থেকে দিল্লিতে ঢোকার টিকরী ও সিংঘু সীমানায় কৃষকরা অবরোধ শুরু করেছেন। ফলে এক নম্বর জাতীয় সড়ক কার্যত বন্ধ। উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লিতে ঢোকার গাজিপুর সীমানাতেও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এরপরে কৃষকরা আরও দুই সড়ক বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিলেও মোদি সরকার এখনও নিজেদের অবস্থানে অনড়। বরং রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে মোদির দাবি, 'দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পরে সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া কৃষি সংশোধনী আইনের ফলে কৃষকরা শুধু শিকলমুক্ত হননি, নতুন অধিকার ও নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা এসে পৌঁছেছে তাদের হাতে।'

রবিবার সকালে মোদির এমন বার্তার পরেই কৃষক নেতারা বুঝে যান, মোদি সরকার কোনোভাবেই আইন প্রত্যাহার করবে না। কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরও জানিয়ে দেন, চাষিদের স্বার্থেই কৃষি আইন আনা হয়েছে। তার বক্তব্য, 'কৃষকদের সঙ্গে আমাদের তিন বার আমলা, মন্ত্রী স্তরে আলোচনা হয়েছে। ৩ ডিসেম্বর ফের বৈঠক হবে, আগেই ঠিক ছিল। সরকার খোলা মনে কথা বলতে তৈরি। কিন্তু আলোচনার আবহ দরকার।'

সরকারের যুক্তি, সেই আবহ তৈরি করতেই কৃষকদের জাতীয় সড়ক ছেড়ে ময়দানে সরে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কৃষক নেতারা মনে করছেন, বুরারি ময়দানে সরে গেলে সরকারের উপর থেকে চাপও সরে যাবে। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশ এর আগে উত্তরাখণ্ডের কৃষকদের যন্তর মন্তরে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বুরারি ময়দানে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখেছে। কেন্দ্র দেখাতে চাইছে, শুধু পাঞ্জাবের কৃষকরাই কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। বাস্তবে গোটা দেশের কয়েক শ সংগঠন এই আন্দোলনে যুক্ত। ১ ডিসেম্বর গোটা দেশেই বিক্ষোভ দেখানো হবে।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছেন, সরকার এখনই কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর দম্ভ এখন স্পষ্ট। দিল্লির চারদিকে যখন লক্ষ লক্ষ কৃষক বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তখন প্রধানমন্ত্রী কৃষি আইন নিয়ে অনড় মনোভাব দেখাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১২০০ কিলোমিটার দূরে হায়দরাবাদে গিয়ে জনসভা করতে পারেন। কিন্তু ১৫ কিলোমিটার দূরে দিল্লির সীমান্তে গিয়ে চাষিদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না?' কৃষকদেরও দাবি, সরকার রাজনৈতিক স্তরে কথা না বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে কথা বলছে।

পাঞ্জাব থেকে দিল্লিতে আসার পথে হরিয়ানার একাধিক জায়গায় কৃষকদের ঠেকাতে জলকামান, কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছিল। হরিয়ানার বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এম এল খট্টর রবিবার দাবি করেছেন, জলকামান, কাঁদানে গ্যাস বলপ্রয়োগ নয়। পাশাপাশি, এই কৃষক বিক্ষোভে রাজনৈতিক ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে বলে শনিবারই পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন খট্টর। কিন্তু তার সেই অভিযোগে সিলমোহর না দিয়ে অমিত শাহ রবিবার হায়দরাবাদে ভোটপ্রচারে গিয়ে জানান, এই বিক্ষোভে রাজনৈতিক ইন্ধন নেই।

ঢাকা টাইমস/৩০নভেম্বর/কেএইচ