রাজশাহীর ২ পৌরসভা নির্বাচন

কোন্দল-বিতর্কে বিপাকে বিএনপি, ভোটে সক্রিয় আ.লীগ

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
| আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:৩১ | প্রকাশিত : ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৫৩

প্রথম ধাপের নির্বাচনে রাজশাহীর দুটি পৌরসভার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দুটি পৌরসভাতেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তফসিলের আগে থেকেই এ দুটি পৌরসভায় সক্রিয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় নিষ্ক্রিয় বিএনপির প্রার্থীরা।

অবশ্য মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন নিজেদের কিছু সমর্থককে নিয়ে দুই পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে মনোয়নপত্র দাখিল করেছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরাও তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দুই পৌরসভায় দুই দলের চারজন ছাড়াও আরও সাতজন মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মঙ্গলবার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল। প্রত্যেকে এই দিনই মনোনয়নপত্র জমা দেন।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হলেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি। এখানে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর নাম আল মামুন খান। তিনি পুঠিয়া পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্বাস আলী। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। কাটাখালিতে বিএনপির প্রার্থী হলেন অধ্যাপক সিরাজুল হক। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। দুই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বর্তমানে মেয়র হিসেবেই দায়িত্ব পালন করছেন।

কাটাখালি পৌরসভার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীরা হলেন- অধ্যাপক মাজেদুর রহমান, খোকনুজ্জামান মাসুদ, আবু সামা, আবদুল মোতালেব ও আবদুল হাই। পুঠিয়ার স্বতন্ত্র দুই মেয়র প্রার্থী হলেন- গোলাম আজম নয়ন ও শরিফুল ইসলাম টিপু। কাটাখালি পৌরসভায় সংরক্ষিত নারী আসনে ১০ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আর পুঠিয়ায় সংরক্ষিত নারী আসনে আটজন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

দুই পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা অনেক আগে থেকেই মাঠে রয়েছেন। মনোনয়ন পাওয়ার আগেই তারা এলাকায় নৌকার পক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে দফায় দফায় মতবিনিময় করে জনমত গঠন করে ফেলেছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথেও বসেছেন বারবার। নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন আগে থেকেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তাদের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এর বিপরীতে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় বিএনপি প্রার্থীদের কোনো তৎপরতা ছিল না। হঠাৎ মনোনয়ন পেয়ে তারা এখন নির্বাচনের মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এক পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীকে নিয়ে স্পষ্ট হয়েছে দলীয় কোন্দল। অন্যজনকে নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। সেজন্য দলটি কিছুটা বিপাকে রয়েছে।

তারপরও বিএনপির প্রার্থীরা বলছেন, ভোট সুষ্ঠু হলে তারা বিজয়ী হবেন। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বলছেন, দীর্ঘ দিন জনবিচ্ছিন্ন থাকার কারণে বিএনপির প্রার্থীরা ভোটের মাঠে সুবিধা করতে পারবেন না। তাছাড়া কাটাখালীর বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম গেল বছর ছাত্রীর যৌন হয়রানির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কিছুদিন জেলেও ছিলেন। তখন তার শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ এলাকার সাধারণ মানুষ। এলাকায় তার ভাবমূর্তির সংকট।

এদিকে পুঠিয়ায় বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে বিভাজন। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর পুঠিয়া পৌরসভার নির্বাচনে ২৭১ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন বিএনপি প্রার্থী আসাদুল হক। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী রবিউল ইসলাম। এই ফলাফলের পর পুঠিয়ার পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আসাদুল হক। কিন্তু ভোট গণনায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন রবিউল ইসলাম। আদালতের আদেশে কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট গণনা করা হয়। এতে বিজয়ী হন রবিউল। এবার সেই আসাদুলের ওপরই আস্থা রাখতে পারেনি বিএনপি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার আসাদুলকে মনোনয়ন না দেয়ার পেছনে রয়েছে দলীয় কোন্দল। আসাদুল বিএনপির সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার কাছের লোক হিসেবে পরিচিত। আর যুবলীগ-আওয়ামী লীগ হয়ে বিএনপিতে আসা আল মামুন খান দলটির জেলার বর্তমান আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। আবু সাঈদ চাঁদই প্রভাব খাটিয়ে মামুনকে মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছেন বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন। কিন্তু এই কারণেই নির্বাচন ঘিরে পুঠিয়ার বিএনপিতে দেখা দিয়েছে বিভাজন।

পুঠিয়া পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বর্তমান মেয়র রবিউল ইসলাম রবি বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরেই মানুষের সঙ্গে কাজ করছি। মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থেকেছি। আর বিএনপির প্রার্থীকে এলাকাতেই দেখা যেত না। আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনকে নিয়ে আমি নির্বাচনের জন্য কাজ করছি। তাই আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

কাটাখালী পৌরসভার আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্বাস আলী বলেন, সারাদেশে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমি বিগত সময় মেয়র থাকাকালে যেভাবে পৌরবাসীর সেবা করেছি তাতে মানুষ নৌকার পক্ষে আবারও রায় দিয়ে একটি নজির সৃষ্টি করবে। ভোটে সাধারণ মানুষই আমার শক্তি।

তবে কাটাখালীর বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক সিরাজুল হক বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ধানের শীষই বিজয়ী হবে। আর বক্তব্য জানার জন্য মঙ্গলবার কয়েকদফা ফোন করা হলেও পুঠিয়ার বিএনপি প্রার্থী মামুন খান ধরেননি। তাই এই নির্বাচন নিয়ে তার মন্তব্য জানা যায়নি।

নির্র্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ৩ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১০ ডিসেম্বর। প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১১ ডিসেম্বর। এর পরই শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার। ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে। প্রতিটি পৌরসভাতেই ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে।

ঢাকাটাইমস/২ডিসেম্বর/আরআর/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :