কবিতা
এখানে সকাল হয়, রাত পোহায় না
পাথরের ফাটলে বেড়ে ওঠা জংলা গাছের
বাউন্ডুলে বাচ্চার মতো
মনটা আদবের আল ভেঙ্গে লাফিয়ে উঠে; যখন শুনি,
তোমাদের ওখানে নাকি হররোজ ভোরে
রোদ্দর ছেলেমেয়েরা উঠোনে উঠোনে ডাংগুলি খেলে;
দুপুরের আমের ছায়ায় চড়ুইভাতি খেলায় মেতে থাকে
মিষ্টি দুষ্টু আলো-ছায়া।
গোধূলির বায়স্কোপে দেখা যায় রামধনুর পুলের উপর
মেঘের আড়ালে আবডালে সাত ভায়ের লুকোচুরি খেলা।
আর আমাদের এখানে ভোর না হতেই আলো ফিকে আলেয়া।
মধ্যাহ্ন আসে না; পূর্বাহ্নেই আহ্নিকের যবনিকা,
প্রতিটা রাত মানে রাতের রাণির জলসা,
আঁধারের অনন্ত যৌবন।
তোমাদের ওখানে নাকি বৃষ্টি-বালিকারা সই পাতা এক্কা দোক্কা খেলে;
আর আমাদের এখানে তো নোনা জলের সুনামি,
জলোচ্ছ্বাস প্লাবন, শোকের শ্রাবণ।
তোমাদের ওখানে বিজলি চমকের আতশ বাতিতে চলে প্রেমের উৎযাপন,
আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে প্রিতমের নাম ঘোষিত হয় বজ্র নিনাদে;
আর এখানে প্রলয়ের শঙ্কা জানান দেয়া
বহিরাগত বিজলি সঙ্কেতেই আমরা হই তড়িতাহত;
অশনির মেঘে আর জবর দখলের বিনামেঘে বজ্রপাতে
ইস্রাফিলের শিঙ্গার হুংকারে যেনো চৌচির হৃদয়ের চৌকাঠ।
তোমাদের ওখানে নাকি বর্ষার পরই আসে বসন্ত,
শীতকাল আসে শ্বৈত্যপ্রবাহ কিংবা কুয়াশার জন্য নয়,
প্রকৃতির নিয়ম রক্ষার তগিদে;
আসে শীতের পিঠার জন্য, নকশি কাঁথার জন্য, খেজুর রসের জন্য,
ভোর বিহানের সোনা রোদে খালের পাড়ে ওম ওম পিঠ ছেঁকার জন্য।
আমাদের শীত আসে শৈত্যের সখা হয়ে,
হিমেল হাওয়া হায়েনা হয়ে,
বীজের প্রাণে লালিত জীবনের উষ্ণতার আততায়ী হয়ে।
তোমাদের ওখানে নাকি বসন্ত মানে গোলাপের প্রেমালাপ;
এখানে ফণিমনসার উদ্ধত ফণা, প্রেমের প্রলাপ।
তোমাদের ওখানে বেলী, পলাশ, চাঁপার অভিসার, সুরভির মিনাবাজার;
আমাদের এখানে খঞ্জরের পসরা সাজায়
মখমল ঝালরের ঝলমল বাহার।
তোমাদের ওখানে দখিনা হাওয়ার সেতারে
শাখায় শাখায় বাজে কুহুর স্বরলিপি,
এখানে গলায় গামছা দিয়ে জামের ডালে ঝুলে থাকে
রোজেনার অজানা রোজনামচা; বিধিলিপি।
তোমাদের ওখানে সীমান্ত মানে একান্ত বন্ধুত্বের চৌহদ্দি;
সীমায় সীমায় অসীম হবার অভিলাষ,
এখানে সীমান্ত মানে হিংসার কাঁটাতারে ঝুলে থাকা
আমাদের নপুংশতার কলঙ্কচিহ্ন হতভাগী ফেলানির লাশ;
বন্ধুত্ব বিলাস।
তোমাদের ওখানে দিনান্তে রাত আসে;
রাত পোহায়, সকাল হয়; রাত অন্তহীন হয় না।
আমাদের এখানে সকাল হয়; রাত পোহায় না।